গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অভিযোগ, বঞ্চিত আগ্রহী প্রার্থীরা

ড. আব্দুল মজিদ ডিগ্রি কলেজ। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

মাহমুদুল হাসান মুক্তা, নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: জামালপুরে সদর উপজেলার তিতপল্লা ইউনিয়নে ড. আব্দুল মজিদ ডিগ্রি কলেজে বিভিন্ন পদে লোকবল নিয়োগে গোপনে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট পদে আবেদন করা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন আগ্রহী প্রার্থীরা। ঈদুল আজহার ছুটিকালীন সময়ে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির পত্রিকা কলেজ অঞ্চলে না আসায় নিয়োগের বিষয়টি জানেন না কেউ। এমনকি কলেজের নোটিশ বোর্ডেও নেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির খবর। এরমধ্যেই আবেদনের সময়সীমা শেষ হওয়ায় পুনর্নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ওই এলাকার শিক্ষিত ও যোগ্য বেকার যুবকেরা।

অধ্যক্ষের আত্মীয়স্বজন ও তাঁর মনোনীত প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই গোপনে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। ১৬ জুলাই এমন দাবিতে ওই এলাকার ৫৬ জনের স্বাক্ষরে এক অভিযোগপত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও দুদকের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে দিয়েছেন স্থানীয়রা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল আজহার ছুটি চলাকালীন সময় ২৫ জুন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। এতে উপাধ্যক্ষ পদে একজন, অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে একজন, ল্যাব সহকারী পদার্থ বিজ্ঞান একজন, ল্যাব সহকারী উদ্ভিদ ও প্রাণীবিদ্যা বিভাগ একজন, ল্যাব সহকারী রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগ একজন, ল্যাব সহকারী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি একজন, অফিস সহায়ক চারজন, নিরাপত্তাকর্মী একজন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী একজন পদে আবেদন চাওয়া হয়।

কলেজের অবস্থান প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় লোকবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পত্রিকাটি এ অঞ্চলে আসেনি। স্থানীয় কারো চোখেও পড়েনি। এমনকি স্থানীয় কোনো পত্রিকায় প্রকাশ হয়নি এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি। কলেজের নোটিশবোর্ডেও এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। এছাড়া কলেজের অধিকাংশ শিক্ষকরা এ নিয়োগ বিষয়ে কিছুই জানেন না।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, কলেজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সকল নিয়োগ গোপনে করেছেন অধ্যক্ষ মো. হাফিজুর রহমান তালুকদার। এসব নিয়োগ তাঁর আত্মীয়স্বজন ও মনোনীত প্রার্থীকে দেওয়া হয়েছে। এমপিওভুক্ত এ কলেজের নিয়োগ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কোনো তথ্য অবগত নন এলাকাবাসী। অধ্যক্ষ নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য এলাকাবাসীকে ফাঁকি দিয়ে চালাচ্ছেন কলেজের সার্বিক কর্মকাণ্ড। এছাড়া এলাকার ব্যক্তিবর্গদের আপত্তি উপেক্ষা করে কলেজের কোটি কোটি টাকা সহজেই আত্মসাৎ করতে বারবার তাঁর আপন চাচা ড. আব্দুল মজিদ তালুকদারকে সভাপতি করা হয়েছে। এছাড়া অধ্যক্ষের পকেটের লোকজন দিয়ে বারবার ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা হয়েছে যা বিধিসম্মত নয়।

স্থানীয়রা জানায়, ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ড. আব্দুল মজিদ ডিগ্রি কলেজ। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে এ পর্যন্ত কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা ড. আব্দুল মজিদ তালুকদার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। কলেজ অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি যাতে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্যই বারবার তাঁর আপন চাচাকে সভাপতি বানিয়েছেন।

কলেজে নিয়োগ পেতে আগ্রহী স্থানীয় প্রার্থীদের অনেকেই জানান, কলেজের কখন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় তা আমরা জানিনা। যখন নিয়োগ চূড়ান্ত হয়ে লোকবল ওই কলেজে কর্মরত হন, আমরা তখন জানি যে কলেজে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে যে নিয়োগ হয়েছে তা অতি গোপনে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও কলেজ অধ্যক্ষের যোগসাজশে সম্পন্ন হয়েছে। তাঁর পকেটের লোক ছাড়া এ বিষয়টি এলাকাবাসীও জানেনা। ইতোমধ্যেই কলেজের উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেছেন। সুষ্ঠু তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বের করে আসবে বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকেই।

অভিযোগ প্রসঙ্গে কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাফিজুর রহমান তালুকদার জানান, সমস্ত বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ২৫ জুলাই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকাসহ স্থানীয় দুটি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তবে তিনি স্থানীয় ওই দুই পত্রিকার নাম মনে করতে পারেননি। এছাড়া নিয়োগ নিয়ে কোনো স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অর্থ লেনদেন হয়নি বলে তিনি জানান।

কলেজের নোটিশবোর্ডে নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো তথ্য টানানো হয়েছিল কী? এই প্রশ্নের তিনি ‘না’ জবাব দিয়েছেন। তবে তিনি ম্যানেজিং কমিটির লোকজন এ বিষয়ে জানেন বলে জানিয়েছেন। বারবার কলেজের প্রতিষ্ঠাতাই সভাপতি হচ্ছেন কেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, অধিকতর যোগ্য লোক না থাকায় তাঁকেই বারবার সভাপতি করা হয়েছে। তাছাড়া এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাবোর্ড কলেজকে কোনো নির্দেশনা দেয়নি বলেও জানান তিনি।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনিয়ম প্রসঙ্গে কলেজের সভাপতি ড. আব্দুল মজিদ তালুকদারকে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছুই বলার নাই’ বলে ফোন কেটে দিন তিনি।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরা মুস্তারী ইভা বলেন, এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগপত্র পাইনি। পেলে সরেজমিনে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।