সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চান

শোকসভায় বক্তব্য রাখেন প্রয়াত সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকমের সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে তার স্বামী হত্যার বিচার চাওয়ার আকুতি জানিয়ে বলেছেন, ‘আপনারা আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার সুযোগ করে দিবেন। আমি তার সাথে কথা বলতে চাই। আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’

সন্ত্রাসী হামলায় নিহত নির্ভীক সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম স্মরণে ১৯ জুন দুপুরে জামালপুর প্রেসক্লাব আয়োজিত শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে মনিরা বেগম আবেগজড়িত কণ্ঠে তার প্রতিক্রিয়া জানান।

এ সময় মনিরা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়ে আরো বলেন, ‘আমি একজন যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সন্তান। আমার স্বামীর অকাল মৃত্যুকে আমি কোনোভাবেই মানতে পারি না। স্বামী মারা যাবার পর একজন স্ত্রীর ঘরে থাকার কথা। কিন্তু আমি একটা মিনিটও ঘরে থাকতে পারছি না। আজকে আমি এই প্রেসক্লাবে এসে আমি আমার স্বামী হত্যার বিচারের জন্য দাবি জানাচ্ছি। আপনারা আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার সুযোগ করে দিবেন। উনার কাছে আমি আমার দাবি থাকবে আমার স্বামীর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা চাই। তাড়াতাড়ি যেন সকল আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের যেন ফাঁসি দেওয়া হয়। আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই।’ এ সময় তার তিন সন্তান বড় ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন রিফাত, মেঝো মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত ও কণিষ্ঠ ছেলে রিশাদ আব্দুল্লাহ তার পাশে ছিল।

শোকসভায় বক্তব্য রাখেন জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত শোকসভায় বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ, জামালপুর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মো. সুরুজ্জামান, প্রেসক্লাবের সদস্য বিএনপিনেতা শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন ও শফিকুল ইসলাম সজিব খান, সাংবাদিক জাহিদ হাবিব, নূরুল সিদ্দিকী, জ্যোতিশ এষ, মোস্তফা মনজু, মো. বজলুর রহমান, আনোয়ার হোসেন মিন্টু, হাজি আবুল হাশেম, কাফি পারভেজ, জাকারিয়া জাহাঙ্গীর, সৈয়দ শওকত জামান, আতিকুল ইসলাম রুকন, মোস্তাফিজুর রহমান, এম ওয়াহিদ মাহমুদ রুকন, আব্দুল্লাহ আল মামুন সুমন, মুক্তা আহমেদ প্রমুখ।

শোকসভায় জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা বলেন, সাংবাদিক নাদিমের মৃত্যুতে তার স্ত্রী ও তিনসন্তান অসহায় হয়ে পড়েছে। তার স্ত্রীর দায়ের করা মামলাটির এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে প্রধান আসামি ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুসহ মাত্র পাঁচজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলার অন্যতম প্রত্যক্ষ হামলাকারী প্রধান আসামির ছেলে ছাত্রলীগ নেতা ফাহিম ফয়সাল রিফাতসহ মামলাটির সকল আসামিদের গ্রেপ্তার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে জামালপুর প্রেসক্লাব জেলায় কর্মরত সকল সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে আন্দোলনে আছি, এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। মামলা পরিচালনার পাশাপাশি এই মুহূর্তে অসহায় এই পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের ভরণপোষণ ও তিন সন্তানের লেখাপড়ার খরচসহ সার্বিক দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। এ ছাড়াও সাংবাদিক নাদিমের কর্মস্থল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম ও ৭১ টিভি কর্তৃপক্ষের সাথে ক্লাবের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হবে, তারাও যেন এই অসহায় পরিবারটিকে সহায়তা দিয়ে পাশে দাঁড়ান।

শোকসভায় বক্তব্য রাখেন জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুর প্রেসক্লাবের উদ্যোগে সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার সকল আসামিকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ২১ জুন বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপিও দেওয়া হবে বলে শোক সভায় ঘোষণা দেন প্রেসক্লাবের সভাপতি।

পরে সাংবাদিক নাদিমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, ১৪ জুন রাতে পেশাগত কাজ শেষে রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জ পাটহাটি এলাকায় একদল দুর্বৃত্ত তাকে সড়ক থেকে মারধর করতে করতে টেনেহিঁচড়ে অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায় এবং তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। পরদিন ১৫ জুন ভোরে তাকে জামালপুর থেকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৫ জুন দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে সাংবাদিক নাদিম মারা যান। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে ১৭ জুন হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু ও তার ছেলে ছাত্রলীগনেতা ফাহিম ফয়সাল রিফাতসহ ৪৭ জনকে আসামি করে বকশীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। এই মামলার প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবুসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। তারা ১৮ জুন থেকে আদালতের আদেশে বকশীগঞ্জ থানা পুলিশের রিমান্ডে রয়েছে। মামলাটির অন্যতম আসামি বকশীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফাহিম ফয়সাল রিফাতসহ অন্যান্য আসামিরা পলাতক রয়েছে।