শেরপুরের কৃষিতে জনপ্রিয় হচ্ছে মালচিং পদ্ধতি

মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম: শেরপুরে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ও লাভজনক কৃষি প্রযুক্তি মালচিং পদ্ধতি। দ্বিগুণ ফলন ও ভালো বাজারমূল্যে সবজি বিক্রিতে জেলার পাঁচ উপজেলার কৃষকরা সবজি চাষে লাভবান ও ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারছেন বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচলক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির জানান, মালচিং পদ্ধতিতে প্রথমে জমিতে পরিমিত রাসায়নিক ও জৈব সার দিয়ে সারি সারি বেড তৈরি করতে হয়। পরে সারিবদ্ধ বেডগুলো পলিথিনে ঢেকে দিতে হয়। বেডে নির্দিষ্ট দূরত্বে পলিথিন ফুটো করে সবজির বীজ বা চারা রোপণ করতে হয়। রোপণের পর শুধু দেখভাল ছাড়া আর কোনো পরিচর্যা লাগে না।

কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির বলেন, মালচিং পেপারে ঢেকে দেওয়ার ফলে গাছে ছত্রাক বা রোগ-বালাইয়ের আক্রমণও কম হয়। পরিচর্যার জন্য তেমন শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। ফলে উৎপাদন খরচ হয় কম। এ পদ্ধতিতে ফলনও দ্বিগুণ হয়। এ পদ্ধতি অনেক সহজলভ্য, লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব।

ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনেও মালচিং পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন সবজির প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। এছাড়া জেলার সদর উপজেলাসহ ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী ও নকলার ৮০ বিঘা জমিতে কৃষকরা এ পদ্ধতিতে গড়ে তুলেছেন সবজি ক্ষেত।

ওই পদ্ধতিতে চাষ করা কৃষক হোসেন আলী, শাহজাহান মিয়া ও দৌলত মিয়া বলেন, ইউটিউব দেখে ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে পরীক্ষামূলকভাবে জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল করলা, বরবটি, ফুলকপি, তরমুজসহ বিভিন্ন সবজির আবাদে ভাল লাভের মুখ দেখছেন তারা। এছাড়া বিভিন্ন সবজির আশানুরূপ ফলন ও বাজার দরও ভালো পাচ্ছেন।

মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

ওই কৃষকরা জানান, এই অভাবনীয় সাফল্য দেখে পাশের গ্রামের কৃষকরাও মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষের পরিকল্পনা করছেন।

কৃষক আব্দুল হক বলেন, ঝিনাইগাতীর তৎকালীন কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির সর্বপ্রথম মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তখন থেকেই এ প্রযুক্তিতে সবজি চাষ করছি।

এছাড়া শ্রীবরদীর কৃষক দেলোয়ার হোসেন, শেরপুর সদর উপজেলার কৃষক কামরুল ইসলাম, লছমনপুরের তরমুজ চাষি মজনু মিয়া, দিঘলদির ফরিদুল ইসলাম, নকলার চরকৈয়া গ্রামের কৃষক শাহেনশাহ এ পদ্ধতিতে চাষে সাফলতা পেয়েছেন।

জেলার খামারবাড়ির উপ-পরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে কম সময়ে অল্প খরচে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। এতে চাষির জমিতে যেন পোকামাকড়ের আক্রমণ না হয় সেজন্য সেক্স ফেরোমন ফাঁদ স্থাপনে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন দিলদার বলেন, উপজেলার বেশ কিছু কৃষক অফিসের সামনে প্রদর্শনী সবজি প্লট দেখে তাদের নিজ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন। এ পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।