গ্যাস সিলিন্ডার কেড়ে নিল গৃহবধূর প্রাণ, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাংচুর

জামালপুর পৌরসভার রশিদপুর এলাকায় আগুনে পুড়ে নিহত গৃহবধূ সানজিদার মরদেহ। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুর পৌরসভার রশিদপুর বাজার এলাকায় গ্যাসের চুলার সিলিন্ডারের পাইপ লিকেজ হয়ে ঘরে থাকা পেট্রলের ড্রামে আগুন লেগে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে গৃহবধূ সানজিদা আক্তার শিপরা (২৫) নিহত এবং তার স্বামী ইকরামুল হক শুভ্র (৩৩) মৃত্যুর সাথে লড়ছেন। ২১ মার্চ সকালে এ ঘটনা ঘটে। বিলম্বে ঘটনাস্থলে পৌঁছার ক্ষোভের জের ধরে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় ফায়ার সার্ভিসের দলনেতাসহ ছয়জনকর্মী আহত এবং পানিবাহী একটি গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।

আরো পড়ুন : রশিদপুরে আগুনে পুড়ে স্ত্রীর মৃত্যুর তিনদিন পর দগ্ধ স্বামীর মৃত্যু

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামালপুর পৌরসভার রশিদপুর বাজার এলাকার পেট্রল বিক্রেতা ইকরামুল হক শুভ্র স্থানীয় মোজাম্মেল হোসেনের টিনশেড ঘর ভাড়া নিয়ে এক বছর ধরে স্ত্রী সানজিদা আক্তার শিপরা ও পাঁচ বছরের কন্যা ছয়ফাকে নিয়ে বসবাস করে আসছেন। ইকরামুলের ডিজেল-পেট্রলের দোকান তার বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে রশিদপুর বাজারে হলেও বাসায় ড্রামে করে কিছু ডিজেল ও পেট্টল মজুদ রাখতেন তিনি।

২১ মার্চ সকালে গৃহবধূ সানজিদা সিলিন্ডার গ্যাসের চুলায় রান্না করছিলেন। তার স্বামী ইকরামুলও বাসায় ছিলেন। সকাল ১০টা ৫ মিনিটের দিকে গ্যাসের চুলার সিলিন্ডারের পাইপ লিকেজ হয়ে আগুন ধরে যায়। এরপর পাশে থাকা পেট্টলের ড্রামে লেগে মুহূর্তের মধ্যে আগুন দ্রুত সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। তার দেবর রবিউল আউয়ালসহ বাড়ির অন্যান্যরা শরীর ৯০ ভাগ পুড়ে যাওয়া ইকরামুলকে টেনে বের করতে পারলেও তার স্ত্রীকে বের করা যায়নি। ঘরে থাকা দুটি গ্যাস সিলিন্ডার অক্ষত থাকলেও বিকট শব্দে পেট্রলের ড্রাম বিস্ফোরিত হয়। ঘরের ভেতরে আটকাপড়া গৃহবধূ সানজিদা আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে মারা গেছেন। এছাড়া ঘরের ফ্রিজ, টিভি, খাটসহ যাবতীয় মালামাল পুড়ে অন্তত ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

খবর পেয়ে জামালপুর ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই সমস্ত ঘর পুড়ে ছাই হয়। ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা গৃহবধূ সানজিদাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। প্রতিবেশীরা তার স্বামী ইকরামুলকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করেছে। ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে প্রথমে জামালপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।

অপরদিকে আগুন নেভাতে যাওয়া জামালপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বিক্ষুব্ধ জনতার হামলার শিকার হয়েছেন। খবর দেওয়ার প্রায় ৪০ মিনিট পর ঘটনাস্থলে পৌঁছার অভিযোগ তুলে বিক্ষুব্ধ জনতা ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী গাড়ি ভাংচুর করেছে। হামলায় ফায়ার সার্ভিসের দলনেতা মো. শহিদুল্লাহসহ ছয়জন কর্মী আহত হয়েছেন। তারা জামালপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

জামালপুর পৌরসভার রশিদপুর এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আসবাবপত্রসহ পুড়ে ছাই হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত ঘর। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

নিহত গৃহবধূ সানজিদার চাচাত দেবর প্রত্যক্ষদর্শী রবিউল আউয়াল ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, আগুন লাগার সাথে সাথে খবর দেওয়া হলেও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে অনেক দেরি করেছে। তার আগেই আমার ভাবি (সানজিদা) আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। আমার ভাই ইকরামুল হয়তো তার স্ত্রীকে উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন। আগুনের ভেতরে আটকা পড়া আমার ভাইকেও দেখা যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে তিনি দরজার কাছে এসে পড়ে যান। আমিসহ কয়েকজনে মিলে তাকে টেনে বের করি। ততক্ষণে তারও সারা শরীর পুড়ে গেছে। তিনি এখন মৃত্যুপথযাত্রী। তিনি আরো জানান, আগুন লাগার কিছুক্ষণ আগে ইকরামুলের পাঁচ বছর বয়েসের একমাত্র কন্যা ছয়ফাকে তার দাদি বাসা থেকে নিয়ে যান। এ কারণে শিশু ছয়ফা বেঁচে গেছে।

খবর পেয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সীমা রানী সরকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেল যে, গ্যাসের চুলার সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। আগুন পেট্রলের ড্রামে লেগে সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। গৃহবধূ সানজিদা আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। তার স্বামী ইকরামুলও আগুনে পুড়ে মৃত্যু পথযাত্রী। ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।

জামালপুর ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো. আফছার উদ্দিন বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, আমাদের কাছে আগুন লাগার ফোন আসে আসে সকাল ১০টা ২৬ মিনিটে। খবর পাওয়া মাত্রই আমরা অগ্নিনির্বাপনের চারটি গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। এ সময় বিক্ষুদ্ধ জনতা আমাদের পানিবাহী একটি গাড়ি ভাংচুর করে। তাদের হামলায় দলনেতা মো. শহিদুল্লাহসহ ছয়জনকর্মী আহত হন। এরপরও আমরা উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাই। আমরা পৌঁছার আগেই গৃহবধূ সানজিদা আগুনে পুড়ে মারা যান। স্থানীয়রা সারা শরীরে অগ্নিদগ্ধ তার স্বামী ইকরামুলকে উদ্ধার করে। ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুন পেট্রলের ড্রামে ছড়িয়ে পড়ায় এ অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।