নকলায় আগাম ও বীজ আলু চাষে ব্যস্ত কৃষকরা

নকলার একটি আলু ক্ষেতে কৃষি শ্রমিকরা কাজ করছেন। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

শফিউল আলম লাভলু
নকলা ( শেরপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠি ডটকম

আগাম জাতের ধান ঘরে তুলে এখন আগাম ও বীজ আলু চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার কৃষকরা। আগাম জাতের আলু চাষ করে লাভবান হওয়ায় বরাবরের মতো এবারও আলু চাষ করছেন কৃষক। কিছুদিন আগে আগাম জাতের ধান ঘরে তুলেছেন কৃষক। সেই জমিতে এখন আগাম আলুর বীজ বুনছে। নকলা উপজেলার চরমধূয়া, চন্দ্রকোনা, পাঠাকাটা, নারায়ণখোলা, চরবশন্তি এলাকায় দেখা যায় কৃষকরা আলু চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

বাজারে যার আলু যত আগে উঠবে, তার লাভ তত বেশি। তাই আগে ভাগেই আলু আবাদ করছেন। এবার আবহাওয়া অনুকূল। বীজের দাম কম। প্রয়োজনীয় সারের সরবরাহও স্বাভাবিক। তাই কৃষকগণ জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণ করছেন। শ্রমিকরাও বসে না থেকে আলুক্ষেতে কাজ করে বাড়তি আয়ের মুখ দেখছেন। মহিলারাও আলু হিমাগারে ও ক্ষেতে কাজ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হচ্ছেন বলে জানা যায়।

প্রতি বিঘা জমিতে আগামজাতের আলু রোপণে খরচ হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। বিঘায় আলু উৎপাদন হবে প্রায় আড়াই হাজার কেজি। আগাম আবাদে আগাম বাজার ধরতে পারলে আলুর কেজি বিক্রি হবে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা করে। এতে বিঘা প্রতি আলু বিক্রি করে খরচ বাদে লাভ পাওয়া যাবে প্রায় ৩০ হতে ৪০ হাজার টাকা।

আলুচাষী কামরুজ্জামান গেন্দু, সাজু সাইদ সিদ্দিকী, নুরল ইসলাম, কার্তিক জানান, গেল বছরের চেয়ে এবার দ্বিগুণ করেছেন। গতবার ভালো দাম পেয়েছেন বলে জানান তারা।

জিয়ারুল নামে এক কৃষি শ্রমিক জানান, আগে এ সময়টা কোন কাজ থাকতো না। এখন আগাম আলু চাষ হওয়ায় কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

আলুচাষী আবুল কালাম আজাদ জানান, আগাম জাতের আলু চাষ করে ভালো দাম পাওয়া যায়। তাছাড়া ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে এ আলু তে থেকে তোলা যায় বলে কৃষকদের আলু চাষের আগ্রহ বেশি।

উপজেলা কুষি কর্মকর্তা পরেশ চন্দ্র দাস জানান, গেল বছর উপজেলার ৩০০ একর জমিতে প্রায় ১৬শ -২৫শ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর প্রায় ৩০০ একর জমিতে আলু চাষ হয়েছে বলে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ প্রায় ২৫শ মেট্রিক টন। উৎপাদিত আলু সরকার মাঠ থেকেই সংগ্রহ করে হিমাগারে রাখে। এতে করে কৃষক বাজারে নিয়ে বিক্রির ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে অধিক লাভবান হয়। প্রতিবারের মতো এবারও আলুর বাম্পার ফলনের আশা করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও বিএডিসি আলু হিমাগারের কর্মকর্তারা। সেই লক্ষ্যে নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন, কৃষি প্রণোদনা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন এই কর্মকর্তা।

বিএডিসির উপপরিচালক (টিসি) রফিকুল ইসলাম জানান, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী রবি শস্য আবাদে কৃষকরা যেন অধিক লাভবান হতে পারে তার জন্য ২২ কোটি ব্যয়ে নকলা পাঠাকাটা গ্রামে বিএডিসির ২ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার আলু হিমাগার তৈরি করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার নকলায় বিভিন্ন ব্লকে আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ হিমাগারটি নির্মাণ হওয়ার ফলে এলাকার কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।