ঢাকা ০১:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসলামপুরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বাঁশ ও বেতশিল্প

লিয়াকত হোসাইন লায়ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ইসলামপুর, বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও বেতশিল্প। বাড়ির পাশে বাঁশ বা বেতের ঝাড় গ্রাম বাংলার চিরায়ত রূপ। কিন্তু বনাঞ্চলের বাইরেও এখন যেভাবে গ্রামীণ বৃক্ষরাজি উজাড় হচ্ছে তাতে হারিয়ে যাচ্ছে এ জাতীয় গাছপালা।

এক সময় এ দেশেই বিস্তীর্ণ জনপদে বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি হত হাজারো গৃহস্থালী ও সৌখিন পণ্যসামগ্রী। ঘরের কাছের ঝাড় থেকে তরতজা বাঁশ-বেত কেটে গৃহিণীরা তৈরি করতো হরেক রকম জিনিস। অনেকে আবার এসব বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। দরিদ্র পরিবারের অনেক লোকের উপার্জনের একমাত্র পথও ছিল এগুলো।

কিন্তু আজ ইসলামপুরসহ সারাদেশে কয়টি গ্রামে এ হস্ত শিল্পটি উপার্জনের মাধ্যম হিসাবে আছে তা এখন ভাবনার বিষয়। এখন সচরাচর গ্রামীণ উৎসব বা মেলাতে বাঁশ ও বেতজাত শিল্পীদের তৈরি উন্নতমানের খোল, চাটাই, খালুই, ধামা, টোনা, পাল্লা, মোড়া, বুকসেল্ফ চোখে পড়ে খুব । যেখানে তালপাতার হাতপাখারই কদর নেই, সেখানে এগুলো তো দূরের কথা।

তৃণমূলে বিদ্যুৎ যেমন পাখার চাহিদা কমিয়েছে তেমনি, মৎস্য শিকার, চাষাবাদ, ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র সকল ক্ষেত্রেই কমেছে বাঁশ ও বেত জাতীয় হস্ত শিল্পের কদর। যতই দিন যাচ্ছে ততই কমে যাচ্ছে এই হস্তশিল্পের চাহিদা।

ইটের ভাটায় পোড়ানোর জন্য বাঁশ এবং বেতও বাদ পড়ছে না। একদিকে মূল্যবৃদ্ধি, দুষ্প্রাপ্যতা আর অন্যদিকে ক্ষতিকারক প্লাস্টিক, সিলভার, মেলামাইন জাতীয় হালকা কিন্তু টেকসই সামগ্রী নাগরিক জীবনে অপরিহার্য হয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় বাঁশ এবং বেত শিল্পীরা বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়ছে।

ইসলামপুর পৌর এলাকার উত্তর দরিয়াবাদ গ্রামের বেতশিল্পী সায়েবালী শেখ, নায়েবালী শেখ ও গুলেছা বেগম বলেন, আগে রাস্তার পাশে, বাড়ির আরা জঙ্গলে বেত পাওয়া যেত। যখন মন চাইতো তখন কেটে নিয়ে এসে কাঠা, মুইনকা, ডালি (ওজনকরা যন্ত্র) এসব হর হামেশাই তৈরি করে হাটে বিক্রি করে সংসার চালাতাম। এখন বেত পাওয়া অনেক কষ্টের ব্যাপার তবুও অনেক দূর থেকে এনে বাপদাদার ঐতিহ্য পেশা করেই সংসার চালাচ্ছি।

তারা আরো জানান, এই পেশা করে জীবনের শেষ প্রান্তে আইছি কিন্তু কী খাই না খাই কেউ খোঁজ খবর আজো রাখেনি। সরকারের একটু সহযোগিতা পেলে এই শিল্পটা ধরে রাখতে পারতাম।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসলামপুরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বাঁশ ও বেতশিল্প

আপডেট সময় ১২:০৬:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০২৪

লিয়াকত হোসাইন লায়ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ইসলামপুর, বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও বেতশিল্প। বাড়ির পাশে বাঁশ বা বেতের ঝাড় গ্রাম বাংলার চিরায়ত রূপ। কিন্তু বনাঞ্চলের বাইরেও এখন যেভাবে গ্রামীণ বৃক্ষরাজি উজাড় হচ্ছে তাতে হারিয়ে যাচ্ছে এ জাতীয় গাছপালা।

এক সময় এ দেশেই বিস্তীর্ণ জনপদে বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি হত হাজারো গৃহস্থালী ও সৌখিন পণ্যসামগ্রী। ঘরের কাছের ঝাড় থেকে তরতজা বাঁশ-বেত কেটে গৃহিণীরা তৈরি করতো হরেক রকম জিনিস। অনেকে আবার এসব বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। দরিদ্র পরিবারের অনেক লোকের উপার্জনের একমাত্র পথও ছিল এগুলো।

কিন্তু আজ ইসলামপুরসহ সারাদেশে কয়টি গ্রামে এ হস্ত শিল্পটি উপার্জনের মাধ্যম হিসাবে আছে তা এখন ভাবনার বিষয়। এখন সচরাচর গ্রামীণ উৎসব বা মেলাতে বাঁশ ও বেতজাত শিল্পীদের তৈরি উন্নতমানের খোল, চাটাই, খালুই, ধামা, টোনা, পাল্লা, মোড়া, বুকসেল্ফ চোখে পড়ে খুব । যেখানে তালপাতার হাতপাখারই কদর নেই, সেখানে এগুলো তো দূরের কথা।

তৃণমূলে বিদ্যুৎ যেমন পাখার চাহিদা কমিয়েছে তেমনি, মৎস্য শিকার, চাষাবাদ, ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র সকল ক্ষেত্রেই কমেছে বাঁশ ও বেত জাতীয় হস্ত শিল্পের কদর। যতই দিন যাচ্ছে ততই কমে যাচ্ছে এই হস্তশিল্পের চাহিদা।

ইটের ভাটায় পোড়ানোর জন্য বাঁশ এবং বেতও বাদ পড়ছে না। একদিকে মূল্যবৃদ্ধি, দুষ্প্রাপ্যতা আর অন্যদিকে ক্ষতিকারক প্লাস্টিক, সিলভার, মেলামাইন জাতীয় হালকা কিন্তু টেকসই সামগ্রী নাগরিক জীবনে অপরিহার্য হয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় বাঁশ এবং বেত শিল্পীরা বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়ছে।

ইসলামপুর পৌর এলাকার উত্তর দরিয়াবাদ গ্রামের বেতশিল্পী সায়েবালী শেখ, নায়েবালী শেখ ও গুলেছা বেগম বলেন, আগে রাস্তার পাশে, বাড়ির আরা জঙ্গলে বেত পাওয়া যেত। যখন মন চাইতো তখন কেটে নিয়ে এসে কাঠা, মুইনকা, ডালি (ওজনকরা যন্ত্র) এসব হর হামেশাই তৈরি করে হাটে বিক্রি করে সংসার চালাতাম। এখন বেত পাওয়া অনেক কষ্টের ব্যাপার তবুও অনেক দূর থেকে এনে বাপদাদার ঐতিহ্য পেশা করেই সংসার চালাচ্ছি।

তারা আরো জানান, এই পেশা করে জীবনের শেষ প্রান্তে আইছি কিন্তু কী খাই না খাই কেউ খোঁজ খবর আজো রাখেনি। সরকারের একটু সহযোগিতা পেলে এই শিল্পটা ধরে রাখতে পারতাম।