সরকারিভাবে পাটের মূল্য নির্ধারণের দাবি জানালেন পাটচাষী

জামালপুরে পাটপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তসলিমা কানিজ নাহিদা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম :

সরকারিভাবে পাটের মূল্য নির্ধারণ করে সারাদেশের পাটচাষীদের পাশে দাঁড়ানোর দাবি জানিয়েছেন জামালপুরের পাটচাষী মো. ওয়াজিউর রহমান। জেলা পর্যায়ের পাটপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে জামালপুরে পাট সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এই দাবি জানান। ২৪ ডিসেম্বর দুপুরে জামালপুর সদর ইউএনও’র সভাকক্ষে জেলা প্রশাসন ও পাট অধিদপ্তরের সহযোগিতায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এ সভার আয়োজন করে।

সভায় মুক্তআলোচনায় পাটচাষী মো. ওয়াজিউর রহমান বলেন, কৃষকের সাথে আলোচনা করে সরকারিভাবে পাটের মূল্য নির্ধারণ না করায় চাষীরা লোকসান গুনতে গুনতে পাট চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং পাটচাষে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। পানি সমস্যার কারণে পাট পঁচানোও একটি বড় সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করে কম সময়ে পাট পঁচিয়ে আঁশ ছাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

মতবিনিময় সভায় ওই পাটচাষী ছাড়াও পাট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। পাট ব্যবসায়ী মো. মনির বলেন, সরকারিভাবে পাটের মূল্য নির্ধারিত না থাকায় সারাদেশের পাটব্যবসায়ীরা বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে আছেন। অনেকটা তাদের মর্জিমাফিক মূল্য ধরে আমাদের কাছে থেকে পাট কিডনাফ বা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ছয় মাস থেকে এক বছর হাতে রাখার পর কেনা দামের চাইতে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হই দেশের বড় দুটি জুট মিল আকিজ ও জনতার কাছে। তারাই তাদের মর্জিমাফিক মূল্য ধরে সারাদেশের সিংহভাগ পাট কিনে থাকে।

পাটপণ্যের উদ্যোক্তা সানজিদা আক্তার বলেন, পাটের মূল্যের সাথে পাটপণ্য তৈরির ফেব্রিক্সসহ অন্যান্য কাঁচা মালের মূল্যের কোন সঙ্গতি না থাকায় উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পাটপণ্যের বিক্রয়মূল্য বেশি হওয়ায় বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। এ বিষয়টি মাথায় রেখে উদ্যোক্তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে সহযোগিতার প্রস্তাব দেন তারা।

কালের কণ্ঠের সাংবাদিক মোস্তফা মনজু বলেন, কৃষক, উদ্যোক্তা ও ভোক্তাদের পাটপণ্যের প্রতি ভালোবাসা থাকলেও পাটের বাজার দর বড় বড় পাট ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। এই জিম্মি অবস্থার অবসানে পাট অধিদপ্তরকে শুধু পাটের উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, পাটের মূল্য নির্ধারণ নিয়েও গবেষণা করা দরকার। বাজারে পাটের ব্যাগের দাম বেশি হওয়ায় ভোক্তারা সাধারণত পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহার করে থাকে। আইনে নিষিদ্ধ থাকলেও বড় বড় কোম্পানিগুলোও তাদের পণ্য পলিথিন বা প্লাস্টিকের বস্তা বা ছোট ছোট প্যাকেটে বাজার জাত করে থাকে। আইন থাকলেও সরকার বাজার থেকে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে না পারায় পাটপণ্যের ব্যবহারে তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অতিরিক্ত বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তসলিমা কানিজ নাহিদা মতবিনিময় সভায় উত্থাপিত পরামর্শগুলো বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে বলে আশ্বাস দিয়ে বলেন, সরকার পরিবেশ বান্ধব পাটপণ্যের প্রসারে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উদ্যোক্তারাও এগিয়ে আসছে। ব্যাংক থেকে যাতে ঋণ পায় সেই সহযোগিতাও করা হচ্ছে। তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন উন্নত দেশ থেকেও আমাদের দেশের তৈরি পাটপণ্য ক্রয় করার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে। পাটপণ্য ব্যবহারে সবাই সচেতন ও আগ্রহী না হলে পলিথিনের ব্যবহার কমানো সম্ভব নয়।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শীতেষ চন্দ্র সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জামালপুর জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর তালুকদার। জামালপুর জেলা পাট অধিদপ্তরের মুখ্য পাট পরিদশর্ক মো. নূর আলমের সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ১ নম্বর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক আরাফাত জাহান চৌধুরী, ময়মনসিংহ জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আজমত আলী আকন্দ ও শেরপুর সদর উপজেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আইউব আলী প্রমুখ।