ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় ইসলামপুরে বন্যা কবলিত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে নির্মিত হচ্ছে মুজিব কিল্লা

মুজিব কিল্লার নির্মাণ কাজ চলছে। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

লিয়াকত হোসাইন লায়ন, ইসলামপুর প্রতিনিধি, বাংলারচিঠিডটকম: দুর্গম যমুনার নদীর বন্যা কবলিত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে জানমাল রক্ষার্থে জামালপুরের ইসলামপুরে নির্মিত হচ্ছে মাটির কিল্লা। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে থেকেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে সারা দেশে কিল্লাগুলো নির্মিত হয়। সে সময় এগুলো ‘মুজিব কিল্লা’ নামে পরিচিতি পায়।

সম্প্রতি এ সব কিল্লার সংস্কার ও উন্নয়ন শুরু করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। তারই অংশ হিসেবে জামালপুরের ইসলামপুরে কুলকান্দি হেদায়েতিয়া আলিম মাদরাসা ও চিনাডুলী আফরোজা ফরিদ সুরুজ্জামান টেকনিক্যাল কলেজ নামে নির্মিত হচ্ছে দুটি মুজিব কিল্লা।

জানা গেছে, প্রতি বছর যমুনার ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষকে দীর্ঘদিন পানিবন্দি থেকে জীবনধারণ করতে হয়। বর্ষা মৌসুমে ওই লক্ষাধিক মানুষকে বন্যার পানিবন্দি দশা থেকে বাঁচানো বড় চ্যালেঞ্জ। অকাল বন্যার পানি থেকে বাঁচার রক্ষা কবজ হরিণধার বাঁধটি ভাঙনে বিলিন হওয়ায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই যমুনা নদী থেকে বাধাহীনভাবে নেমে আসা বন্যায় তলিয়ে যায় উপজেলার সদর ইউনিয়ন, পাথর্শী, কুলকান্দি, বেলগাছা, চিনাডুলি ও নোয়ারপাড়া ইউনিয়ন সমুহের নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার একর ফসলি জমি। আবার যমুনা নদীতে বন্যার পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করতেই ওই ৬টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ওই সময় পানিবন্দিদের ঘরে ঘরে বিশুদ্ধ পানি ও রান্নাকরা খাদ্যের তীব্র সঙ্কটসহ গো-খাদ্যেরও অভাব দেখা দেয়। পানিবন্দি অনেক শিশুদের পানিতে ডুবে মরার ঘটনা ঘটে। অনেকের মাঝেই পানিতে ডুবে মরার আতঙ্ক বিরাজ করে।

এ ছাড়াও বিগত দিনে যমুনার তীব্র ভাঙ্গনের ফলে উপজেলার কুলকান্দি, বেলগাছা, চিনাডুলী ও সাপধরী ও পার্থশী ইউনিয়নের বিরাট অংশ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে হাজার হাজার পরিবার ভিটা বাড়ি হারিয়ে ভূমিহীন হয়ে পড়েছে। এ সব মানুষ মোরাদাবাদ বাঁধ, কুলকান্দি, ছড়াবাতা ও গুঠাইলে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করে আসছেন। পাশাপাশি গরু ছাগল মহিষ ও হাঁস মুরগি কবুতরসহ বসবাস করতে প্রতিনিয়তই দুর্ভোগ পেহাতে হয়। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিচ্ছিন্ন এসব মানুষের জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

বন্যা কবলিত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপির ঐক্লান্তিক প্রচেষ্টায় নির্মিত হচ্ছে উপজেলায় দুটি মুজিব কিল্লা। মুজিব কিল্লায় বন্যা কবলিত মানুষ আশ্রয়সহ গরু, ছাগল, হাঁস ও মুরগি নিয়ে দুর্ভোগ লাঘবসহ আতঙ্ক বিহীন স্বাচ্ছন্দে আশ্রয় নিতে পারবে।

বাঁধে আশ্রিতরা বলেন, কিল্লাডা হয়তাছে, এহন আশ্রয় নেওয়ার জায়গা হব। ঝড়-বইন্যা হইলে এই কিল্লার ওপরেই গরু-বাছুর লইয়া আশ্রয় নিবের পামু। তারাতারি বিল্ডিংগুলে হইলে আমরা থাকপের পামু।

কুলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান জানান, মুজিব কিল্লা নির্মিত হচ্ছে এতে বন্যায় আক্রান্ত মানুষরা নির্বিঘ্নে আশ্রয় নিতে পারবে। বন্যায় তাদের দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে আমি মনে করি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু বলেন, চলমান মুজিব কিল্লার কাজ বাস্তবায়নে আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। প্রতিনিয়তই আমাদের তদারকি রয়েছে। মুজিব কিল্লায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের জীবন বাঁচাতে ও গবাদি পশু-পাখির আশ্রয়স্থল হিসাবে ভরসা পাবে নির্মাণাধীন মুজিব কিল্লায়।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এমপি বলেন, আমার এলাকার যমুনা পাড়ের বন্যা কবলিত মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে কয়েকটি ফ্লাড সেল্টার ও মুজিব কিল্লা নির্মাণে বরাদ্দ দিয়েছেন। যাহার কাজ চলমান রয়েছে। বন্যায় দুর্গম চরের মানুষ, গবাদি পশু পাখিসহ মুজিব কিল্লা শতভাগ ব্যবহার করবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ পাবে।