জামালপুরে উৎপাদক দলের সভায় ফসলের ন্যায্যমূল্য দাবি ও শস্য বীমা খোলার সিদ্ধান্ত

এরিয়া প্রোগ্রামের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে গঠিত উৎপাদক দলের সাথে সভা অনুষ্ঠিত হয়।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: এলাকার কৃষকদের অবস্থার পরিবর্তন ও উন্নয়নের লক্ষ্যে জামালপুর এরিয়া প্রোগ্রামের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে গঠিত উৎপাদক দলের সভা ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত কৃষকদের আলোচনার মূলসুর ছিলো কষ্টার্জিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার দাবি এবং বিভিন্ন দুর্যোগে ক্ষতিপূরণ যাতে পায় সেজন্য শস্য বীমা খোলা।

জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীরচর ভাটিপাড়া সিদ্দিকুর রহমানের বাড়িতে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন উৎপাদক দলের সভাপতি জিয়াউল হক।

সভায় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড ভিশনের সমন্বিত জীবিকায়ন কারিগরি কর্মসূচির জাতীয় সমন্বয়কারী নাহিন আহমেদ শাহ্, কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রুহুল আমীন, ব্লু মার্বেল মাইক্রো ইন্সুরেন্সের প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্যানুয়েল রোজারিও প্রিন্স, উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম, জামালপুর এরিয়া প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপক সাগর ডি কস্তা, উন্নয়ন সংঘের জামালপুর এপির ব্যবস্থাপক মিনারা পারভীন, সিডিও সমীর কুমার পান্ডে, সাব্বির হোসেন রিয়াদ, এআর মালিক সিডসের বাজার উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. খায়রুল ইসলাম। সভায় উৎপাদক দলের ২০ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

ওয়ার্ল্ড ভিশন ও উন্নয়ন সংঘের পরিদর্শক দল বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

সভায় উপস্থিত সদস্যদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত মূল্য না পেয়ে ঋণে দায়গ্রস্ত কৃষকরা হতাশ এবং ফসল উৎপাদনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে কৃষকরা। মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, ভঙ্গুর যাতায়াত ব্যবস্থা, উৎপাদনের খরচের চেয়ে উপযুক্ত বা ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, বন্যা, শৈত্যপ্রবাহ, শিলাবৃষ্টি এবং বিভিন্ন দুর্যোগে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হওয়াসহ মাঠ পর্যায়ে চাষীদের জীবন যন্ত্রণা, সফলতা, ঝুঁকিসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত নিয়ে জামালপুর এরিয়া প্রোগ্রাম কৃষকদের ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। ওয়ার্ল্ড ভিশনের জীবিকায়ন কর্মসূচির চেতনায় জামালপুর এপির কারিগরি সহযোগিতায় কৃষকদের নিয়ে কর্মএলাকায় গঠন করা হয় উৎপাদক দল।

উৎপাদক দলের মাসিক সভা নিয়মিতকরণ, সঞ্চয়ের প্রতি উৎসাহিত করা, একসাথে পণ্য বাজারে বিক্রি করা, আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করা, দলবদ্ধভাবে ভালো জাতের বীজ, সার, কীটনাশক সংগ্রহ করা, জৈব সারের প্রতি কৃষকদের উৎসাহিত করা, কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা, এপি কর্মীদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ করাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের পরিকল্পনা নিয়ে দল কাজ করছে বলে সভা সূত্র জানায়।

ওয়ার্ল্ড ভিশন ও উন্নয়ন সংঘের পরিদর্শক দল বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

সভা শেষে ওয়ার্ল্ড ভিশন ও উন্নয়ন সংঘের পরিদর্শক দল হতদরিদ্র পরিবারের বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ, বন্ধু চুলা, জীবিকায়নের জন্য ছাগল বিতরণের ফলাফল, জৈব সার উৎপাদন পদ্ধতি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, নলকূপ, হাতধোয়া প্রক্রিয়া, হতদরিদ্র উপকারভোগীদের সাথে আত্মবিশ্বাস উন্নয়নমূলক সভার কার্যক্রম পরিদর্শন এবং কালেকশন পয়েন্টের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন।

ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির জন্য উৎপাদক দলের মাধ্যমে কালেকশন পয়েন্ট গড়ে তোলা, শস্য বীমা খোলা, বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি বাগানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

উৎপাদক দলের স্বপ্ন হিসেবে জানা যায়, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে গ্রামের সকল কৃষক দলবদ্ধভাবে বীজ, কীটনাশক ক্রয়, উৎপাদিত পণ্য দলীয়ভাবে বিক্রি করাসহ সদস্যরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারে শিশুর কল্যাণ নিশ্চিত করা।

উল্লেখ হংকং সরকারের আর্থিক সহায়তায় ওয়ার্ল্ড ভিশনের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়ন সংঘ জামালপুর এরিয়া প্রোগ্রাম এপি বাস্তবায়ন করছে।