সাধারণ সম্পাদক পদে ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী রাখালকে দেখতে চায় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা

শাকিরুজ্জামান রাখাল

বিল্লাল হোসেন মন্ডল, দেওয়ানগঞ্জ প্রতিনিধি, বাংলারচিঠিডটকম : আসন্ন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা শাকিরুজ্জামান রাখালকেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দেখতে চায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করেই তাঁর ছাত্র জীবন থেকে ছাত্রলীগে রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। আওয়ামী লীগের জন্য বহুবার রাজপথে বিএনপি-জামাতের হাতে নির্যাতনের শিকার হন রাখাল।

সাবেক ছাত্রনেতা রাখাল যৌথবাহিনীর হাতেও একাধিকবার আটক এবং নির্যাতনের শিকার হন। মামলা-হামলা-নির্যাতনের শিকার এবং মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা জনপ্রিয় জনবান্ধব নেতা শাকিরুজ্জামান রাখাল।

১৯৮২ সালের ১ অক্টোবর বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের পোল্যাকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর পিতা মরহুম সুরুজ্জামান দুদু মিয়া ছিলেন একজন সমাজ সেবক ও আওয়ামী নেতা, চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন সময়ে অসহায় মানুষের বান্ধব ছিলেন। মামা আবু সাইদ ছিলেন ওই ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

বড় ভাই সোলায়মান হোসেন দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। বর্তমান তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

রাজনৈতিকভাবেই তাঁর শৈশব-কৈশর শুরু হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করেই তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু। তাঁর প্রাণের দল আওয়ামী লীগের জন্য বহুবার রাজপথে বিএনপি-জামাতের হাতে নির্যাতনে শিকার হন। যৌথবাহিনী তাকে একাধিকবার অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে প্রাণনাশের চেষ্টা করেছে জনপ্রিয় এই নেতার জীবন বৃত্তান্ততে উল্লেখ করা হয়েছে। রাখাল বাহাদুরাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান বাহাদুরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের দ্বিতীয় মেয়াদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি ২০০৫ সালে বাহাদুরাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদে দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৪ সালের কাউন্সিলদের প্রত্যক্ষ ভোটে বাহাদুরাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে জয়লাভ করেন। চলতি বছরের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১১ সালে বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান হিসাবে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। চলতি বছর দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

দেওয়ানগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময় ১৯৯০ সাল থেকেই সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হন রাখাল। পরবর্তীতে শেখ রাসেল স্মৃতি সংঘের (পোল্যাকান্দি) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সালে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য পদ লাভ করেন। পরবর্তীতে আহসান হাবীব টিটু মুক্তাদির বিল্লাহ সিপনের প্রস্তাবিত প্যানেলে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলেন। পরবর্তীতে দলের স্বার্থে নিজের নাম প্রত্যাহার করেন।

২০০২ সালে অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় যৌথ বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে। সে সময় যৌথ বাহিনীর হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন এবং জামালপুর জেলা কারাগারে ৭২ দিন কারাভোগ করেন।

শুধু আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অপরাধে তাকে বহুবার হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ১৯৯৯ সালে রাজ্জাক হত্যা মামলায় রাখালকে ২ নং আসামি, তার সহোদর ছোট ভাই নাজমুল হোসেনকে ৪ নং আসামি এবং বড় ভাই সোলায়মান হোসেনকে ১৪ নং আসামি করা হলে দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। পরিবারের ৩ ছেলে মামলার আসামি হওয়ায় সবাই ঘর বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পলায়ন করেন এবং ওই সময় তাদের পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে। তখন বৃদ্ধ বাবা-মা’কে দেখার কেউ ছিল না। বহু কষ্টে তাদের সংসার চলতো। তাদের বাবার পৈত্রিক জমিজমা বিক্রি করে এসব মামলা চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছিল পরিবারটি।

পরবর্তীতে ২০০৪ সালে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে রাখালের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। ১০ মাস ১০ দিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেল খাটেন। ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আদালত কর্তৃক নির্দোষ প্রমাণিত হলে বেকসুর খালাস পান রাখাল। তারপর থেকেই রাজনৈতিক কারণে অনেকবার কারাবরণ করেন তিনি।

রাজনৈতিক কারণে তাকে বহুবার হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় তিনি পৌর শহরে হামলায় শিকার হয়ে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন বহুবার। রাখালের রাজনৈতিক জীবনের বহু বছর জেল খেটেছেন, নির্যাতন, অত্যাচার সহ্য করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের একজন পরীক্ষিত দুঃদিনের একনিষ্ঠ কর্মী। যা দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা জামালপুর জেলার সকল নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ সবাই অবগত আছেন।

সমাজ সেবায়ও তাঁর ব্যাপক অবদান রয়েছে। রাজনীতিবিদ এবং জনপ্রতিনিধি হবার সুবাদে সমাজসেবক হিসাবে সমাজের বহু কল্যাণজনক কাজ করার সৌভাগ্য লাভ করেন ত্যাগী এই নেতা। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং ব্যক্তিগত অর্থায়নে পোল্যাকান্দি জামে মসজিদ, পোল্যাকান্দি ঈদ-গাঁ মাঠ, হাফেজিয়া মাদ্রাসাসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুদান প্রদান করেন। ভয়াবহ বন্যায় দেওয়ানগঞ্জ ঝালোর চর সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় তিনি নিজ অর্থায়নে সড়ক মেরামত করেন। এছাড়াও প্রতিবছর বিভিন্ন ধর্ম সভায় ব্যক্তিগত অনুদান দিয়ে ধর্মীয় জলসার আয়োজন করেন তিনি। প্রতি বছর দুর্গা পূজায় উপজেলার ২৫টি পূজা মণ্ডপে লাখ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেন। অসহায় দুঃস্থ মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার খরচ ও অসহায় পরিবারের মেয়েদের নিজ অর্থায়নে বিবাহ দেওয়াও রেকর্ড রয়েছে তার। তিনি অসহায় পরিবার, প্রশাসন ও সাংবাদিকবান্ধব বলে পরিচিত লাভ করেছেন।

ইউনিয়নের বিচার শালিশে কঠোর ভূমিকা পালন করেন তিনি। এলাকার সাধারণ মানুষ এবং সামাজিকভাবে যে কোনো সমস্যাগ্রস্ত মানুষের পাশে তিনি সবার আগে দাঁড়ান। চেষ্টা করেন তাঁর সাধ্যমত সার্বিক সহযোগিতা করার।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা শাকিরুজ্জামান রাখালকে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত করলে দলের সাফল্য লাভ হবে বলে জানান তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।