ইসলামপুরে যুগল পরকীয়া : স্ত্রীদের হাতে স্বামী হত্যার অভিযোগ তদন্তে লাশ উত্তোলন

লাশ উত্তোলনে শরীরের বিভিন্ন অংশের ১১৮টি হাড়ের টুকরা পান তদন্ত কর্মকর্তা।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

লিয়াকত হোসাইন লায়ন, ইসলামপুর প্রতিনিধি, বাংলারচিঠিডটকম: জামালপুরের ইসলামপুর সদর ইউনিয়নে যুগল পরকীয়ায় স্ত্রীদের হাতে নিহত একটি হত্যা মামলার অভিযোগে ময়না তদন্তের জন্য ৯ মাস পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। এঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যেরে সৃষ্টি হয়েছে।

মামলার তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিআইডি ইন্সপেক্টর দেওয়ান মোহাম্মদ এনায়েত কবীর জানান, উত্তোলন করা লাশের ময়নাতদন্ত ও রিপোর্ট পেলে মামলার অগ্রগতি বুঝা যাবে।

জানা যায়, জামালপুরের ইসলামপুর সদর ইউনিয়নের পাতিলদহ পচাবহলা দক্ষিণপাড়া গ্রামের পাইলিং ব্যবসায়ী আইয়ূব আলী বিয়ে করেছিলেন তিনটি। নিজের বাড়িতে প্রথম স্ত্রী নাজমা আর ঢাকায় থাকতো দুই স্ত্রী রোজিনা বেগম ও পাখি বেগম।

হত্যা মামলার বাদী নিহতের সহোদর ভাই শাহালীর অভিযোগ, তার ভাই আইয়ূব আলীর ২য় স্ত্রী রোজিনা (৩৫) ও ৩য় স্ত্রী পাখি বেগমের (৩৫) সাথে ইসলামপুর পচাবহলা গ্রামের মজিদ ফকিরের ছেলে মিষ্টারের (৩৫) সাথে অবৈধ মেলামেশা চলেছিল। অবৈধ মেলামেশার অসামাজিক কার্যকলাপ এক পর্যায়ে আইয়ূব আলী দেখে ফেলে তাদের সর্তকমূলক শাসন করেন। এরপর থেকেই মিস্টার, তার স্ত্রীর রোজিনা ও তার ভাই বাবলু (৪৫) ও যুগল পরকীয়ায় জড়িত আরেক স্ত্রী পাখি তাকে প্রাণে মেরে ফেলার সুযোগ খুজঁছিল। এক পর্যায়ে তারা পরিকল্পিতভাবে ঘটনার দিন ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি আইয়ূব আলীকে ডেকে নিয়ে গেলে রাতে আর বাড়ি ফেরেননি। রাতে তার স্ত্রী রোজিনা ঢাকা থেকে ফোনে জানায় আইয়ূব আলীর স্ট্রোক করে স্বাভাবিকভাবেই মারা গেছেন। পরে তারা নিজেই ঢাকা থেকে লাশ নিয়ে এসে নিজ বাড়ি ইসলামপুরে তরিঘরি করে মাটি দিয়ে তারা চলে যান। এসময় তাদের চোখে মুখে কোন শোকের ছায়া লক্ষ্য করা যায়নি।

কয়েকদিন পরেই গুনজন ওঠে আইয়ূব আলীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি, তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। কী কারণে নিহতের ভাই শাহালী মামলার আসামিদের নিকট ভাই মারা গেছে কিভাবে জানতে চাইলে তারা তাকেও প্রাণ নাশের হুমকি দেয় এবং বলে লাশ পচে গেছে এখন মামলা করে কোন লাভ হবে না।

পরে এঘটনায় নিহতের ভাই শাহালী বাদী হয়ে ২০২২ এর ১ জানুয়ারি আদালতে একটি হত্যা মামলার অভিযোগ দায়ের করেন। মামলা চলমান অবস্থায় ইতোমধ্যে নিহতের স্ত্রী ১ নম্বর আসামি রোজিনা (৩৫) ও তার ভাই ৪ নম্বর আসামি বাবলু (৪৫) পুলিশের হাতে আটক হয়ে জেলহাজতে রয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, অপর ৩ নম্বর আসামি মিস্টার নিহত আইয়ূব আলীর আরেক স্ত্রী পরকীয়া প্রেমিকা পাখিকে নিয়ে পলাতক রয়েছে। বর্তমানে মামলা সিআইডিতে থাকায় তদন্তাধীন রয়েছে। হত্যা মামলার আলামত সংগ্রহের জন্য সিআইডি দীর্ঘ ৯ মাস পর ২৮ সেপ্টেম্বর ময়না তদন্তের জন্য কবর থেকে আইয়ূব আলীর লাশ উত্তোলন আদেশ দেন। লাশ উত্তোলনে শরীরের বিভিন্ন অংশের ১১৮টি হাড়ের টুকরা পান তদন্ত কর্মকর্তা।

এসময় ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান রুমান, জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের ডা. নাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এ ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যেরে সৃষ্টি হয়েছে। নিহতের প্রথম স্ত্রী নাজমাসহ পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী ঘটনার অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

এব্যাপারে মামলার তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামালপুরের সিআইডি ইন্সপেক্টর দেওয়ান মোহাম্মদ এনায়েত কবীর জানিয়েছেন, হত্যা মামলার ঘটনা সঠিক তদন্তের স্বার্থে নিহত আইয়ূব আলীর লাশ ৯ মাস পর কবর থেকে উত্তোলন করা হলো। লাশের ময়নাতদন্ত ও রিপোর্ট পেলে মামলার অগ্রগতি বুঝা যাবে।