যাদুঘর সব সময় সত্য কথা বলে : আসাদুজ্জামান নূর এমপি

জামালপুরে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর প্রতিষ্ঠা নিয়ে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। ছবি : আলী আকবর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম : মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেছেন, যাদুঘর সব সময় সত্য কথা বলে। এই সত্যকে ঘিরেই কাজ করে যাচ্ছি। মনে রাখবেন শতভাগ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো তথ্য বা নিদর্শন যাদুঘরে উঠে না। অনেক গবেষণা, যাচাই-বাছাই করতে হয়। অনেক পরিশ্রম করত হয়। অনেকের সহযোগিতা লাগে।

তিনি ৫ জুলাই দুপুরে জামালপুর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে জামালপুরে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর প্রতিষ্ঠার বিষয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ১৯৯৬ সালে আমিসহ আটজন ট্রাস্টি ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছিলাম। এই মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরটিও সরকারকে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেননি। উনি আমাদের কাজটি করার স্বাধীনতা দেন। সহযোগিতাও করেছেন। শুরুতে এই যাদুঘরের দানবাক্সে একজন রিকশাঅলাকেও টাকা ফেলতে দেখেছি। স্কুলের বাচ্চারা তাদের টিফিনের টাকা দিয়েছে যাদুঘর করার জন্য। আরও অনেকেই নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। পৃথিবীর কোনো যাদুঘরই একদিনে হয়নি। যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে মানুষের কাছে বারবার যেতে হয়েছে। মানুষকে অনেক বোঝাতে হয়েছে। সকলের সহযোগিতার ফলেই যাদুঘরটি করতে পেরেছি।

তিনি আরও বলেন, জামালপুরের উন্নয়নের কর্ণধার সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপির অনুপ্রেরণায় জামালপুরেও মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জামালপুরে বাস্তবায়নাধীন শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লীতে এই মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর হবে। তরুণ প্রজন্ম এই যাদুঘর থেকে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও আঞ্চলিক পর্যায়ের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। আমরা অনেকদিন ধরেই কাজ করছি এ নিয়ে। আজকে আপনাদের কথাও শুনতে এসেছি। আপনাদের কী চিন্তা-ভাবনা, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। কাজটি করতে গিয়ে যেন কোনো ভুল না করি। তার প্রহরী হিসেবে আপনাদের থাকতে হবে।

জামালপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজাত আলী ফকিরের সঞ্চালনায় জেলার সাত উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, লেখক ও গবেষক বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান, সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শফিকুল ইসলাম আকন্দ, পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান, যুদ্ধকালীন কম্পানি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মওলা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনজীবী মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ প্রমুখ।

সভায় সাত উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা জামালপুরে স্থাপিত হতে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের ঐতিহাসিক রণাঙ্গণ ধানুয়া কামালপুরসহ জামালপুর অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের সকল ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরবগাঁথানির্ভর বিভিন্ন নিদর্শন ও তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাসসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন। সভায় বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীবকে আহ্বায়ক করে এসব তথ্য, উপাত্ত ও নিদর্শন সংগ্রহসহ যাদুঘরটিকে সমৃদ্ধ করতে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়।