শেরপুরে রঙিন কার্ড ছাপিয়ে ভিক্ষুকদের জন্য ব্যতিক্রমী পিকনিক আয়োজন

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম: পেটের তাগিদে প্রতিদিনই ভিক্ষার জন্য রাস্তায় বের হতে হয় ভিক্ষুকদের। সারা বছরেও তারা ভালো খাবার বা আনন্দ উপভোগ করার পরিবেশ পায় না। সমাজের এই অবহেলিত মানুষগুলোর জন্য এবার মমতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আমরা ‘ক’ জন নামে শেরপুরের একটি সংগঠন। শুধুতাইনা রঙিন কার্ড ছাপিয়ে ওইসব ভিক্ষুকদের জন্য ভিক্ষা বিলাস নামে পিকনিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ওই সংগঠনটি। ব্যতিক্রমী এ আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়েছে সমাজের নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।

স্থানীয় কাপড় ব্যবসায়ী হাশেম আলী ও কামাল হোসেন বলেন, রাত পোহালেই ভিক্ষার থলে আর থালা বাটি নিয়ে সড়কে ভিক্ষা করতে বের হয় ভিক্ষুকরা। মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভিক্ষায় পাওয়া টাকা দিয়ে কোন রকমে দিন যাপন করে তারা। এ অবস্থায় সমাজের এই পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর দুঃখ লাঘবে এগিয়ে এসেছে আমরা ‘ক’ জন নামে শেরপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বছরে অন্তত একদিনের জন্য হলেও ওই ভিক্ষুকদের বিনোদন দেওয়ার ব্রত নিয়ে গেল ২২ মার্চ আয়োজন করা হয় ভিক্ষা বিলাস নামের পিকনিক অনুষ্ঠানের। এ জন্য স্থানীয় গোল্ডেন ভ্যালী পার্কে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপী ভিক্ষুকরা নিজ পেশার কষ্টের কথা ভুলে গিয়ে মতে ওঠে আনন্দ উল্লাসে। তারা উপভোগ করেন পোলাও, মাংস ও ডিমসহ নানা স্বাদের খাবার। এরপর পিকনিকে আগত ভিক্ষুকরা অংশ নেন গ্রাম্য নানা খেলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে।

ভিক্ষুক লাল বানু বলেন, পিকনিকে আইসা আমরা অনেক খুশি হইছি। এর আগে আমগরে লইয়া কেউ এই রকম আয়োজন করে নাই।

আরেক ভিক্ষুক নয়ন মিয়া বলেন, পার্কে আইহা (এসে) আমাগো অনেক ভালো লাগছে। এহানকার পরিবেশ খুব সুন্দর। ভাইয়েরা আমাগো এহানে নিয়া আইছে আমরা সবাই মিইলা (মিলে) ঘোরা ফেরা করছি, খাওয়া দাওয়া করছি।

এ সময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার পা নাই। এই শরীর নিয়াই সারা দিন ভিক্ষা করি। মাইনসে আমগরে ঘিন্না করে, দূর দূর ছাই ছাই করে। তারা আমগরে পার্কে নিয়া আইসা আদর যত্ন করছে, সম্মান করছে। আমি খুব আনন্দ পাইছি।

ভিক্ষুক শরীফা বেগম, আতাহার আলী ও নাজমুল শেখ বলেন, এই পার্কে আইসা আমরা আত্মহারা হয়ে গেছি। আমাদের জন্য এত আয়োজন করা হইছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।

ভিক্ষুকদের জন্য প্রতি বছর এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজনের দাবি জানিয়ে ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সমাজের নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, যারা শুধু ভিক্ষা করে থাকে। তাদেরও মনে সাধ জাগে ভালো কিছু খাবার আর আনন্দ উপভোগ করতে। এমন আয়োজনে ভিক্ষুকদের খুশি দেখে ভালো লাগলো।

এ সময় তিনি এমন আয়োজনের উদ্যোগ স্থানীয় প্রশাসন এবং সমাজের বিত্তবানদের পক্ষ থেকেও নেয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন।

আমরা ‘ক’ জন সংগঠনের সদস্য কায়সার মাহমুদ রাজু বলেন, সমাজে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ বসবাস করে। এর মধ্যে ভিক্ষুকরা সবচেয়ে বেশী অবহেলিত। মনের মধ্যে ইচ্ছা থাকা সত্বেও ওই মানুষগুলো আনন্দ উল্লাস থেকে দূরে থাকে। তারা কখনও আনন্দের অংশীদার হতে পারে না।

কায়সার মাহমুদ রাজু আরো বলেন, শীতের সময় শ্রমিক থেকে শুরু করে নানা পেশার কর্মজীবীরা পিকনিকের অয়োজন করে এদিক সেদিক ঘুরতে যান। কিন্তু ভিক্ষুক শ্রেণির মানুষের মনেও এ রকম ইচ্ছা থাকলেও তারা তা করতে পারে না। আমি একজন লেখক। আমার সেই সৃজনশীল চিন্তা ধারা থেকে ভিক্ষুকদের জন্য এ অয়োজন করা হয়েছে।

সংগঠনের আরেক সদস্য রিজভী আহমেদ বলেন, পিকনিক উপলক্ষে ভিক্ষুকদের জন্য আমরা আলাদা কার্ড ছাপিয়েছি। আমন্ত্রিত প্রত্যেক ভিক্ষুকদের মাঝে ওইসব কার্ড সরবরাহ করা হয়। সময় স্বল্পতার কারণে জেলার সকল ভিক্ষুককে আমন্ত্রণ জানাতে পারিনি। এবার প্রায় ৬০ জন ভিক্ষুক এ আয়োজনে সামিল হতে পেরেছে।

সমাজের বিত্তবানদের আর্থিক সহযোগীতায় এ পিকনিকের আয়োজন করা করা হয়েছে উল্লেখ করে রিজভী আহমেদ আরো বলেন, এখন থেকে প্রতি বছর এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।