দুই হাত এক পা নেই, পায়ে লিখে জিপিএ-৫ পাওয়া তামান্নাকে ফোন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি) ও অদম্য তামান্না আক্তার নূরা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক ❑ অদম্য তামান্না আক্তার নূরা ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মোবাইলে একটি মেসেজ দেখতে পান। মেসেজে লেখা ছিল, ‘তামান্না তুমি তো অনেক সুন্দর দেখতে। আমি তোমাকে দুইবার ফোন করেছিলাম। তোমার পরিবারে কে কে আছে? আর যা যা সহযোগিতা দরকার আমি করব।

তুমি নূর, তোমার নূরের জ্যোতি, ঐশ্বরিক ক্ষমতা আল্লাহ তোমাকে দিয়েছে। ‘

তামান্নার মোবাইলে আসা এই এসএমএস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মেসেজটি দেখে বিস্মিত হয়ে যান তামান্না। পরে তিনিও ফিরতি মেসেজ পাঠান প্রধানমন্ত্রীকে। সেখানে তামান্না লেখেন, ‘মমতাময়ী মা আমি দুঃখিত, আমার আম্মু হাসপাতালে থাকার কারণে আমি আপনার ফোনটা রিসিভ করতে পারিনি। মা আপনি যে আমাকে এভাবে খোঁজ নিয়েছেন এতে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব। আপনাদের মতো মানুষের সঙ্গে আমি কথা বলতে পেরেছি। আমার এতে তৃষ্ণা মিটছে না। আমি আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই। ‘

এরপর সন্ধ্যা ৬টা ৫৬ মিনিটে তামান্নাকে আবারও ফোন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কথা হয় কিছুক্ষণ। প্রধানমন্ত্রীর ফোন পেয়ে এবং তার সঙ্গে কথা বলতে পেরে আপ্লুত পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া অদম্য তামান্না আক্তার নূরা।

এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফোন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। তিনি বলেন, ‘আমি লন্ডন থেকে বলছি, আমি রেহানা বলছি। তুমি তো অনেক সাহসী মেয়ে, তুমি অনেক কষ্ট করে এ পর্যন্ত এসেছ। তুমি অনেক ভালো ফলাফল করেছ। তুমি অনেক ভালো ছবিও আঁকো। তোমাকে অনেক অনেক অভিনন্দন। ‘

যশোরের বাঁকড়ার আলীপুরের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় তামান্না আক্তার নূরা। তিনি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে এবার বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছেন। পা দিয়ে লিখে এ নিয়ে টানা চতুর্থবার জিপিএ ৫ পেয়ে চমকে দিয়েছেন তামান্না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পেরে খুব খুশি তামান্না। তিনি বলেন, ‘প্রথমে দুজনের সঙ্গে কথা বলতেই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। প্রবল মধুর আবেগে থরথর করে কাঁপছিল আমার ভেতরটা। মনে হচ্ছিল আমার জীবনে সৃষ্টি হয়েছে ইতিহাস। অনুভূতি তো আপনাদের বোঝাতে পারব না। এতটাই আনন্দিত হয়েছিলাম যে, হাসতে পারিনি, কেঁদে ফেলেছিলাম। ‘

অদম্য তামান্না আক্তার নূরা। ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী তার স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তামান্নাকে ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে’ একটা আবেদন করার পরামর্শ দেন। ওই ট্রাস্টের মাধ্যমে তাকে সব সহযোগিতা দেবেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তামান্নার সঙ্গে টানা চার মিনিটের কথোপকথনে প্রধানমন্ত্রী তাকে সাহস হারাতে নিষেধ করেন। সাহস আর মনোবল থাকলে তামান্না অনন্য উচ্চতায় পৌঁছতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন, ‘২৪ জানুয়ারি যশোরের জেলা প্রশাসকের পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর চিঠি লেখে তামান্না। ওর লেখা চিঠি প্রথমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, তারপরে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে তামান্নার আঁকা বিভিন্ন ছবিও দেওয়া হয় ওই চিঠির সঙ্গে। পরম করুণাময় আল্লাহর অসীম রহমতে তামান্নার সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা কথা বলেছেন। আশা করি সবার দোয়ায় তামান্নার স্বপ্ন পূরণ হবে। ‘সূত্র :দৈনিক কালের কণ্ঠ।