নীতিমালার মারপ্যাঁচে আটকে আছে শিশু জোনাকীর প্রতিবন্ধী কার্ড

শিশু প্রতিবন্ধী জোনাকী

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

নীতিমালার মারপ্যাঁচে আটকে পড়েছে অতিদরিদ্র পরিবারের সন্তান সাড়ে তিন বছর বয়সী জোনাকীর প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড পাওয়ার পথ। জোনাকীর বাড়ি শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা ইউনিয়নের ঘোরজান গ্রামে। শিশু জোনাকী ওই গ্রামের সাইদা-জহুরুল দম্পত্তির সন্তান।

জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী ওই শিশুর চিকিৎসা করাতে গিয়ে এখন নিঃস্ব তার বাবা-মা। দিন মজুর পিতার একার রোজগারে সংসার না চলায় মা সাইদা প্রতিবন্ধী শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে পথে পথে ভিক্ষা করে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তারা।

জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ৬ বছর বয়স পূর্ণ না হলে কোন প্রতিবন্ধী শিশুকে ভাতা প্রদানের সুযোগ নাই।

অন্যদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমাজসেবার অন্য এক কর্মকর্তা জানান, ৬ বছর বয়সের নিচে প্রতিবন্ধী শিশুকে ভাতা প্রদান করার নীতিমালা না থাকলেও, অন্য একটি সরকারি গেজেটে দেশের সকল প্রতিবন্ধীকে ভাতার আওতায় আনা হবে বলা আছে। সেখানে বয়সের কথা উল্লেখ করা হয়নি। সে হিসেবে শূন্য থেকে ৬ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী শিশুকে ভাতা দেওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জোনাকীর মা সাইদা জানায়, কয়েকদিন আগে গ্রামের মামুন মেম্বারের সহায়তায় মেয়েকে নিয়ে শ্রীবরদী উপজেলা কার্যালয়ে যান। সেখানকার কর্মকর্তাদের পরামর্শে প্রতিবন্ধী কার্ডের জন্য রক্ত পরীক্ষা ও ছবি তোলার কাজ শেষ করেন। পরে স্থানীয় সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে আনুসাঙ্গীক কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর বলা হয় প্রতিবন্ধী শিশুর বয়স ৬ বছর পূর্ণ না হলে তাকে ভাতার আওতায় নেয়া যাবেনা।

সাইদা আরও জানায়, সজিব নামে ৭ বছর বয়সী তার এক পুত্রসন্তানও রয়েছে। সজিব এবং সাড়ে তিন বছর বয়সী শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুকন্যা জোনাকীকে নিয়ে তার সংসার চলে খেয়ে না খেয়ে। জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী কন্যাকে সবসময় কোলে রাখতে হয়। বিছানায় শুইয়ে দিলে পুরো শরীর নিথর হয়ে থাকে। বিভিন্নজনের কাছে ধার দেনা করে মেয়ের চিকিৎসার জন্য ব্যয় করে এখন তারা সর্বস্বান্ত। দিন মজুর স্বামীর রোজগারে সংসার না চলায় প্রতিবন্ধী শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে পথে পথে ভিক্ষা করে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তারা।

এদিকে স্থানীয় নাগরিক সংগঠন ‘জন উদ্যোগ’র সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশে শূন্য থেকে ৬ বছর বয়সী হাজারও শিশু রয়েছে, যারা জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। কিন্তু নীতিমালার বেড়াজালে অনেক অতিদরিদ্র পরিবারের প্রতিবন্ধী শিশুরা ভাতা কার্ড পাচ্ছে না। অথচ প্রত্যেক মা-বাবার জন্য শিশু লালন-পালনের কষ্টকর সময়ই হচ্ছে শূন্য থেকে ৬ বছর। আর যদি হয় সে দরিদ্র পরিবারের তবে তার কষ্টের সীমা থাকেনা।

তিনি সরকারের কাছে সকল বয়সের প্রতিবন্ধীর ভাতা উন্মুক্ত করার দাবি জানান।

আরও পড়তে পারেন : দেওয়ানগঞ্জে অনেক প্রতিবন্ধী ভাতা বঞ্চিত