উদ্বোধনের অপেক্ষায় বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট টার্মিনাল

উদ্বোধনের অপেক্ষায় দেওয়ানগঞ্জ বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট টার্মিনাল। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

বিল্লাল হোসেন মন্ডল, দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ বাহাদুরাবাদ নৌ-টার্মিনাল ও পশ্চিমপাড়ে বালাসী ঘাটের বাস টার্মিনাল উদ্বোধনের অপেক্ষায় দিন গুনছে দুই টার্মিনাল এলাকার যাত্রী ও শ্রমিকরা।

শতকোটি টাকায় নির্মাণ হলেও এখনো পর্যন্ত চালু হয়নি দুই পাড়ের ফেরী চলাচল। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের ৯টি জেলার মানুষ প্রতিদিন দুর্ভোগ নিয়ে দেশের রাজধানীসহ পূর্বাঞ্চলে যাতায়াত করতে নৌকাযোগে পারাপার হচ্ছে জীবনের ঝুকি নিয়ে। প্রতি বছরই ঘটছে নৌকা ডুবির ঘটনা, প্রাণহানী হচ্ছে নৌযাত্রীদের। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে উৎপাদিত ফসল ও ব্যবসায়ীক পণ্য মালামাল পরিবহনেও। পরিকল্পনা অনুযায়ী সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও নাব্যতার জন্য নদী ড্রেজিং কাজ শেষ না হওয়ায় এ রুটে এখনও ফেরি চলাচল শুরু করা সম্ভব হয়নি।

দেশের উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধা, দিনাজপুর, নীলফামারি, কুড়িগ্রাম, রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওয়ের সাথে রাজধানীসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থার লক্ষে যমুনার পূর্বপাড়ে দেওয়ানগঞ্জ বাহাদুরাবাদ ঘাট।

জানা গেছে, বাহাদুরাবাদ ঘাট, পশ্চিমে গাইবান্ধার বালাসী ঘাটের মধ্যে ফেরি চলাচলের জন্যে ২০১৭ সালের ১ জুলাই বিআইডব্লিউএ বাস্তবায়ন করে বাহাদুরাবাদ-বালাসী ফেরীঘাট পর্যন্ত নদী খনন কাজ শুরু করেন। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য দেশের পশ্চিম উত্তরাঞ্চলের সাথে রাজধানীসহ পূর্বাঞ্চলের যাতায়াতের দুর্ভোগ লাঘব করে যাতায়াত সরাসরি ও সহজীকরণ করা এবং পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সুগম করা।

উদ্বোধনের অপেক্ষায় দেওয়ানগঞ্জ বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট টার্মিনাল। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বাস ট্রাক অন্যান্য যানবাহনসহ যাত্রী ফেরি যোগে পারাপারের মাধ্যমে যাত্রী সাধারণের যাতায়াতে সময় ও অর্থ উভয়ই স্বাশ্রয় হবে। ১৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ফেরিঘাট, আনুষঙ্গিক স্থাপনাদী নির্মাণ ও নদী ড্রেজিংয়ের প্রকল্পটির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এস এস রহমান ইন্টারন্যাশনাল। ১ জুলাই ২০১৭ তে কাজ শুরু করে ইতিমধ্যে বাস টার্মিনাল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছ। যমুনার পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে পৃথক পৃথকভাবে বাস টার্মিনালে নির্মাণ সম্পন্ন করেছে পুলিশ ব্যারাক, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ব্যারাক, পাইলট হাউজ, অয়েট ব্রিজ স্কেল, মসজিদ, রেস্টুরেন্ট, টয়লেট কমপ্লেক্স ও অয়েটিং শেড, বিআইডব্লিউটিএ’র অফিস ঘর ও টোল বুথ। পাশাপাশি বাহাদুরাবাদ ঘাট থেকে বালাসী ঘাট পর্যন্ত নদী ড্রেজিং শেষ করে পরীক্ষামূলকভাবে দুঘাটের মধ্যে ফেরি চলাচল করান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

কিন্তু পরবর্তীতে নদীর খননকৃত চ্যানেল পথে নিয়মিত ফেরি চলাচল না করার কারণে প্রাকৃতিক নিয়মে উজান থেকে পানির স্রোতে বয়ে আসা বালুতে ড্রেজিংকৃত চ্যানেলের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যমুনার মাঝখানে চর জেগে উঠেছে।

প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ এখনো নদী খননের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। নিয়মিত ফেরি চলাচল না করায় নদীর বালু যাচ্ছে নদীতেই ফলে কোনো কাজে আসছেনা নদী ড্রেজিং। যমুনার দুপাড়ে পৃথক পৃথকভাবে টার্মিনাল ও আনুষঙ্গিক স্থাপনাদী নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলেও এ রুটে ফেরি চলাচল করতে না পারার আরেকটি কারণ ওই বাস টার্মিনাল পর্যন্ত বাস ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচলের জন্যে প্রশস্ত উপযোগী সড়ক নেই।

বাস টার্মিনাল, আনুষঙ্গিক স্থাপনাদী ও নদী ড্রেজিং এর সাথে পরিকল্পনা মোতাবেক উপযোগী সংযোগ সড়ক নির্মাণ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত সে সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ মহাসড়কের প্রান্ত থেকে ওই বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ৪.৫ কিলোমিটার উপযোগী সড়ক নির্মাণে বিলম্বের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে উত্তরাঞ্চলবাসীদের। যাতায়াতে ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় শতশত যাত্রী পারাপার হচ্ছে। ফেরি চলাচল না থাকায় বাহাদুরাবাদ ঘাট থেকে বালাসী ঘাট পারাপার হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে।

সুন্দরগঞ্জ এলাকার নৌযাত্রী এনামুল হক জানান, বালাসী ঘাট থেকে বাহাদুরাবাদঘাট পর্যন্ত নৌকা ভাড়া নিচ্ছে ৩০০ টাকা। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ায় হচ্ছে। ফেরি চলাচল থাকলে অল্প ভাড়ায় আমরা পারাপার হতে পারতাম।

চুকাইবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান জানান, বাহাদুরাবাদ বালাসী ঘাট ফেরি চলাচল করা খুবই জরুরী। ফেরি চলাচল না থাকায় উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ নৌকাযোগে ঝুকি নিয়ে পারাপারে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। শীঘ্রই নদী খনন কাজ সমাপ্ত করে ফেরি চলাচল উদ্বোধন করতে সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

জেলা রোডস এন্ড হাইওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কে বি এম সাদ্দাম হোসেন জানান, দেওয়ানগঞ্জ বটতলী জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ মহাসড়কের প্রান্ত থেকে ওই বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ৪.৫ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এলজিইডি’র ওই সড়কটির প্রশস্ততা না থাকায় বাস ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলাচলে উপযোগী নয়। সড়কটি নির্মাণ কাজের প্রক্রিয়া চলছে। খুব শীঘ্রই নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে বলে আশা করছি। ফেরি চলাচল শুরু হলে এক দিকে লাভবান হবে যাত্রী অপর দিকে কর্মসংস্থান খুঁজে পাবে শ্রমিকরা।