সরিষাবাড়ীতে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে ৪২ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা অফিস পিয়ন

পলাতক অফিস পিয়ন সাকিবুল হাসান।

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে প্রায় ৪২ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে অফিস পিয়ন সাকিবুল হাসানের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর পরই গাঁ ঢাকা দিয়েছে ওই অফিস পিয়ন। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত তিন বছর আগে অফিস পিয়ন জয়নাল আবেদীন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার কর্মস্থলে কাজ করার অনুমতি দেন জয়নাল আবেদীনের ছেলে সাকিবুল হাসানকে। এ কাজ করার সুবাদে অফিসের সকল গোপনীয় কাগজপত্রসহ অফিসিয়াল টাকা লেনদেনের পিন কোর্ড জেনে ফেলে। এর পাশাপাশি অফিসের সকল কর্মকর্তা কর্মচারির বিশ্বস্ত হয়ে উঠেন সাকিবুল হাসান। তিনি সকলের বিশ্বস্ত হওয়ার সুযোগে অফিসের টাকা কিভাবে জালিয়াতি করে হাতিয়ে নেয়া যায় তার ফন্দি আঁকতে থাকে। একপর্যায় পর পর চার দফায় গত তিন বছরে অফিসের অডিটর অফিসার রফিকুল ইসলাম, এসএএস সুপারিনটেনডেন্ট ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা স্নিগ্ধ রায়হানের স্বাক্ষর জাল করে উপজেলা কমপ্লেক্স সোনালী ব্যাংক থেকে ‘জামানত ফান্ডের’ ৪১ লাখ ৯৪ হাজার ৫১২ টাকা উত্তোলন করে অফিস পিয়ন সাকিবুল হাসান। তার মধ্যে ১০-১২-২০২০ তারিখে ১৩ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা, ৩১০১২-২০২০ তারিখে ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৩০ টাকা, ২৪-০১-২০২১ তারিখে ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৩০০ টাকা ও ১৬-০২-২০২১ তারিখে ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৮২ টাকা উত্তোলন করে নেয় অফিস পিয়ন সাকিবুল হাসান। দীর্ঘদিন ধরে এমন কর্মকাণ্ড করলেও জানতে বা বুঝতে পারেনি কেউ।

এদিকে ১৬ ফেব্রুয়ারি টাকা উত্তোলনের ভাউচার তলব করে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা স্নিগ্ধ রায়হান। এ সময় দেখতে পায় টাকা উত্তোলিত ভাউচারে স্বাক্ষরগুলো তার নয়। এরপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারে কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে পর্যায়ক্রমে ৪১ লাখ ৯৪ হাজার ৫১২ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এ সময় পিয়ন সাকিবুল হাসান কৌশলে পালিয়ে যায়।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে হিসাব রক্ষণ কার্যালয়ের এক কর্মচারী জানান, সে সময়ের উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকা মো. রমযান আলী তার চাচাতো ভাই সাকিবুল হাসানকে দিয়ে নিয়ম বহির্ভূত বিভিন্ন সময় নানান কাজ করিয়ে নিতেন। রমযান আলীর আদেশে কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কম্পিউটারের কাজ করার সুযোগ পায় সাকিব। সে সুবাদে গোপন কোড নাম্বার জেনে নেয় সে।

উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা স্নিগ্ধ রায়হান জানান, ১৬ ফেব্রুয়ারি কাগজপত্র খোঁজ নিয়ে জানতে পারি চার দফায় কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে ৪১ লাখ ৯৪ হাজার ৫১২ টাকা তুলে নিয়েছে অফিস পিয়ন সাকিবুল হাসান। বিষয়টি ওপরের মহলের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তাদের নিদের্শ অনুযায়ী থানায় দুটি জিডি করা হয়েছে। বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনকেও জানানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই অফিস পিয়ন পলাতক রয়েছে।