দেশের সার্বভৌমত্ব ও সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় নৌবাহিনীকে সদা প্রস্তুত থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক ❑ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে সদা প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তাঁর সরকার সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনাকে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমুদ্রসীমা অর্জন কেবল নয় এই সমুদ্র সম্পদটা যেন দেশের উন্নয়নে ব্যয় হয় সে জন্য আমাদের কাজ করতে হবে এবং সে জন্যই আমরা সুনীল অর্থনীতি পদক্ষেপ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশাল এই সমুদ্রের সম্পদ আহরণ এবং তাকে কাজে লাগানোই আমাদের লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আর জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের সমুদ্রসীমাকে রক্ষার জন্য নৌবাহিনীকেও শক্তিশালী করে আমরা গড়ে তুলছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ নভেম্বর নৌবাহিনীর নতুন পাঁচটি আধুনিক যুদ্ধ জাহাজ কমিশনিং করেছেন।

এ সময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নৌবাহিনী তার ক্রমাগত অগ্রযাত্রায় আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। দিনটি শুধু বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য নয়, সমগ্র দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের।’

এই কমিশনিং-এর ফলে বাংলাদেশের জলসীমা সুরক্ষায় এবং নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করলো নতুন দু’টি আধুনিক ফ্রিগেট বানৌজা ওমর ফারুক, আবু উবাইদাহ ও একটি করভেট যুদ্ধজাহাজ প্রত্যাশা এবং দুইটি জরিপ জাহাজ বানৌজা দর্শক ও তল্লাশী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সর মাধ্যমে জাহাজগুলোকে নৌবাহিনীতে কমিশনিং করেন।

এর আগে চট্টগ্রামে বানৌজা ঈশাখান নৌ জেটিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল জাহাজসমূহের অধিনায়কগণের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন।

অনুষ্ঠানে নৌবাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকষ দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার ও প্রদান করেন।

গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসসহ পিএমও এবং গণভবনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নৌবাহিনীর সদস্যরা প্রতিনিয়ত লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে অনেক প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে সমুদ্র এলাকার সার্বিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করছে, যা প্রশংসার দাবিদার।

দেশের পরাষ্ট্রনীতি’র আলোকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। জাতির পিতা আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে বলেছেন- ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরীতা নয়’, আমরা সেই নীতিতেই বিশ্বাস করি। কিন্তু যদি বাংলাদেশ কখনো বহিঃশত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাকে মোকাবেলা করার মত সক্ষমতা আমরা অর্জন করতে চাই।

সরকার প্রধান বলেন, আমাদের সুশৃঙ্খল সশস্ত্রবাহিনী দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও বিপুলভাবে প্রশংসিত পেশাদার একটি বাহিনী।

তিনি বলেন, গত ২০১০ সাল থেকে ভূ-মধ্যসাগরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে আমাদের যুদ্ধজাহাজ সার্বক্ষণিকভাবে অংশগ্রহণ করছে। এই বছরের আগস্ট মাসে আমরা সেখানে পাঠিয়েছি আমাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির একটি করভেট বানৌজা ‘সংগ্রাম’, যা বহির্বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে।

এ ছাড়া দক্ষিণ সুদানেও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কন্টিনজেন্ট অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিরক্ষা মিশন ছাড়াও এ বাহিনী নিয়মিতভাবে বহুজাতীয় এক্সারসাইজ, বঙ্গোপসাগরে ‘কোর্ডিনেটেড প্যাট্রল’ ও কূটনৈতিক সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের ‘মেরিটইম সিকিউরিটি’-কে সুসংহত করে চলেছে।

তিনি বলেন, মালদ্বীপে যখন সুপেয় পানির অভাব হয়েছিল তখন আমরা আমাদের নৌবাহিনীর জাহাজ দিয়ে সুপেয় পানি সেখানে পাঠাই এবং তাঁদের সহযোগিতা করি। এভাবেই দেশে এবং প্রতিবেশী দেশেও বাংলাদেশ নৌবাহিনী নানারকম সহযোগিতা প্রদান করে যাওয়ায় তিনি এই বাহিনীকে ‘কর্মমুখর’ আখ্যায়িত করে তাঁদের ধন্যবাদ জানান।সূত্র:বাসস।