ইসলামপুরে রাস্তায় সন্তান প্রসব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় লকডাউনের কবলে পড়ে ইজিবাইকের যাত্রী এক প্রসূতি রাস্তায় সন্তান প্রসব করেছেন। ৭ এপ্রিল বেলা সোয়া ১১টার দিকে ইসলামপুর সরকারি কলেজ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রেলের গেটবেরিয়ার নামিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা গেটবেরিয়ার তুলে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় অন্য রাস্তা দিয়ে ইসলামপুর হাসপাতালে যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় গ্রামবাসী, প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগে তোলপাড় শুরু হওয়ায় বিকেলে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রসূতি ও নবজাতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা স্থাস্থ্য বিভাগ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে অঘোষিত লকডাউন চলাকালে ৭ এপ্রিল সকাল থেকেই ইসলামপুরের কলেজ রোডে রেলের গেটবেরিয়ার ফেলে কে বা কারা যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। বেলা সোয়া ১১টার দিকে উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের ধনতলা গ্রামের বন্যা (২২) নামের এক প্রসূতিকে বহনকারী ইজিবাইক ওই রেলগেটে এলে সেখানে কর্তব্যরত কয়েকজন পুলিশ সদস্য গেটবেরিয়ার উঠানো সম্ভব নয় বলে তাদেরকে অন্য রাস্তায় হাসপাতালে যেতে বলেন। ওই প্রসূতিকে নিয়ে তাদের ইসলামপুর উপজেলা হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল।

প্রসূতির অবস্থা খুবই জরুরি হওয়ায় তার স্বজনরা তাকে নিয়ে অন্য রাস্তায় হাসপাতালে যাওয়ার জন্য ইজিবাইকটি সেখান থেকে ঘুরিয়ে ইসলামপুর সরকারি কলেজে গেট এলাকায় পৌঁছুলে প্রসূতি একটি ছেলে সন্তান প্রসব করেন। রাস্তার পাশের বাড়ির কয়েকজন নারী ইজিবাইক থেকে প্রসূতিকে নামিয়ে বাড়িতে নিয়ে সন্তান প্রসবে সহায়তা করেন। কিছুক্ষণ পর ফের ওই ইজিবাইকে করে প্রসূতি ও নবজাতককে ইসলামপুর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক নবজাতকের উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। দরিদ্র পরিবার হওয়ায় লকডাউন পরিস্থিতিতে জামালপুরে যাওয়া সম্ভব নয় বিধায় স্বজনরা প্রসূতি ও নবজাতককে একই ইজিবাইকে করে গ্রামের বাড়ি ধনতলায় নিয়ে যান।

ওই প্রসূতির পরিবার খুবই দরিদ্র। তার স্বামী দরিদ্র কৃষক। সামান্য শ্রবন প্রতিবন্ধীও তিনি। প্রসূতি ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। সন্তনাসম্ভবা হওয়ার পর মাস তিনেক আগে তিনি বাড়িতে চলে আসেন। তার স্বামী মো. এনামুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘রেলগেটে যাইয়া দেহি রাস্তা বন্ধ। পুলিশ আমগরে অন্য রাস্তা দিয়া যাবার কয়। পরে রেলগেট থেইকা ঘুইরা আসার অল্প সময় পরই রাস্তায় আমার স্ত্রীর বাচ্চা হওয়ার বেদনা ওঠে। কলেজ মোড়ের রাস্তার পাশের বাড়ির মহিলারা আইসা বাচ্চা হবার জন্য সাহায্য করেন। পরে বাচ্চার চিকিৎসার জন্য ইসলামপুর হাসপাতালেও গেছিলাম। একজন ডাক্তার কয় জামালপুরে নিয়া যাবার জন্য। আমরা গরিব মানুষ। কি করমু। তাই বাড়িত ফিরা যাই। এখন সব স্যারেরা বাড়িত আইসা অ্যাম্বুলেন্স দিল।’

রাস্তায় সন্তান প্রসব করার ঘটনাটি জানাজানি হলে ইসলামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল আব্দুন নাছের চৌধুরী বাবুল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, ইসলামপুর পৌরসভার মেয়র শেখ আব্দুল কাদের, ইসলামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সুমন মিয়া ৭ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ওই প্রসূতির খোঁজ নিতে তার গ্রামের বাড়ি ধনতলা গ্রামে যান। তারা প্রসূতি বন্যা ও তার নবজাতক ছেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য ইসলামপুর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে করে জামালপুর সদর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থার পাশাপাশি সবরকমের সহায়তার আশ্বাস দেন।

পুলিশের উপস্থিতিতে রেলের গেটবেরিয়ার উঠিয়ে প্রসূতিকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ কেন করে দেওয়া হলো না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইসলামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সুমন মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, রেলগেটে আমাদের দুজন কনস্টবল ছিল। প্রসূতির ইজিবাইকটি সেখানে পৌঁছুলে কনস্টবলরা প্রসূতির জরুরি অবস্থা দেখে তাদেরকে রেলের গেটবেরিয়ার উঠানো সম্ভব নয় বলে তাদেরকে অন্য রাস্তায় ঘুরে দ্রুত হাসপাতালে যেতে বলেন। তখন ইজিবাইক ঘুরিয়ে প্রসূতিকে নিয়ে তারা সেখান থেকে চলে যায়। পরে জানা গেছে যে ওই প্রসূতি রাস্তায় এক বাড়িতে সন্তান প্রসব করেছেন। তিনি আরো বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে সেখানে গেটবেরিয়ার নামিয়ে রাস্তা বন্ধ করা হয়নি। তবে কারা গেটবেরিয়ার নামিয়ে রেখেছে তা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।

প্রথমবারই হাসপাতালে এলে প্রসূতি ও নবজাতককে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে জামালপুরে কেন পাঠানো হলো না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইসলামপুর উপজেলা স্থাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক এ এ এম আবু তাহের এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রসূতির সন্তানটি সাতমাসের মাথায় জন্মেছে। নবজাতকের খুবই ক্রিটিক্যাল অবস্থা দেখেই হয়তো জরুরি বিভাগ থেকে তাদেরকে জামালপুরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের কাজে আমি ইউনিয়ন পর্যায়ে কাজ করছিলাম। ঘটনাটি শোনার পর আমি বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ওই প্রসূতির বাড়িতে গিয়েছিলাম। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, মেয়র ও সার্কেল এএসপিও আমার সাথে ছিলেন। আমরা শিশুটির জরুরি উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে করেই বিকলে প্রসূতি ও নবজাতককে জামালপুর সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছি।