৪১০ প্রবাসীর খোঁজে হন্যে শেরপুরের প্রশাসন

শেরপুর পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে করোনাভাইরাস রোধে মানুষকে সচেতন করতে প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

গেল এক মাসে সরকারি হিসাবে শেরপুরের পাঁচ উপজেলায় ৫১১ জন প্রবাসী বাড়ি ফিরেছেন। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর দেখা মিলছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু বিদেশ ফেরত ওইসব প্রবাসীরা রয়েছে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের অগোচরে। ২৩ মার্চ দুপুরে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মাত্র ১০১ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা সম্ভব হয়েছে। তবে বাকীদের কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে।

সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ প্রবাস ফেরতদের কোয়ারেন্টিনে আনার জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু জেলার সদরসহ নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীতে প্রবাস ফেরতরা রয়েছেন আত্মগোপনে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওইসব প্রবাস ফেরতদের কোয়ারেন্টিনে আসার বারবার আহ্বান জানানো হলেও সারা পাওয়া যায়নি।

শেরপুরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক এটিএম জিয়াউল ইসলাম বলেন, আমরা দেশে ফেরত আসা প্রবাসীদের কোয়ারেন্টাইনে আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

অন্যদিকে সিভিল সার্জন চিকিৎসক আবুল কাশেম মোহাম্মদ আনোয়ার রউফ বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার অফিস থেকে প্রবাস ফেরত ৫১১ জনের নাম ঠিকানা পেয়েছি। কিন্তু তাদের ঠিকানায় পাওয়া যাচ্ছেনা। করোনাভাইরাসের বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছি। ইতিমধ্যে জেলা হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডসহ দুইটি উপজেলা হাসপাতাল ও দুটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে মোট ৬৫টি সিট করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে এর সিট সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে।

এদিকে হোম কোয়ারেন্টিন নির্দেশনা না মানায় প্রবাস ফেরত দুইজনকে জরিমানা করা হয়েছে। ২২ মার্চ তাদের জরিমানা করা হয়।

জানা যায়, শহরের রাজবল্লভপুর মহল্লায় কঙ্গোফেরত ফিরোজ জামান হোম কোয়ারেন্টিনে না থেকে নকলা-নালিতাবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে লুকিয়ে ঘুরছিলেন। খবর পেয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফিরোজ আল মামুন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা চিকিৎসক মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল তাকে খুঁজে বের করে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার আদেশ দেন। সেইসাথে তাকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এদিকে একইদিন সন্ধ্যায় জেলা শহরের খরমপুর এলাকায় ভারতফেরত বিশ্বজিৎ সাহা নামে আরো একজনকে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তাকে আগামী ১৪দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

এ সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফিরোজ আল মামুন বলেন, এখন কেউ নিয়ম না মানলে তার বিরুদ্ধে আরো কঠোর হবো। তিনি আরো বলেন, প্রবাস ফেরত বা প্রবাস ফেরতদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরা নিজবাসায় কোয়ারেন্টিনে থাকুন। নিজে নিরাপদ থাকুন, আত্মীয়-স্বজনদেরও নিরাপদ রাখুন।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার আশরাফুল আজীম বলেন, করোনাভাইরাস রোধে মানুষকে সচেতন করতে আগামী এক সপ্তাহে জেলা জুড়ে দেড় লাখ প্রচারপত্র বিতরণ ও ব্যানার সাঁটানো হবে। তিনি আরো বলেন, ভয় না পেয়ে সচেতন হতে হবে ও করোনা প্রতিরোধে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। বাড়িতে থাকাসহ যে সব নির্দেশনা সরকারি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হচ্ছে তা মেনে চলতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব জানান, সার্বিক দিক বিবেচনায় রেখে সবার সহযোগিতা নিয়ে করোনা সমস্যা সমাধান করতে চাই। এর অংশ হিসাবে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাখতে আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কোচিং সেন্টার ব্যাচ ও প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি।