শরিফপুরে কৃষি জমিতে পুকুর খনন বন্ধ করলেন ইউএনও, ভেকু মেশিন জব্দ

শরিফপুর ইউনিয়নের বেড়াপাথালিয়া গ্রামে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াছমিন। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের বেড়াপাথালিয়া এলাকায় তিন ফসলি কৃষি জমি খনন করে পুকুর দেওয়া ও ইটভাটায় মাটি সরবরাহের অভিযোগে একটি ভেকু মেশিন জব্দ করে সেখানে মাটি খনন বন্ধ করে দিয়েছেন নির্বাহী হাকিম ও জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফরিদা ইয়াছমিন। ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে তিনি সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।

অভিযোগে জানা গেছে, শরিফপুর ইউনিয়নের বেড়াপাথালিয়ায় যেখানে মৎস্য খামারের জন্য পুকুর খনন করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হচ্ছে সেগুলো শত বছরের পুরনো তিন ফসলি কৃষি জমি। স্থানীয় কৃষকরা এসব জমিতে আমন, ইরিবোরো ধান ও সরিষাসহ সারা বছর ধরেই বিভিন্ন ফসল আবাদ করেন। স্থানীয় একটি প্রভাবশালীচক্র জমির মালিক কৃষকদের লোভ দেখিয়ে ও চাপ প্রয়োগ করে বছর চুক্তিতে প্রতিবিঘা ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় জমি ভাড়া নিয়ে ইতিমধ্যে পুুকুর খনন করে অবৈধভাবে মাছ চাষ করে আসছে। কোনো কোনো কৃষকের কাছ থেকে জোর করে জমি কিনে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

এই চক্রের স্থানীয় গোলাম রব্বানী, রাসেল ও লিটন নামের তিন ব্যক্তি বছর তিনেক আগে প্রায় ৭০ বিঘা কৃষি জমিতে পুকুর খনন করে গড়ে তুলেছেন বিশাল মৎস্য খামার। ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন ও পরিবেশ ছাত্রপত্র ছাড়াসহ বিভিন্ন আইনকে তোয়াক্কা না করে প্রভাব খাটিয়ে তিন ফসলি কৃষি জমিতে পুকুর দিয়ে অবৈধভাবে মাছ চাষ করে আসছে তারা। এতে করে আবাদি জমি কমে যাওয়ায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। কৃষকরা জানিয়েছেন জমিগুলোতে আর কোনোদিন ফসল আবাদ করা যাবে না। ওই চক্রটি গত বছরের ডিসেম্বর মাসে স্থানীয় শিল্পপতি মো. জুলহাস উদ্দিনের ছত্রছায়ায় তার নিজস্ব প্রায় ১৭ বিঘা জমিসহ আরো অন্তত ৬০-৭০ বিঘা আবাদি জমি কৃষকদের প্রলোভন দেখিয়ে ভাড়া নিয়ে বিশাল এলাকাজুড়ে পুকুর খনন করেছে মাছ চাষের জন্য। সেই পুকুরে গভীর নলকূপ দিয়ে পানি ভরাটের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। স্থানীয় ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাহী হাকিম ও সদরের ইউএনও ফরিদা ইয়াছমিন গত বছরের ৯ ডিসেম্বর বেড়াপাথালিয়ায় গ্রামের কৃষিজমিতে অবৈধ মৎস্য খামার প্রকল্প এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পুকুর খননের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন।

কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞার কোনো তোয়াক্কা না করে চক্রটি সেখানে পুকুর খনন কাজ অব্যাহত রেখেছে, এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সেখানে পুনরায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ইউএনও ফরিদা ইয়াছমিন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের সময় জমির শ্রেণির পরিবর্তনকারী ওই চক্রের কাউকেই ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি।

জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফরিদা ইয়াছমিন বাংলারচিঠিডটকমকে জানান, ওই চক্রটির বিরুদ্ধে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে দেওয়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিষেধাক্ষা অমান্য করাসহ আইনভঙ্গ করে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা, মৎস্য খামার করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও অনুমোদন না থাকা, বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ইট প্রস্তুত ও ভাটার স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ভঙ্গ করার অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে এ সময় পুকুর খনন করে জমির শ্রেণি পরিবর্তনকারী স্থানীয় বাসিন্দা শিল্পপতি মো. জুলহাস উদ্দিন ও তার নিয়োজিত লোকজনদের কাউকে পাওয়া যায়নি। এ সময় জমি খননের কাজে ব্যবহৃত একটি ভেকু মেশিন জব্দ করে শরিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের জিম্মায় রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে ভেকু মেশিনটি বিক্রি করে তা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হবে। একই সাথে ভূমি ব্যবস্থাপনা আইনে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।