জামালপুরের এক নারী গার্মেন্টসকর্মী গাজীপুরে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার নারী গার্মেন্টসকর্মী। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

সাভারের আশুলিয়া থেকে বাড়ি ফেরার পথে জামালপুরের এক নারী গার্মেন্টসকর্মী (২৬) দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই নারী। ২৪ জানুয়ারি সকালে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী এলাকায় রাস্তার পাশে অচেতন ও গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থতায় কাতরাচ্ছেন। ২৩ জানুয়ারি রাতে গাজীপুরের চাঁনধরা এলাকায় পিকআপে উঠার পর বর্বরোচিত এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই নারীর বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নির্মম নির্যাতনের শিকার ওই নারী তিন বছর ধরে ঢাকার আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ি ন্যাশনাল ডেনিমস লিমিটেড নামের একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। তিনি একজন তালাকপ্রাপ্তা নারী। তার আট বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। গার্মেন্টেসের কাছেই একটি মেস ভাড়া করে থাকেন তিন।

ওই নারী জানান, ২৩ জানুয়ারি রাত ৮টায় গার্মেন্টস ছুটি হলে তিনি জামালপুরে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন। প্রথমে তিনি আশুলিয়া থেকে বাসে গাজীপুরের চানধরা এলাকায় নামেন। সেখান থেকে তিনি একটি পিকআপ গাড়িতে উঠেন। এ সময় ওই পিকআপে আগে থেকেই বসে থাকা মাঝবয়সী অজ্ঞাত একজন লোক কোথায় যাবে বলে তাকে জিজ্ঞেস করে। ওই লোক নিজেকে আগে সেনাবাহিনীতে চাকরি করেছেন বলে ওই নারীকে অভয় দেখিয়ে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানায়। ওই নারী জামালপুরে যাবে শুনে পিকআপের চালকও বলে তারাও জামালপুরে যাবে। পিকআপ গাড়িটি চানধরা থেকে ছাড়ার পর কিছুদূর গিয়ে অন্যযাত্রীরা নেমে গেলেও তার পাশে থাকা যাত্রীটি একটি ফলের জুসের প্যাকেট কিনে ফের সেই পিকআপে উঠেন। জুসের প্যাকেটটি ওই নারীকে খেতে দেন। প্রথমে না করলেও সরল বিশ্বাসে জুস খাওয়ার পরই অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। ফলে কে কোথায় তাকে ধর্ষণ করে সাগরদিঘীতে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গেছে তার কিছুই বলতে পারছেন না তিনি।

পরদিন ২৪ জানুয়ারি ভোরে টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী এলাকায় রাস্তার পাশে ওই নারীকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। তার গলায় গার্মেন্টেসের পরিচয়পত্রে থাকা মোবাইল নম্বরে ফোন করে গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের জানান। একই সাথে স্থানীয়রা ওই নারীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। খবর পেয়ে ২৪ জানুয়ারি সকাল ৯টার দিকে জামালপুরের শাহবাজপুরের মির্জাপুর থেকে ওই নারীর স্বজন কয়েকজন ব্যক্তি সাগরদিঘী থেকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়। ২৫ জানুয়ারি বিকেলে তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নির্যাতনের শিকার ওই নারীর মা ও অন্যান্য নারী স্বজনরা ধারণা করছেন তাকে একাধিক ব্যক্তি ধর্ষণ করেছেন। তার মা জানান, তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। দেখে মনে হচ্ছিল আধামরা হয়ে গেছে। তার গোপনাঙ্গে বেশ ক্ষত হয়েছে। তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা করছে। নির্যতনকারীরা তার ব্যাগে থাকা একজোড়া রূপার নূপুর, একসেট জামা, নগদ প্রায় পাঁচ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন সেট নিয়ে ব্যাগটি তার পাশে ফেলে রেখে যায়।

এদিকে জামালপুর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক চিকিৎসক মো. হাবিবুর রহমান ফকির ওই নারীর চিকিৎসা প্রসঙ্গে বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘ওই নারীর নেশার ঘোর এখনও কাটেনি। তাকে সুস্থ করে তুলতে প্রয়োজনীয় জরুরি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ষণের অভিযোগ করা হলেও এ সংক্রান্ত ডাক্তারি পরীক্ষা না করে আগেই কিছু বলা যাচ্ছে না। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করেছে কর্তব্যরত নার্সরা। ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

২৬ জানুয়ারি দুপুরে জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, গাইনি ওয়ার্ডের পাঁচ নম্বর বিছানায় চিকিৎসাধীন ওই নারী এখনও স্বাভাবিক হয়নি। তার জ্ঞান ফিরলেও বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ানোর শক্তিটুকু নেই তার। স্মরণশক্তি একেবারেই লোপ পেয়ে গেছে। গুরুতর অসুস্থতায় কাতরাচ্ছেন তিনি।

এদিকে সর্বশেষ ঘটনাস্থল টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী হওয়ায় মামলা দায়ের করা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ওই নারীর স্বজনরা। জামালপুর সদর থানা পুলিশ এ ঘটনা জানতে পেরে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারীর খোঁজখবর ও ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে ওই নারীর স্বজনদের ঘাটাইল থানায় মামলা দায়েরের পরামর্শ দিয়েছে। এ নিয়ে তার পরিবারের স্বজনরা বেশ দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন।

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালেমুজ্জামান বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘একজন এসআইকে হাসপাতালে পাঠিয়ে ওই নারীর পরিচয় ও ঘটনার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছি। ওই নারীর দেওয়া তথ্য মতে ঘটনাস্থল ঘাটাইলের সাগরদিঘী হওয়ায় ঘাটাইল থানাতেই মামলাটি দায়ের করার জন্য তার স্বজনদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

গার্মেন্টসকর্মী আশুলিয়া থেকে জামালপুরে নিজ বাড়িতে আসার পথে পিকআপ চালক এবং সহকারীর হাতে নির্মমভাবে ধর্ষণের শিকার হবার ঘটনায় সুলতানা কামাল তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অবিলম্বে ধর্ষকদের খোঁজে বের করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষককে যদি দ্রুত প্রেপ্তার করতে পুলিশ সক্ষম হয় তাহলে এই গণধর্ষণের ঘটনার সাথে জড়িত ধর্ষকদেরও গ্রেপ্তার করা সম্ভব।

উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম এই ধষর্ণের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, অবিলম্বে ধর্ষকদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। উন্নয়ন সংঘ তার আইনগত সহায়তার প্রদানের পাশাপাশি মেয়েটির সুরক্ষায় সর্বাত্বক সহায়তা করবে।