জামালপুর হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতির সভায় ক্যান্টিন নির্মাণ কাজ সাময়িকভাবে স্থগিতের সিদ্ধান্ত

হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতির সভায় বক্তব্য রাখেন জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক প্রফুল্ল কুমার সাহা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

বিশেষ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে নির্মানাধীন ক্যান্টিন ঘরের কাজ সাময়িকভাবে স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতি। ৯ সেপ্টেম্বর জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত রোগী কল্যাণ সমিতির এক জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক প্রফুল্ল কুমার সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মাঝে আলোচনায় অংশ নেন সমিতির সহসভাপতি খন্দকার হাফিজুর রহমান বাদশা, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম, সদস্য এ এ কে মাহমুদুল হাসান, অধ্যাপক মীর আনছার আলী, খন্দকার আব্দুল মতিন, হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা এ কে এম শফিকুজ্জামান প্রমুখ।

সভা সূত্র জানায়, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির একাধিক সভায় রোগীদের হয়রানীর হাত থেকে রক্ষা এবং অর্থ সাশ্রয়ের কথা বিবেচনা করে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে রোগী কল্যাণ সমিতির ব্যবস্থাপনায় একটি ক্যান্টিন ও একটি ফার্মেসি স্থাপনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। চলতি বছরের ২৯ আগস্ট হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় পূর্বেকার সভার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন দেওয়া হয়। ক্যান্টিন ও ফার্মেসি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও কার্যবিবরণী অনুমোদন করা হননি। এছাড়া সরকারি পদ্ধতি বা বিধি অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান বা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশও প্রদান করা হয়নি ।

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে হাসপাতালের সরকারি জায়গায় ঘর নির্মাণ শুরু করেন জামালপুর শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন এবং জেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জোবায়ের হোসেন শাহিন। এই নির্মান কাজ নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয় এলাকাবাসী, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্যদের মাঝে। উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জরুরিভিত্তিতে সভায় আয়োজন করে হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতি।

কাঁচা ঘর নির্মাণকারী উল্লেখিত দুই ব্যক্তি বলেন, আমরা সাবেক সহকারী পরিচালক চিকিৎসক সিরাজুল হক স্বাক্ষরিত রেজুলেশন এবং সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি, সদর আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মোজাজফফর হোসেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহম্মেদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনজীবী মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, সহসভাপতি জি এস মিজানুর রহমানের সিল স্বাক্ষরযুক্ত সুপারিশের বলে কাজ শুরু করেছি।

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক প্রফুল্ল কুমার সাহা বলেন, আমার নিকট ক্যান্টিন নির্মাণের জন্য আরো নয়টি আবেদন জমা পড়েছে। অন্যান্য আবেদনকারীগণ আমার দিকে আঙ্গুল তুলছে। এ নিয়ে হাসপাতাল এলাকায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সংসদ সদস্য মহোদ্বয়ের উপস্থিতিতে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, সংসদ সদস্য মহোদ্বয় বিদেশ থেকে ফোনে আমাকে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

এই সঙ্কট নিরসনে রোগী কল্যাণ সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাময়িকভাবে ক্যান্টিন নির্মান কাজ স্থগিত করা হয়। সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেন জামালপুর আসার পর বিশেষ সভার মাধ্যমে এবং যথাযথ সরকারি নীতিমালা অনুস্মরণ করে ক্যান্টিনের ঘর নির্মাণ করা হবে। এই সিদ্ধান্ত অমান্য করা হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যথাযথ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানা যায়।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিনিধিকে বলেন, সরকারি সম্পদ ব্যবহার বা কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে হলে সরকারি বিধি বা নির্দেশনা অনুসরণ করার বাধ্যবাধকতা আছে। কেউ নীতিমালা অগ্রাহ্য করে কাজ করলে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান আমার কাছে লিখিত অভিযোগ ও সহায়তা চাইলে আমি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মোজাফফর হোসেন বলেন, আমরা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঠিক কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে নির্মাণ কাজ করবে। আমরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাউকে সুপারিশ করতেই পারি। তবে এর মানে এই নয় সরকারি বিধি অমান্য করে কাউকে কাজ দেওয়া হবে। টেন্ডারের মাধ্যমে যারা পাবে তারাই কাজ করবে। যারা নির্মাণ কাজ শুরু করছিলেন তাদেরকে আমি কাজ বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছি। তিনি রোগী কল্যাণ সমিতির সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান।

সভায় রোগী কল্যাণ সমিতির গত অর্থ বছরের খরচের হিসাব অনুমোদন, আগামী ২১ আক্টোবর সমিতির দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা ও নতুন কার্যকরী কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

sarkar furniture Ad
Green House Ad