সরিষাবাড়ীতে পরকিয়ার জেরে স্ত্রীকে পেটালেন ক্লিনিক মালিক

পরকিয়ার অভিযোগে স্বামীর নির্যাতনে আহত পলি আক্তার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় ইউপি সদস্যের সাথে পরকিয়া প্রেমের অভিযোগ তুলে স্ত্রীকে মেরে সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত করে দিলেন এক বেসরকারি ক্লিনিকের মালিক। ৬ সেপ্টেম্বর রাতে উপজেলার আওনা ইউনিয়নের জগন্নাথগঞ্জ ঘাট বাজারের জনসেবা ডায়াগনোস্টিক এন্ড ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে। মুমূর্ষু আহত এক সন্তানের জননী পলি আক্তারকে (২৫) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযুক্ত স্বামী লিয়াকত আলী খান ওই ক্লিনিকের মালিক।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে আওনা ইউনিয়নের মেন্দারবেড় গ্রামের আব্দুল হালিম মাস্টারের ছেলে লিয়াকত আলী খানের সাথে একই ইউনিয়নের কান্দারপাড়া গ্রামের মৃত এ কে এম ফজলুল হকের মেয়ে পলি আক্তারের বিয়ে হয়। পরে তাদের একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। বিয়ের পর থেকেই উভয়ের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলে আসছিলো।

নির্যাতিতার মা লিলি বেগম জানান, লিয়াকত আলী ১০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে তার মেয়েকে ৬ সেপ্টেম্বর রাতে ক্লিনিক সংলগ্ন বাসায় আটকে রেখে নির্যাতন করে। লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ও সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত করে চেতনানাশক ইনজেকশন দেয়। এক পর্যায়ে পলি বাথরুমে আশ্রয় নিলে তাকে মৃত ভেবে লিয়াকত অন্যত্র চলে যায়। মধ্যরাতে সে কৌশলে পালিয়ে স্থানীয় একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ৭ সেপ্টেম্বর সকালে স্থানীয় ইউপি মেম্বার মোবারক হোসেন রাজা মিয়া তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

নির্যাতিতা পলি আক্তার অভিযোগ করেন, তিনি জনসেবা ক্লিনিকে নার্সের চাকরি করতেন। পরে ক্লিনিক মালিক লিয়াকত তাকে ব্যবস্থাপক পদে বসান। কিছুদিন পর সে জোরপূর্বক পলির আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করে। এরপর থেকে যৌতুকের জন্য বিভিন্ন সময় চাপ সৃষ্টি করে আসছে। পলি আক্তার আরো জানান, লিয়াকত এরআগেও দুইটি বিয়ে করেছে। তার নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তাকে পরিশোধ করতেও চাপ দিতো।

এদিকে অভিযুক্ত স্বামী লিয়াকত আলী খান নির্যাতন ও যৌতুক দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি জনসেবা ক্লিনিকসহ নলিন বাজারে নিরাময় ও ভুয়াপুরে লাইফ কেয়ার নামে তিনটি ক্লিনিকের মালিক। দুইটি ক্লিনিক নিজে দেখাশোনা করেন এবং জনসেবার দায়িত্ব তার স্ত্রী পলির উপর দেওয়া। তার অনপুস্থিতিতে স্ত্রী পলি স্থানীয় রাজা মেম্বার ও আনোয়ার নামে দুইজনের সাথে পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। ইতোপূর্বে পলি তাকে হত্যার পরিকল্পনাও করেছিলো। এছাড়া সে বিভিন্ন সময় ক্লিনিকের টাকা চুরি করতো। এসব বিষয় নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার একপর্যায়ে সামান্য চড়-থাপ্পর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজা মেম্বারের শেখানো কথায় সে মিথ্যা অভিযোগ তুলতে নিজের শরীর নিজে কেটে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

এ ব্যাপারে তারাকান্দি পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) ইউনুস আলী বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ বিষয়ে ভূক্তভোগী বাদি হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।