মমিনুল ইসলাম কিসমত, সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় নৌকাডুবিতে একই পরিবারে দুই সহোদর বোনসহ পাঁচজন ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। ওই নৌকার আরো সাতজন যাত্রীকে স্থানীয়রা জীবিত উদ্ধার করেছে। তারাও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ২৫ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার আওনা ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে মৌলভীর বাজার সংলগ্ন নিকাই বিলে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। তারা সবাই বিলের পানিতে নৌকা নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিল।
নৌকাডুবিতে মৃত ছাত্রীরা হলো- আওনা ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের খবিরুল ইসলামের মেয়ে ও স্থানীয় অ্যাডভোকেট মতিয়র রহমান তালুকদার কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সুবর্না আক্তার (১৮) ও তার সহদোর ছোটবোন স্থানীয় পঞ্চাশী কেএলপি প্রিকেডেট স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ঝুমা আক্তার (৮), একই গ্রামের গোলাম মোস্তফার মেয়ে স্থানীয় পঞ্চাশী রেজাউল করিম দাখিল মাদরাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী অন্তরা আক্তার (১২), পঞ্চাশী গ্রামের রিপন শিকদারের মেয়ে ধনবাড়ীর শাপলা কিন্ডার গার্টেনের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী রুদশী আক্তার (৭) ও পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার পাইসকা গ্রামের জবানুর রহমানের মেয়ে পঞ্চাশী কেএলপি প্রিকেডেট স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল জয়া (১০)। তাদের মধ্যে জান্নাতুল ও রুদশী সম্পর্কে খালাত বোন।
মৃত জান্নাতুলের মামা মাসুদ রানা, তার দুই ভাগ্নিসহ আওনা ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের ১০-১২ জন ছাত্র-ছাত্রী ২৫ জুলাই সকালে একটি নৌকা নিয়ে স্থানীয় মৌলভীর বাজার সংলগ্ন নিকাই বিলে বন্যার পানিতে বেড়াতে যায়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আকস্মিক তাদের নৌকার তলা ছিদ্র দিয়ে পানি উঠতে থাকে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ভয় পেয়ে যায় এবং তাদের নড়াচড়াতে নৌকাটি উল্টে ডুবে যায়। এতে ওই নৌকার সবাই পানিতে ডুবে যায়। এ দৃশ্য দেখে স্থানীয়রা সেখান থেকে ছয়জনকে উদ্ধার করতে পারলেও পাঁচজন ছাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ ঘটনায় আহতরা হলো, মাসুদ রানা, রোজিনা, রিয়া, লিমন, সুজন, রিমি, তন্ময়। তাদের কে স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
পরে গ্রামবাসীরা মৃত ছাত্রীদের লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় শাবান মন্ডলের বাড়ির সামনে জড়ো করেন। নৌকাডুবিতে মৃত্যুর ঘটনা জানাজানি হলে হাজার হাজার মানুষ তাদেরকে দেখতে সেখানে ভিড় করেন।
আওনা ইউনিয়নের চেয়াম্যান বেলাল উদ্দিন বলেন, নিকাই বিলের মাঝামাঝি নৌকাটি ডুবে যায়। সেখানে পানির গভীরতা অনেক। পাঁচজন মেয়ে ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। আর ছয়জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তারা সামান্য অসুস্থ হয়ে পড়েছে। যারা মারা গেছে তাদের কেউই সাঁতার জানতো না। মর্মান্তিক এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের স্বজনদের মাঝে শোকের মাতম চলছে।
এদিকে খবর পেয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দি তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ মোহাব্বত কবীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মৃত পাঁচজনের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাদের সুরতহাল লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হবে। লাশের স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিনাময়নাতদন্তে পাঁচজনের লাশ তাদের পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।