বকশীগঞ্জে ত্রাণের জন্য ছুটছে বানভাসি মানুুষ, পানি কমলেও বেড়েছে দুর্ভোগ

বকশীগঞ্জে ভয়াবহ বন্যায় ত্রাণের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই এভাবেই ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করেন বানভাসি মানুষ। ছবিটি সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কুতুবের চর গ্রাম থেকে তোলা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বন্যা পানি কিছুটা কমলেও বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। সব এলাকার বানভাসি মানুষ এখনও পর্যাপ্ত ত্রাণ না সামগ্রী দেওয়ায় মানুষের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়েছে। কোনো নৌকা দেখলেই মানুষ ত্রাণের নৌকা মনে করে এগিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই ত্রাণ পায় আবার অনেকেই ত্রাণ পান না। ফলে ত্রাণ না পেয়ে মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ত্রাণ সংকট থাকায় বানভাসি মানুষের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রাণ দিতে পারছেন না উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও যমুনা নদীতে এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। মানুষের মধ্যে রোগ বালাই চেপে ধরেছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরি হওয়ায় প্রতিদিন ডায়রিয়া, আমাশয় ও পানিবাহিত রোগ বেড়েই যাচ্ছেই। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে। ঘর বাড়িতে বন্যার পানি উঠে আবার সে পানি নেমে যাওয়ায় দুর্গন্ধ শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলায় এবারের ভয়াবহ বন্যায় ১৯৮৮ সালের বন্যার রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এবার একটি পৌরসভাসহ সাতটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। বন্যায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়। বন্যায় সাধুরপাড়া, মেরুরচর, বগারচর, নিলক্ষিয়া ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিশেষ করে সাধুরপাড়া, মেরুরচর ও বগারচর ইউনিয়নে লন্ডভন্ড হয়েছে কাঁচা ও পাকা রাস্তা। নষ্ট হয়েছে শত শত হেক্টর জমির ফসল। বন্যার পানি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৪ হাজার ৭৫০টি গবাদিপশু বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। ভয়াবহ বন্যায় বকশীগঞ্জ উপজেলার ৭ ইউনিয়নের ১৪ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। এরমধ্যে পানিতে ডুবে মারা গেছে ১০ জন শিশুসহ ১৩ জন। একজন মারা গেছে সাপের দংশনে।

বকশীগঞ্জে ভয়াবহ বন্যায় ত্রাণের সংকট দেখা দিয়েছে। ত্রাণ বিতরণের সময় তাই এভাবেই সাঁতরে নৌকা পর্যন্ত গিয়ে ত্রাণ নিচ্ছে শিশুটি। ছবিটি সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কুতুবের চর গ্রাম থেকে তোলা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

বন্যার পানি কমলেও বন্যার্ত এলাকায় ত্রাণের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। নৌকা দেখলেই ত্রাণের আশায় ছুটছে মানুষ। এবারের বন্যায় উপজেলা প্রশাসনের হিসাবে এক লাখ মানুষ বন্যা আক্রান্ত হলেও তাদের পক্ষ থেকে ১২ হাজার মানুষকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বাকি প্রায় ৯০ হাজার মানুষ এখনো ত্রাণ বিতরণের বাইরে রয়েছেন। বিশেষ করে আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে অবস্থান নেয়া মানুষের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

কয়েকজন চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার যে বন্যা হয়েছে তাতে আশানুরূপ ত্রাণ পাওয়া যায় নি। ফলে কিছু মানুষের খাবারের ব্যবস্থা হলেও অধিকাংশ মানুষের কাছে যেতে পারেন নি তারা। সাধুরপাড়া, মেরুরচর ও বগারচর ইউনিয়নের শতভাগ গ্রাম প্লাবিত হলেও সব এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করা সম্ভব হয় নি। তবে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অনেকেই বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা দেওয়ান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, বন্যার্তদের মাঝে এখন পযন্ত ৯০ মেট্রিক টন চাল, দুই হাজার ১৯০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

sarkar furniture Ad
Green House Ad