ইসলামপুরে যমুনার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি

ইসলামপুরে যমুনার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুর ইসলামপুর উপজেলায় বন্যার পানি বাড়ার শুরুতেই সাপধরী ইউনিয়নের চরশিশুয়া থেকে চেঙ্গানিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার যমুনা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে করে এ বছর বর্ষা মৌসুমে যমুনা গর্ভে বিলীন হকে যাচ্ছে সাপধরী জনপদ।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, সাপধরী ইউনিয়নের ঘনবসতিপূর্ণ ২০টি গ্রামই আশির দশকে সড়ক পথে ইসলামপুর উপজেলা শহরের সাথে সংযুক্ত ছিল। সে সময় ওই চরের কৃষি নির্ভর মানুষগুলো খুবই সুখি ও সমৃদ্ধশালী ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সাপধরী ইউনিয়নের মানুষগুলোর সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আশির দশক থেকে অধ্যবদি পর্যন্ত সময়ে এলাকাটি দুই দফা যমুনা নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। ইসলামপুরের সাপধরী ইউনিয়নের প্রজাপতি থেকে চরশিশুয়া হয়ে চেঙ্গানিয়া পর্যন্ত এলাকায় আশির দশকে বর্ষা মৌসুমে যমুনার বামতীরে ভয়াবহ নদী ভাঙন শুরু হয়। এরপর কয়েক বছরের অব্যাহত নদী ভাঙনে এলাকাটি সম্পূর্ণরূপে যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সেই সময় থেকেই এলাকাটি উপজেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ওই সময় নদী ভাঙনকবলিত মানুষেরা ঘরবাড়ি ভেঙ্গে আশ পাশের গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেন। আবার কেউ নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর বন্দরে চলে যান। অনেকেই যমুনার পেটে জেগে উঠা সাপধরী ইউনিয়নের অন্য ছোট ছোট চরে বসতি গড়ে কষ্টের জীবন ধারনে বাধ্য হন।

পরবর্তীতে ২০০১ সালে সাপধরী ইউনিয়নের সিংহভাগ ভুমি যমুনার পেট থেকে জেগে বসতি স্থাপনসহ চাষাবাদের উপযোগী হয়ে উঠে। আবারো শুরু হয় বসতি স্থাপনসহ কৃষি আবাদ। কিন্তু সুখের জীবন শুরু হলেও সুখটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সম্প্রতি আবারো শুরু হয়েছে নদী ভাঙন।

ইসলামপুরের সাপধরী ইউনিয়নের মন্ডলপাড়া গ্রামের পারভিন আক্তার, চরশিশুয়া গ্রামের ওয়াদুদ আলী জানান, আশির দশকের পর যমুনার পেটে জেগে উঠা ছোট ছোট চরগুলো একত্রিত হয়ে ২০০১ সালে বিশাল উঁচু চরে রূপান্তরিত হয়। এতে সাপধরী ইউনিয়নের সিংহভাগ ভূমি বসতি স্থাপন ও চাষের উপযোগী হয়ে উঠে। তখন থেকেই এখানে আবারো শুরু হয় নতুন করে বসতি স্থাপন। বিগতদিনে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে এলাকা ছাড়া মানুষগুলো আবারো এলাকায় ফিরে আসে। এখানে আবারো গড়ে উঠে ঘনবসতি। নতুন চরেই ফের শুরু হয় তাদের কৃষি নির্ভর সুখের জীবন। এভাবেই কেটে যায় প্রায় ২০টি বছর। কিন্তু বিধি বাম। সম্প্রতি এই এলাকাটিতে আবারো শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। ফের নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। এবার যমুনা নদী এখানে পশ্চিম তীর ভেঙ্গে গভীর হয়ে পশ্চিম দিকেই সরে যাচ্ছে। হয়তো আবারো এখানেই টানা ২০ বছর যমুনার স্রোত উজান থেকে ভাটিতে প্রবাহিত হবে।

ইসলামপুরের চরশিশুয়া গ্রামের বাসিন্দা মজনু মন্ডল বলেন, আগে শুনেছি নদীর এই কুল ভাঙ্গে ওই কুল গড়ে। আর এখন দেখি নদীর দুই কুলই ভাঙ্গে। যমুনা নদীর ভাঙ্গা গড়ার সাথে যুদ্ধ করেই তার বাপ দাদাও এক চর থেকে পাশর্^বর্তী আরেক চরে বসবাস করেছেন। এভাবেই যুগযুগ ধরে সুখে দুঃখে আবর্তীত হচ্ছে ইসলামপুরের সাপধরী ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের নদীভাঙ্গা অসহায় মানুষগুলোর জীবনযাত্রা।