ভাষাসৈনিক সৈয়দ আব্দুস সোবহানের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা

সৈয়দ আব্দুস সোবহান (১৯৩২-২০০০)

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক :
মানুষের জীবন পৃথিবীতে ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু তার র্কম অবিনশ্বর। কৃতী মানুষদের কীর্তি সব সময় অম্লান থাকে, চির জাগরুক থাকে তার অগনতি ভক্ত ও পরর্বতী প্রজন্মের কাছে। তেমনি একজন সৈয়দ আব্দুস সোবহান জামালপুরের কৃতী সন্তান। ৫ জুলাই তার ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।

সৈয়দ আব্দুস সোবহান একইসাথে ভাষাসৈনিক, স্বাধীনতাসংগ্রামী, ত্যাগী রাজনীতিবিদ, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী ও বিশিষ্ট আইনজীবী। ছোটবেলা থেকেই রাজনীতিসচেতন এবং মানবকল্যাণে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর বড় ভাই সৈয়দ আব্দুস সাত্তার ও বিপ্লবী রবি নিয়োগীর কাছে তিনি রাজনৈতিক দীক্ষা নেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি পরিবারের চিন্তা না করে সব সময় বলতেন- ‘এ দেশের কি হবে? এ দেশের মানুষের কি হবে? এমন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য তো আমরা সংগ্রাম করিনি, আন্দোলন করিনি’। এমন দেশপ্রেমিক মানবদরদী নেতা বর্তমান সময়ে খুব কম দেখা যায়।

সৈয়দ আব্দুস সোবহান ইংরেজি ১৯৩২ সনের ১২ ডিসেম্বর, বাংলা ১৩৩৯ সনের ২৮ অগ্রহায়ণ শেরপুরের শেরী মিঞা বাড়ি মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম হয়। ৮ম শ্রেণিতে পড়াকালীন এক সমাবেশে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে প্রবন্ধ উপস্থাপন এবং পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে সত্যিকার স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি এমন মন্তব্য করায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেলখানায় তাদের অমানবিক নির্যাতন করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করে। তাঁর বড় ভাই সৈয়দ আব্দুস সাত্তার (প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক) ও বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা রবি নিয়োগীর সংস্পর্শে রাজনৈতিক চেতনায় ঋদ্ধ হন। রবি নিয়োগীর রাজনৈতিক দর্শন, দেশ ও মানুষের প্রতি ভাবনা কিশোর আব্দুস সোবহানকে আলোড়িত করেছিল।

সৈয়দ আব্দুস সোবহান ১৯৫২ সালে আশেক মাহমুদ কলেজ ছাত্রসংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জামালপুরের ভাষাআন্দোলনে তিনি প্রথম সারির ভাষাসৈনিক ও সংগঠক। ১৯৬৪ সনে জামালপুর পৌরসভার কমিশনার পদে নির্বাচিত হন। তিনি ‘কপ’ প্রাথী হিসেবে জামালপুর সদর থেকে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধে তাঁর রাজনৈতিক গুরু বিপ্লবী রবি নিয়োগীর সাথে ভারতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত গড়ে তুলেন ও অনুপ্রেরণামূলক তেজস্বী বক্তব্য পেশ করেন। ১৯৭২ সনে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগদান করেন এবং ১৯৭৩ সনে ন্যাপপ্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সনে বাকশাল গঠিত হলে তিনি সম্পাকমন্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সনে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন নেমে আসলে তিনি আত্মগোপন করেন। ১৯৭৬ সনের ৪ মার্চে তিনি গ্রেপ্তার হন।

সৈয়দ আব্দুস সোবহান ১৯৭৯ সনে জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সনে তার ব্রেইন স্ট্রোক হয়। শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় সন্তানদের প্রবল আপত্তির পরিপ্র্রেক্ষিতে তিনি আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন নাই। অসুস্থতার জন্য শেষ দিকে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

রেনাল কেয়ার সেন্টারে ২০০০ সালের ৫ জুলাই ফজরের আযানের সময় সৈয়দ আব্দুস সোবহান শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রীসহ পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে রেখে যান। মৃত্যুর পর সৈয়দ আব্দুস সোবহানের মরদেহ জামালপুরে নিয়ে আসা হয়। জামালপুরে জানাজার পর বেলটিয়ার পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মা’র কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

ভাষাসৈনিক ও স্বাধীনতাসংগ্রামী সৈয়দ আব্দুস সোবহান ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক, মানবদরদী, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী মুক্ত মনের মানুষ। তিনি দেশ ও সমাজের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। শৈশবকালেই স্বাধীনতার জন্য কারাগারে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। দেশ ও সমাজের জন্য তার এ সংগ্রাম জামালপুরবাসীসহ সকল দেশবাসী শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। এ মহান ভাষাসৈনিক ও দেশপ্রেমিককে জানাই শত-সহস্র সালাম। আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসীব করেন এই প্রার্থনা করি। – সংগৃহীত

sarkar furniture Ad
Green House Ad