
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম
বিরোধপূর্ণ জমি পাইয়ে দিতে ভাড়াটে ধর্ষককে দিয়ে স্বামী পরিত্যক্তা এক নারীকে ধর্ষণ করিয়েছেন। সেই ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করিয়ে ফেঁসে গেছেন এক আইনজীবী সহকারী (মহুরি) মো. খোশ নবী। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নে। পুলিশ ২৮ জুন ভোর রাতে ওই ভাড়াটে ধর্ষক মো. ফজলকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে এবং ঘটনার মূল হোতা আইনজীবী সহকারী মো. খোশ নবীকে জামালপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে।
ধর্ষণ মামলার তদন্তে এবং মামলাটির বাদী স্বামী পরিত্যক্তা ওই নারীর দেওয়া আদালতের জবানবন্দিতে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জামালপুরের পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন বিপিএম ২৮ জুন সকালে তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান।
পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের জানান, মেলান্দহের ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের বংশী বেলতৈল গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা এক নারীর সাথে প্রতিবেশী চাচাত ভাই মো. নূর নবীর সাড়ে ৭ কড়া জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। সেই বিরোধের জের ধরে ওই নারী জামালপুরের আইনজীবী সহকারী খোশ নবীর সহায়তায় নূর নবীসহ কয়েকজনকে বিবাদী করে জামালপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার আসামিরা আদালতে মুচলেকা দিয়ে এলাকায় ফিরে যান। পরে বিবাদী ও তার লোকজনদের হয়রানি করার অসৎ উদ্দেশে ওই নারীকে দিয়ে মেলান্দহ থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়েরের নাটক সাজান খোশ নবী। খোশ নবী মেলান্দহ উপজেলার ফুলকোচা ইউনিয়নের তেলীপাড়া গ্রামের মৃত চান মিয়ার ছেলে।
ঘটনাটি ঘটে গত ২৫ মে রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে। ওইদিন খোশ নবী তার পরিচিত মেলান্দহ উপজেলার ফুলকোচা ইউনিয়নের রেখিরপাড়া গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছেলে ফজলকে (৪৫) ভাড়া করে স্থানীয় বেলতৈল দাখিল মাদরাসায় নিয়ে যান। জমি পাওয়ার আশায় খোশ নবীর প্ররোচণায় পড়ে ওই নারীও সেখানে যান। এ সময় খোশ নবী পাহারা দেন এবং ভাড়াটে ধর্ষক ফজল তখন ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। ওই রাতে তারা দু’জন একটি রিকশাযোগে ওই নারীকে স্থানীয় কোনামালঞ্চ বেপারিপাড়ায় জনৈক এক ব্যক্তির বাড়িতে রেখে যান। ধর্ষণ মামলার এজাহারে ঘটনার বর্ণনা কিভাবে দিতে হবে তাও ওই নারীকে শিখিয়ে দেন তারা।
পরের দিন ২৬ মে খোশ নবী ওই নারীকে ধর্ষণের শিকার রোগী হিসেবে জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। ওই নারী টানা চারদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে খোশ নবী ওই নারীকে বাদী করে তার চাচাত ভাই নূর নবী ও ভগ্নিপতি ছাইরুল ইসলামসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও দু’জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১)/৩০ ধারায় ৩০ মে মেলান্দহ থানায় একটি ধর্ষণের মামলা দায়ের করান। শুধু মামলাই করাননি। বাদীনীকে ধর্ষণের অভিযোগ জোরালো করতে খোশ নবী ওই নারীকে নিয়ে কতিপয় সাংবাদিক ও নারী অধিকার আন্দোলকারী নেত্রীর কাছেও নিয়ে যান। এরজন্য খোশ নবী ওই নারীর কাছ থেকে ২২ হাজার টাকাও নিয়েছেন মামলার খরচ পরিচালনার জন্য।

পুলিশ সুপার আরও জানান, আলোচিত এই মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মেলান্দহ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মজিদ তদন্তকালে মামলার বাদী ওই নারীর সাথে কথা বলে খোশ নবীর প্ররোচণায় এ ধর্ষণ নাটকের প্রকৃত তথ্য উদঘাটিত হয়। ওই নারী খোশ নবীর প্ররোচণায় ভাড়াটে ফজল কর্তৃক ধর্ষণের শিকারের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারা মতে স্বেচ্ছায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
আদালতে দেওয়া ওই জবানবন্দি পর্যালোচনা করে প্রথমে ঘটনার মূল হোতা আইনজীবী সহকারী খোশ নবীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে ২৮ জুন ভোর রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন জামতলী এলাকা থেকে ভাড়াটে ধর্ষক ফজলকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাজানো ধর্ষণের ঘটনায় খোশ নবী ও ভাড়াটে ধর্ষক ফজলকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মেলান্দহ থানায় মামলা দায়েরের পর আসামিদের আদালতে হাজির করা হবে বলে পুলিশ সুপার জানান।
এ সময় জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ বাছির উদ্দিন, মাদারগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সামিউল আলম পিপিএম, জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালেমুজ্জামান, মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল ইসলাম খান, মেলান্দহ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মজিদ উপস্থিত ছিলেন। এতে জামালপুর জেলায় কর্মরত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইন সংবাদপত্রের সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।