নকলায় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতন, গর্ভের সন্তান নষ্ট, গ্রেপ্তার ১

নকলায় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। ছবি : ভিডিও থেকে নেয়া

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

শেরপুরের নকলা উপজেলায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ডলি খানম (২২) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে গাছে বেঁধে বর্বরোচিত নির্যাতন এবং ওই নির্যাতনে গৃহবধূর গর্ভের সন্তান নষ্টের ঘটনা ঘটেছে। ১০ জুন রাতে নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ফাঁস হওয়ায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। ডলি খানম পৌর শহরের কায়দা এলাকার কৃষক শফিউল্লাহ’র স্ত্রী ও স্থানীয় চন্দ্রকোনা কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।

জানা যায়, নকলা পৌর শহর সংলগ্ন কায়দা গ্রামের মৃত হাতেম আলীর ছেলে শফিউল্লাহ’র সাথে একখন্ড জমি নিয়ে সহোদর বড় ভাই আবু সালেহ, নেছার উদ্দিন ও সলিম উল্লাহ’র বিরোধ মোকদ্দমা চলে আসছিল। এর জের ধরে গত ১০ জুন সকালে স্থানীয় কবরস্থান সংলগ্ন শফিউল্লাহ’র দখলীয় জমির ইরি- বোরো ধান আবু সালেহ ও তার লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে কাটতে গেলে শফিউল্লাহ বাধা দেয়। কিন্তু প্রতিপক্ষের ধাওয়ায় পিছু হটে নকলা থানায় ছুটে যায় সে। ততক্ষণে আবু সালেহ’র নেতৃত্বে একদল লোক ধান কাটতে শুরু করলে শফিউল্লাহ’র ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ডলি খানম বাধা দিতে যান। এসময় সলিম উল্লাহ ও লাখী আক্তারসহ অন্যান্যরা তাকে ঘেরাও করে চোখে-মুখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দেন ও টানা-হেঁচড়া করে পাশের ক্ষেতের আইলে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে ইউক্যালিপটাস গাছের সাথে দুই হাত বাঁধে ও অন্য আরেকটি গাছের সাথে টানা দিয়ে দুই পা বাঁধে। এরপর যৌনাঙ্গসহ পেট, বুক ও পিঠে উপুর্যপরি কিল-ঘুঁষি-লাথির আঘাতে তাকে নির্মমভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। এ নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ধারণ করে লাখী আক্তার।

পরে থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় ডলি খানমকে উদ্ধার করে ও নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত আবু সালেহ ও তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী লাখী আক্তারকে আটক করে। পরে দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়।

এদিকে নির্যাতনের শিকার ডলি খানমের রক্তক্ষরণ শুরু হলে তাকে ১৬ মে পর্যন্ত চিকিৎসা দেওয়ার পর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ২২ মে পর্যন্ত তার চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডলি খানমের অকাল গর্ভপাত হয়েছে বলে শনাক্ত করেন চিকিৎসকরা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. বিল্লাল হোসেন জানান, গৃহবধূকে নির্যাতনের বিষয়ে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি যদি আমাদের আগে দেখাত বা এমনভাবে নির্যাতন করা হয়েছে যদি জানতে পারতাম তাহলে আমরা আগেই ব্যবস্থা নিতাম। তবে ১১ জুন রাতে ডলি খানম বাদী হয়ে নকলা থানায় নয়জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করলে সকালে নাসিমা নামের একজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। তবে গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

sarkar furniture Ad
Green House Ad