মাদারগঞ্জ হাসপাতালের রোগীদের খাবার সরবরাহে ব্যাপক অনিয়ম

পরিদর্শনকালে রোগীদের নোংরা বিছানা দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন সংসদ সদস্য মির্জা আজম। ছবি : আলী আকবর

আলী আকবর, নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত জামালপুরের মাদারগঞ্জ হাসপাতাল যেন নিজেই রোগীতে পরিণত হয়েছে! উপজেলা প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের রোগীদের নিম্নমানের খাবার বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

২৫ মে সকালে মাদারগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমিটির সভার পূর্বে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পরিদর্শন করার সময় অব্যবস্থাপনার চিত্র দেখেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমিটির সভাপতি, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম।

পরিদর্শনের সময় ডিজিটাল হাজিরা রেকর্ডে ডাক্তারদের উপস্থিতির সময় রেকর্ড হলেও অজ্ঞাত কারণে প্রস্থানের সময়ের কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে হাজিরা দিয়ে সরকারি চিকিৎসকরা প্রায় সবাই প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখার অভিযোগও মিলে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিকৃত চিকিৎসাধীন রোগীদের অভিযোগে জানা যায়, নিম্নমানের খাবার নিতে অস্বীকার করলেও ঠিকাদারের লোকজন তাদের নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে ঐসব খাবার জোরপুর্বক দিয়ে চলে যায়।

২৫ মে হাসপাতালে ভর্তি খাতায় রোগী ছিলো ২২ জন অথচ এই ২২ জন রোগীর দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য রান্না করা হয়েছে দুটি দেশি মুরগি ও ১০০ গ্রাম মুসুরের ডাল। এছাড়া দীর্ঘদিনের পুরাতন ফোম মেট্রেস, চাদর ও বালিশে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

এসব অব্যবস্থাপনা দেখে সভায় সংসদ সদস্য মির্জা আজম হাসপাতালের খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদার আবু সাঈদ সেবুকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতির নিদের্শ দেন। এছাড়া সরকারি চিকিৎসকদের মধ্যে প্রাইভেট ক্লিনিকে সময় দেওয়া উপজেলা চিকিৎসকা কর্মকর্তা চিকিৎসক জেড এ কাদিরকে এবং অন্ত:বিভাগ স্টোররুমের দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ সেবিকা রোজিনা আক্তারকে অন্যত্র বদলির সুপারিশ করা হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সম্প্রতি জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহে শুধু একটি শোভাযাত্রা করে লক্ষাধিক টাকার বিল-ভাউচার উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে পাঠিয়েছেন পরিসংখ্যানবিদ মোশাররফ হোসেন। এ বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরির জন্য পুষ্টি সপ্তাহের কর্মসূচির অনুলিপি চাইলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম মাসুম কর্মসূচির অনুলিপি পরিসংখ্যানবিদ মোশাররফ হোসেনের কাছ থেকে নেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। অথচ মোশাররফ হোসেন এই প্রতিবেদককে ওই কর্মসূচির অনুলিপি না দিয়ে বলেন, কর্মসূচির অনুলিপি আপনাকে দিবো না; এ কথা আপনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জনসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষকেও জানাতে পারেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কমিটির সদস্য ও মাদারগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মাজহারুল ইসলাম মাসুম জানান, ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয়ও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

৩০ মে পর্যন্ত মাদারগঞ্জ পৌরসভাকে হাসপাতালের রোগীদের খাবার সরবরাহ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং রোগীদের বিছানার নতুন ফোম মেট্রেস ও চাদর-বালিশ দেওয়া হবে ।