বাংলারচিঠি ডটকম ডেস্ক॥
অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা সাদমান ইসলাম ও সাকিব আল হাসানের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের প্রথম দিন শেষে ৫ উইকেটে ২৫৯ রান করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। সাদমান ৭৬ রানে ফিরলেও দিন শেষে ৫৫ রানে অপরাজিত সাকিব।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৩০ নভেম্বর সকালে টস ভাগ্যে জিতে বাংলাদেশ। সাথে সাথে ইতিহাসের পাতায় ঠাই করে নেয় টাইগাররা। আর সেটি হয়েছে একাদশের কারনে। কারন সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের একাদশে কোন পেস বোলঅরকে রাখেনি বাংলাদেশ। অর্থাৎ ছয় ব্যাটসম্যান, একজন করে উইকেটরক্ষক ও অলরাউন্ডার এবং তিনজন স্পিনার দিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। এমন একাদশ দেখে চোখ যখন কপালে, তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস দেন সাবেক অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম। বুড়ো আঙ্গুলে ব্যাথা পাওয়ায় ঢাকা টেস্টে তার খেলা নিয়ে সংশয় ছিলো। তবে একাদশে নাম তুলেছেন তিনি, সাথে লিটন দাসকে নিয়ে। কারন একাদশে শুধুই ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন মুশফিক। উইকেটের পেছনের দায়িত্বটা পালন করতেই রাখা হয়েছে লিটনকে। এসবের মাঝে দেশের ৯৪তম খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট অভিষেক ঘটে ২৩ বছর বয়সী বাঁ-হাতি সাদমান ইসলামের।
তাই আরেক বাঁ-হাতি সৌম্য সরকারকে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসের সূচনা করেন সাদমান। ইনিংসের প্রথম ওভারে বাউন্ডারি দিয়ে নিজের ও দলের রানের খাতা খোলেন সাদমান। তবে এরপর অনেক বেশি সর্তক হয়ে পড়েন সাদমান ও সৌম্য। তাই দ্বিতীয় বাউন্ডারির জন্য ১৩তম ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় বাংলাদেশ। এবারও বাউন্ডারি এসেছে সাদমানের ব্যাট থেকে। ঐ ওভারে আরও একবার বলকে বাউন্ডারির স্পর্শও দিয়েছেন সাদমান। ফলে ১৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৪২ রান।
কিন্তু ১৬তম ওভারে বাংলাদেশের দুই ওপেনারকে বিচ্ছিন্ন করে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অফ-স্পিনার রোস্টন চেজ। চেজের বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়ে নিজেদের ইনিংসের সমাপ্তি টানেন ৪২ বলে ১৯ রান করা সৌম্য। চট্টগ্রাম টেস্টে তার রান ছিল যথাক্রমে শুন্য ও ১১।
দলীয় ৪২ রানে সৌম্য ফিরে যাবার পর ক্রিজে আসেন ফর্মের তুঙ্গে থাকা মোমিনুল হক। জিম্বাবুয়ে বিপক্ষে ঢাকায় ও চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা মোমিনুল এবারও বড় ইনিংস খেলার প্রত্যাশায় ছিলেন। তাই বেশ দেখেশুনেই খেলতে থাকেন মোমিনুল। মুখোমুখি হওয়া ২২তম বলে প্রথম বাউন্ডারির স্বাদ নেন মোমিনুল। দ্বিতীয় বাউন্ডারির জন্যও বেশ খানিকক্ষণ অপেক্ষা করেন তিনি। কিন্তু ঐ বাউন্ডারির কিছুক্ষণবাদে হতাশাজনক এক শট খেলে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন মোমিনুল। ক্যারিবিয় পেসার কেমার রোচের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন মোমিনুল। সেটি তালুবন্দি করতে মোটেও সমস্যা হয়নি চেজের । ২টি চারে ৪৬ বলে ২৯ রান করেন তিনি।
মধ্যাহ্ন-বিরতির কিছুক্ষণ আগে মোমিনুল যখন ফিরেন তখন দলের রান ৮৭। এ অবস্থায় দলের হাল ধরেন সাদমান ও মোহাম্মদ মিথুন। দু’জনে মিলে দলের রানের চাকা সচল রেখেছিলেন। এরমাঝে নিজের অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসেই হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন সাদমান। ৪৩তম ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি দিয়ে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাদমান।
হাফ-সেঞ্চুরির পরও নিজের ইনিংসটি বড় করছিলেন সাদমান। কিন্তু দলের দেড়শ রানের পরই ধৈর্য্যহীন হয়ে পড়ে মিথুন। লেগ-স্পিনার দেবেন্দ্র বিশুর গুগলি ডেলিভারিটি উইকেট থেকে সড়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন মিথুন। মোমিনুলের মত মিথুনও করেন ২৯ রান। ৬১ বলের ইনিংসে কোন বাউন্ডারি মারতে পারেননি তিনি। সাদমানের সাথে ৬৪ রানের জুটি গড়েন মিথুন। যা আজকের দিনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি।
মিথুনের বিদায়ের কিছুক্ষণ পরই বিদায় নেন সাদমানও। বিশুর দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লু হন তিনি। ৬টি চারে ১৯৯ বলে ৭৬ রান করেন সাদমান।
এরপর অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সাথে জুটি গড়ে দলকে সামনে এগিয়ে নেওয়া দায়িত্ব পান মুশফিক। কিন্তু নিজের নামের প্রতি এবার সুবিচার করতে পারেননি তিনি। ১৪ রান করেন তিনি। ১৪ রানের ছোট ইনিংসটি খেলার পথে টেস্ট ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৪’হাজার রান পূর্ণ করেন মুশফিক।
৬৮তম ওভারে ও দলীয় ১৯০ রানে মুশফিক ফিরে যাবার পর দিনের বাকী সময় ভালোভাবে শেষ করার দায়িত্ব বর্তায় অধিনায়ক সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের উপর। দিনের বাকী সময় আর কোন বিপদ ঘটতে দেননি তারা। দিন শেষে অবিচ্ছিন্ন ৬৯ রানের জুটি গড়েন মাহমুদুল্লাহ-সাকিব ।
সাকিব টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৪তম ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে ৫৫ রানে অপরাজিত আছেন । ৩১ রানে অপরাজিত আছেন মাহমুুদুল্লাহ। দু’জনই ১টি করে চার মারেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেবেন্দ্র বিশু ২টি এবং কেমার রোচ-রোস্টন চেজ-শিরমন লুইস ১টি করে উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস :
সাদমান ইসলাম এলবিডব্লু ব বিশু ৭৬
সৌম্য সরকার ক হোপ ব চেজ ১৯
মোমিনুল হক ক চেজ ব রোচ ২৯
মোহাম্মদ মিথুন বোল্ড ব বিশু ২৯
সাকিব আল হাসান অপরাজিত ৫৫
মুশফিকুর রহিম বোল্ড ব লুইস ১৪
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অপরাজিত ৩১
অতিরিক্ত (লে বা-২, নো-৪) ৬
মোট (৫ উইকেট, ৯০ ওভার) ২৫৯
উইকেট পতন : ১/৪২ (সৌম্য), ২/৮৭ (মোমিনুল), ৩/১৫১ (মিথুন), ৪/১৬১ (সাদমান), ৫/১৯০ (মুশফিক)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং :
কেমার রোচ : ১৫-১-৩৮-১ (নো-১),
শিরমন লুইস : ১২-১-৩৫-১,
রোস্টন চেজ : ২১-০-৬১-১,
জোমেল ওয়ারিকান : ১৯-২-৪৬-০,
দেবেন্দ্র বিশু : ১৯-১-৬৯-২,
ক্রেইগ ব্রাফেট : ৪-০-৮-০ (নো-৩)।
সূত্র : বাসস