ঢাকা ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

এনজিও কর্মকর্তাকে অমানবিক নির্যাতন : ছেলেসহ যুব মহিলালীগের সভাপতি অনুপমা সূত্রধর গ্রেপ্তার

সরিষাবাড়ী : গ্রেপ্তার যুব মহিলালীগ নেত্রী অনুপমা সূত্রধর। : বাংলারচিঠিডটকম

 

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় এনজিও কর্মকর্তাকে হাত-পা, চোখ বেঁধে নির্যাতন ও ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি অনুপমা সূত্রধর ও তার ছেলে প্রিন্স আদিত্য সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ।

৬ সেপ্টেম্বর, শনিবার বিকালে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অনুপমা সূত্রধর পৌর এলাকার বীর ধানাটা গ্রামের প্রীতম চন্দ্র সরকার হিরণের স্ত্রী।

পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকে মাসের ৪ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার দুই লাখ টাকা ঋণ নেন উপজেলা যুব মহিলালীগের সভাপতি অনুপমা সূত্রধর। ৫ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার সকালে এনজিও কর্মকর্তা রনজিত চন্দ্র বর্মনকে বাসায় যেতে বলেন ওই নারী। এনজিও কর্মকর্তা ওই দিন সকালে তার বাসায় গেলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে অনুপমা সূত্রধর, তার ছেলে প্রিন্স আদিত্য সরকার, স্বামী প্রীতম চন্দ্র সরকার হিরণসহ আরও কয়েকজনে তাকে ঘরে নিয়ে আটকে দেন। এরপর হাত-পা, চোখ বেঁধে লোহার রড দিয়ে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে দেন।

এরপর এনজিও কর্মকর্তার কাছে অনুপমা সূত্রধর, তার ছেলে ও তার স্বামী ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অসম্মতি জানালে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ ও পায়ুপথে মরিচের গুঁড়ো ঢুকিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালান। জীবন রক্ষায় এনজিও কর্মকর্তা তার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে ব্যাংকের কয়েকটি চেক বইয়ের পাতা অনুপমা সূত্রধরের ছেলে প্রিন্স আদিত্য সরকারের কাছে দিতে বলেন। এরপর ব্যাংকের চেক বইয়ের পাতায় এনজিও কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিয়ে নেন।

এদিকে স্বামীকে না পেয়ে এনজিও কর্মকর্তার স্ত্রী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর থানা পুলিশ তাদের প্রযুক্তি সহায়তায় লোকেশন শনাক্ত করে সরিষাবাড়ী থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহাদাৎ হোসেনের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে এনজিও কর্মকর্তাকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনার সাথে জড়িত অনুপমা সূত্রধর ও তার ছেলে প্রিন্স আদিত্য সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ ব্যাপারে এনজিও কর্মকর্তা রনজিত চন্দ্র বর্মন সাংবাদিকদের বলেন, অনুপমা সূত্রধর এর আগেও ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকে ঋণ নেন। তবে তার লেনদেন নিয়মিত ছিল না। তবুও তাকে চলতি মাসে দুই লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। আমাকে ফাঁসানোর জন্য তিনি ছলনা করে ৫ সেপ্টেম্বর সকালে বাসায় ডেকে নেন। এরপর বাসার রুমে ঢুকিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তারা। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায়  অনুপমা সূত্রধর, তার স্বামী, ছেলে ও আরো একজনে মিলে আমাকে অমানবিক নির্যাতন করেন। এ ঘটনার ন্যায় বিচার দাবি করছি।

অভিযোগ অস্বীকার করে আটক অনুপমা সূত্রধর এ প্রতিবেদককে বলেন, ঋণ নেয়ার আগে ও পরে এনজিও কর্মকর্তা রনজিত চন্দ্র বর্মন আমাকে মোবাইল ফোনে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে পরবর্তীতে আর কখনো ঋণ দিবেন না বলেও জানান তিনি। কেন বার বার ফোন দিয়ে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয় সেই বিষয়টি জানার জন্যই তাকে বাসায় ডেকে আনা হয়েছিল।

সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল হাসান এ প্রতিবেদককে বলেন, উপজেলা ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার রনজিত চন্দ্র বর্মনকে বাসায় ডেকে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। এ ঘটনার সাথে জড়িত অনুপমা সূত্রধর ও তার ছেলে প্রিন্স আদিত্য সরকারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

গরুচুরির অপবাদে ট্রাকচালককে পিটিয়ে হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

এনজিও কর্মকর্তাকে অমানবিক নির্যাতন : ছেলেসহ যুব মহিলালীগের সভাপতি অনুপমা সূত্রধর গ্রেপ্তার

আপডেট সময় ০১:২৯:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় এনজিও কর্মকর্তাকে হাত-পা, চোখ বেঁধে নির্যাতন ও ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি অনুপমা সূত্রধর ও তার ছেলে প্রিন্স আদিত্য সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ।

৬ সেপ্টেম্বর, শনিবার বিকালে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অনুপমা সূত্রধর পৌর এলাকার বীর ধানাটা গ্রামের প্রীতম চন্দ্র সরকার হিরণের স্ত্রী।

পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকে মাসের ৪ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার দুই লাখ টাকা ঋণ নেন উপজেলা যুব মহিলালীগের সভাপতি অনুপমা সূত্রধর। ৫ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার সকালে এনজিও কর্মকর্তা রনজিত চন্দ্র বর্মনকে বাসায় যেতে বলেন ওই নারী। এনজিও কর্মকর্তা ওই দিন সকালে তার বাসায় গেলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে অনুপমা সূত্রধর, তার ছেলে প্রিন্স আদিত্য সরকার, স্বামী প্রীতম চন্দ্র সরকার হিরণসহ আরও কয়েকজনে তাকে ঘরে নিয়ে আটকে দেন। এরপর হাত-পা, চোখ বেঁধে লোহার রড দিয়ে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে দেন।

এরপর এনজিও কর্মকর্তার কাছে অনুপমা সূত্রধর, তার ছেলে ও তার স্বামী ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অসম্মতি জানালে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ ও পায়ুপথে মরিচের গুঁড়ো ঢুকিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালান। জীবন রক্ষায় এনজিও কর্মকর্তা তার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে ব্যাংকের কয়েকটি চেক বইয়ের পাতা অনুপমা সূত্রধরের ছেলে প্রিন্স আদিত্য সরকারের কাছে দিতে বলেন। এরপর ব্যাংকের চেক বইয়ের পাতায় এনজিও কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিয়ে নেন।

এদিকে স্বামীকে না পেয়ে এনজিও কর্মকর্তার স্ত্রী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর থানা পুলিশ তাদের প্রযুক্তি সহায়তায় লোকেশন শনাক্ত করে সরিষাবাড়ী থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহাদাৎ হোসেনের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে এনজিও কর্মকর্তাকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনার সাথে জড়িত অনুপমা সূত্রধর ও তার ছেলে প্রিন্স আদিত্য সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ ব্যাপারে এনজিও কর্মকর্তা রনজিত চন্দ্র বর্মন সাংবাদিকদের বলেন, অনুপমা সূত্রধর এর আগেও ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকে ঋণ নেন। তবে তার লেনদেন নিয়মিত ছিল না। তবুও তাকে চলতি মাসে দুই লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। আমাকে ফাঁসানোর জন্য তিনি ছলনা করে ৫ সেপ্টেম্বর সকালে বাসায় ডেকে নেন। এরপর বাসার রুমে ঢুকিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তারা। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায়  অনুপমা সূত্রধর, তার স্বামী, ছেলে ও আরো একজনে মিলে আমাকে অমানবিক নির্যাতন করেন। এ ঘটনার ন্যায় বিচার দাবি করছি।

অভিযোগ অস্বীকার করে আটক অনুপমা সূত্রধর এ প্রতিবেদককে বলেন, ঋণ নেয়ার আগে ও পরে এনজিও কর্মকর্তা রনজিত চন্দ্র বর্মন আমাকে মোবাইল ফোনে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে পরবর্তীতে আর কখনো ঋণ দিবেন না বলেও জানান তিনি। কেন বার বার ফোন দিয়ে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয় সেই বিষয়টি জানার জন্যই তাকে বাসায় ডেকে আনা হয়েছিল।

সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল হাসান এ প্রতিবেদককে বলেন, উপজেলা ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার রনজিত চন্দ্র বর্মনকে বাসায় ডেকে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। এ ঘটনার সাথে জড়িত অনুপমা সূত্রধর ও তার ছেলে প্রিন্স আদিত্য সরকারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।