বন্ধের দিন উধাও কেন্দুয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্র

জামালপুরের কেন্দুয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ভবন কে বা কারা ভেঙে নিয়ে গেছে। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

মাহমুদুল হাসান মুক্তা
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরে বন্ধের দিনে উধাও হয়ে গেছে কেন্দুয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের একটি পরিত্যক্ত ভবন। কে বা কারা এই ভবন ভেঙ্গে নিয়ে গেছে তা জানে না কেউই। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে স্থানীয় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম খানের নির্দেশে ভাঙ্গা হয়েছে এই ভবন।

জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়ন পরিষদের বিপরীত পাশে কেন্দুয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অবস্থান। এমন একটি জনবহুল জায়গা থেকে ২৯ মার্চ দুপুরে উধাও হয়ে গেছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিত্যক্ত একটি ভবন। আর কে এই ভবন ভেঙ্গেছে তা জানে না স্বাস্থ্য বিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দায়িত্বরতরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শত বছর বয়সী ২৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪ ফুট প্রস্থের এই ভবন ব্যবহৃত হতো দাতব্য চিকিৎসালয় হিসেবে। আর ভবনটিতে ছিল তিনটি কক্ষ।

৩১ মার্চ দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মূল ফটকের পরে হাতের বাম ও ডান পাশে পড়ে রয়েছে কিছু ইটসহ ভবনের ভাঙ্গা কিছু অংশ। এছাড়াও কেন্দুয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রাঙ্গণে দেখা গেছে সেই ভবনের কিছু রড ও একটি ভেকু গাড়ি। কে বা কারা কী কারণে এই ভবন ভেঙ্গেছে এমন প্রশ্নের উত্তর নেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মরতদের কাছে।

তবে কেন্দুয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. রিপন রায় বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) অফিস শেষ করে চলে যাই। এরপর শনিবার আবারো অফিসে আসলে দেখি যে পরিত্যক্ত ভবনটি কে বা কারা ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। পরে আমি বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই ও জামালপুর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি।’

স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশে বসবাসকারী খালেদা বেগম বলেন, ‘আমরা হাসপাতালের পাশে থাকি। শুক্রবার চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খানের লোকজন এসে বেলা ১১টার দিকে ভবন ভাঙ্গা শুরু করে। রাত একটা পর্যন্ত ভবন ভাঙ্গার কাজ চলে। আমার ছেলে জিজ্ঞেস করতে গেছে। আমার ছেলেকে আরো মারধর করতে আসছিলো তারা।’

স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাহিন বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খানের নির্দেশে তার ঘনিষ্ঠ সহকারী সাজু বুলডুজার ও ভেকু দিয়ে ভবনটি ভাঙ্গার কাজ করে। আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চাইলেও তারা তা দেখায়নি।’

ভবন ভাঙ্গার বিষয়ে কেন্দুয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলামের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই ভবনটি ভাঙ্গাতে আমরা সবাই খুশি। পরিত্যক্ত ভবন ছিল। শুক্রবার স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এটি ভাঙ্গা হয়। চেয়ারম্যান সাহেবের নির্দেশে লোকজন এসে এসব ভাঙ্গা চূড়া করে।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কেন্দুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম খান সোহেল বলেন, ‘এই ভবনটি এই এলাকার মাদক ব্যবসার একটি কারখানা ছিল। এই ভবনটি সড়ানোর জন্য আমি স্বাস্থ্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসনসহ সদর এমপি মহোদয়কে কয়েকবার অবগত করেছিলাম। কে এই ভবন ভেঙ্গেছে তা আমরা জানি না। ভবন ভাঙ্গার পর আমি ভবনের ভাঙ্গা চূড়ার অবশিষ্ট অংশটুকুর নিরাপত্তার জন্য বাজারের নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করেছি। আমার পরিষদের সামনে হলেও আমি জানি না কে ভেঙ্গেছে। ’

জামালপুর সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. উত্তম কুমার সরকার বলেন, ‘রবিবার (৩১ মার্চ) দুপুরের দিকে আমি ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। আর এই বিষয়ে জামালপুর সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর ভবনের যেটুকু অবশিষ্ট রয়েছে, সেটুকুর জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

এসব বিষয়ে জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মহব্বত কবির বলেন, ‘স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’