বিএডিসি’র শতাধিক গাছের ডাল কেটে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাত

বিএডিসি’র শতাধিক গাছের ডাল কেটে লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ক্যাশিয়ার মো. লোকমান হোসেনের বিরুদ্ধে। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (ক্ষুদ্র সেচ)-এর কার্যালয়ের নামে শতাধিক গাছের ডালপালা কাটা হয়েছে। অবৈধভাবে কাটা এসব ডালপালা লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ক্যাশিয়ার মো. লোকমান হোসেনের বিরুদ্ধে। তবে এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছে বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) মো. কায়সার আহমেদ মুন্সী।

সম্প্রতি জামালপুর শহরের ফুলবাড়িয়ায় বিএডিসি (ক্ষুদ্র সেচ)-এর কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটক থেকে শুরু করে কার্যালয়ের শেষ অংশের দেয়াল পর্যন্ত গাছ রয়েছে দেড় শতাধিক। এর মধ্যে মেহগনি, সেগুন, অর্জুন, আমসহ বিভিন্ন ফলজ গাছ রয়েছে। প্রায় প্রতিটি গাছের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত অধিকাংশ ডালপালা কাটা হয়েছে। কাটা ডালপালাগুলোর কোনো অংশ দেখা যায়নি পুরো কার্যালয় জুড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়- ফেব্রয়ারি মাসে ৪ থেকে ৫ জন শ্রমিক এই কার্যালয়ের গাছগুলোর ডালপালা কাটেন। সপ্তাহ জুড়ে শতাধিক গাছের ডালপালা কাটা হয়। আর এসব কাটা ডালপালা বিক্রি করা হয় কার্যালয়ের আশে পাশের প্রতিবেশীদের কাছে ও একটি করাত কলে (সমিলে)। সব মিলিয়ে প্রায় লক্ষাধিক টাকার ডালপালা বিক্রি করা হয়।

এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে গাছের ডালপালা কাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করা মিঠুনের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। মিঠুন বলেন, ‘বিএডিসি অফিসের ক্যাশিয়ার লোকমান হোসেনের নির্দেশে আমরা গাছের ডালপালা কাটছি। লোকমান সাহেবই এই সব ডালপালা স্থানীয় লোকের কাছে আর একটা সমিলে বিক্রি করছে। আমরা শুধু শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছি।’

ওই দিন দুপুরেই বিএডিসি (ক্ষুদ্র সেচ) এর ক্যাশিয়ার মো. লোকমান হোসেনের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে দেখা করার পরামর্শ দিয়ে কথা না বলে প্রতিবেদককে অফিসে বসিয়ে রেখে পালিয়ে যান।

এরপর ১৯ মার্চ দুপুরে আবারো ডালপালা কাটার বিষয়ে জানতে গেলে মো. লোকমান হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিএডিসিরি মহাপরিচালক স্যার আসার কথা ছিলো। তাই সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য আমরা এই গাছগুলোর ডালপালা কাটি।’

কার নির্দেশে বা কোন আইন মেনে এসব গাছের ডালপালা কাটা হয়েছে এবং এসব ডালপালা বিক্রির লক্ষাধিক টাকা দপ্তরের সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে কিনা এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো কথা না বলে আবারো পালিয়ে যান লোকমান হোসেন।

তবে এসকল বিষয়ে বিএডিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) মো. কায়সার আহমেদ মুন্সী বলেন, ‘কিছু ডালপালার জন্য বেশি ময়লা হচ্ছিলো। লোকমান সাহেব আমাকে জানানোর পর আমি কিছু ডালপালা কাটতে বলেছি। কিন্তু এভাবে যে শতাধিক গাছের ডালপালা কাটা হয়েছে সেটা আমার জানা ছিলো না। আর ডালপালা কাটার টাকা কে কী করেছে সেই বিষয়টি আমার জানা নেই। সবকিছু লোকমান সাহেবের নিয়ন্ত্রণে হয়েছে।’

জামালপুরের পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘গাছ আমাদের পরিবেশের বন্ধু। গরমের সময় বিএডিসি (ক্ষুদ্র সেচ) এলাকার অনেক মানুষ এসব গাছের নিচে বিশ্রাম নিতো। অনেক পাখি এসব ডালে আশ্রয় নিতো। সামনে গ্রীষ্মকাল, অনেক গরম পড়বে। কিন্তু একটি মহল কিছু অর্থের আশায় এসব ডালপালা কেটেছে। এটি খুব খারাপ কাজ হয়েছে। আমি এই কাজে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’