সরকারি স্কুলশিক্ষক স্বামীর ঢেলে দেওয়া গরমপানিতে স্ত্রী দগ্ধ, শ্বশুর গ্রেপ্তার

স্ত্রীকে নির্যাতনকারী সহকারী শিক্ষক আল আমীন।

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরে যৌতুকের দাবিতে ধারাবাহিক নির্যাতনের একপর্যায়ে গরম পানি ঢেলে এক গৃহবধূর শরীর ঝলছে দিয়েছেন পাষণ্ড স্বামী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আল আমীন। নির্যাতিতা ওই নারী জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ১৯ ফেব্রুয়ারির এ ঘটনায় ২৭ ফেব্রুয়ারি জামালপুর সদর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ গৃহবধূর শ্বশুর আশেক আলীকে গ্রেপ্তার করেছে। শিক্ষক আল আমীন পলাতক রয়েছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, অভিযুক্ত আল আমীন জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের চর মল্লিকপুর গ্রামের আশেক আলীর ছেলে। তিনি সদর উপজেলার শাহবাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ১০ মাস আগে তিনি মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের নাগেরপাড়া গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী আব্দুল মান্নানের মেয়ে নিশি আক্তারকে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় নগদ পাঁচ লাখ টাকা, একটি মোটরসাইকেল, আসবাবপত্র ও মোবাইলসহ স্বর্ণালঙ্কার যৌতুক দেওয়া হয়। তিন মাস ধরে শহরের গেইটপাড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় উঠেন তারা। এরপর থেকেই আল আমীন আরও পাঁচ লাখ টাকার জন্য মারধর ও নির্যাতন শুরু করে।

১৯ ফেব্রুয়ারি আল আমীন তার স্ত্রী নিশিকে মারধর করার একপর্যায়ে শরীরে গরম পানি ঢেলে দেন। তার শরীরের ৯০ ভাগ ঝলসে যায়। এ অবস্থায় তাকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখে দেওয়া হয়। ২৬ ফেরুয়ারি তার অবস্থার অবনতি হলে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রেখে আল আমীন পালিয়ে যান। পরে নিশি মোবাইল ফোনে তার পরিবারকে ঘটনা জানানোর পর তারা এসে তাকে উদ্ধার করে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।

নির্যাতিতা নিশি আক্তারের খোঁজ নেন মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

নিশি আক্তার বলেন, আল আমীন তাকে প্রায় সময় মারধর করতেন। রান্নায় লবণ কম হলেও মারতেন। ঘটনার দিন পাঁচ লাখ টাকার জন্য চাপ দিলে দুজনের মধ্যে কথাকাটি হয়। একপর্যায়ে তার গলা চেপে ধরে, মুখে গামছা গুজে মারপিট করে। পরে শরীরে গরম পানি ঢেলে দেন। গরম পানিতে তার ডান বুক ও পিঠ মারাত্মকভাবে ঝলসে গেছে।

নিশির মা নারগিস বেগম বলেন, বিয়ে দেওয়ার পর থেকে তার মেয়েকে আল আমীন অনেক অত্যাচার করে আসছে। জোর করে বিয়ে করে। অনেক যৌতুক দিছি। ফার্নিচার, গাড়ি, গয়নাসহ সব দিছি। আমার মেয়েকে গরম পানি ঢাইলে পুড়া দিছে। তাও আমি জানতাম না। মেয়ে ফোনে ছবি দিছে। ছবি দেইখে জানছি। আমি আল আমীনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

জামালপুরের মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, একজন শিক্ষক যদি এমন কাজ করে তাহলে জাতি তার কাছ থেকে কি শিখবে? মধ্যযুগীয় কায়দায় টানা সাতদিন আটকে রেখে এমন নির্যাতনের চিত্র আমরা আগে দেখিনি। আমরা এর বিচার চাই। এমন বিচার চাই যাতে এমন কাজ আর কেউ করার আগে যেন শতবার চিন্তা করে।

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, মেয়েটির শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। হাসপাতালে অনেক দেরিতে আসায় শরীরে আরও বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবুও আমরা আমাদের স্বাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি।

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মহব্বত কবীর এ প্রতিবেদকে বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গৃহবধূর বড় বোন মৌসুমী আক্তার হাসি বাদী হয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক আল আমীন ও তার বাবা আশেক আলীসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। গৃহবধূর শ্বশুর আশেক আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও আল আমীনকে গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।