সিলেটে জনসভায় শেখ হাসিনা : স্মার্ট দেশ গড়তে নৌকায় ভোট চাই

সমাবেশ মঞ্চে হাতে জাতীয় পতাকা নেড়ে উপস্থিত জনতাকে শুভেচ্ছা জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। ছবি : বাসস

ইয়াহইয়া ফজল, সিলেট:

বাংলাদেশকে স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আরেকবার নৌকায় ভোট দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘অগ্নিসন্ত্রাস করে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না।’

২০ ডিসেম্বর বিকেলে সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এই জনসভার মধ্য দিয়ে আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে তাঁর দলের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু করলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ মানে স্মার্ট সরকার, স্মার্ট জনগণ, স্মার্ট ইকোনমি এবং স্মার্ট সোসাইটি। এর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে একটি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর দেশ হিসেবে গড়ে তুলব, যা টেকসই অর্থনীতি, মেধাভিত্তিক শিক্ষা, উন্নত সমাজ, ন্যায়পরায়ণ বাংলাদেশ, স্বচ্ছ বাংলাদেশ হবে।’

বিএনপি ও সমমনাদের আন্দোলনের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের জীবন কেড়ে নেবে, মানুষকে ভোট দিতে দেবে না, নির্বাচন বন্ধ করবে, এত সাহস কোথা থেকে পায়?’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘লন্ডনে বসে একটা কুলাঙ্গার হুকুম দেয় আর কতগুলো লোক নিয়ে এখানে আগুন নিয়ে খেলে। আগুন নিয়ে খেলতে গেলে আগুনেই হাত পোড়ে, এটা তাদের মনে রাখা উচিত।

তারা মনে করেছে দুইটা আগুন দিলেই সরকার পড়ে যাবে। অত সহজ না। অত ভাত দুধ দিয়ে খায় না।’

প্রতিবারই জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা সাধারণত সিলেট থেকেই প্রচার শুরু করেন।

এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সাড়ে ১১টায় ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। ছোট বোন শেখ রেহানাও এই সফরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন। বিমানবন্দর থেকে গিয়ে দুই বোন প্রথমে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার এবং পরে হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন। সেখান থেকে বের হয়ে শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো দল চাইলে নির্বাচনে না আসতে পারে; কিন্তু আগুন দিয়ে মানুষ মারার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা গতকাল সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন। ছবি : বাসস

সেখান থেকে সার্কিট হাউসে গিয়ে দুপুরের খাবার খান শেখ হাসিনা। বিকেল ৩টায় তিনি যোগ দেন আলিয়া মাদরাসা মাঠের জনসভায়। সকাল থেকেই এই মাঠে জড়ো হন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। হাতে লাল-সবুজ পতাকার সঙ্গে রঙিন পোশাক উৎসবের আমেজ তৈরি করে গোটা এলাকায়।

সভামঞ্চে এসে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে জাতীয় পতাকা নেড়ে শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এরপর আঞ্চলিক ভাষায় গান গেয়ে তাঁদের স্বাগত জানায় সিলেট বেতারের দুটি দল।

নৌকায় ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই নৌকা নুহ নবীর নৌকা। এই নৌকায় ভোট দিয়ে এ দেশের মানুষ এ দেশে স্বাধীনতা পেয়েছে। আবার এই নৌকা যখন সরকারে এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হয়েছে। আপনারা নৌকায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই নৌকাই দেবে ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ।’ তিনি বলেন, ‘ওয়াদা করেন, নৌকায় ভোট দেবেন।’ তখন উপস্থিত জনতা দুই হাত তুলে সমস্বরে সাড়া দেন। সমর্থন পেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, এই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।’

নির্বাচনী জনসভায় আসা জনতার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা অনুরোধ আপনাদের কাছে সেটা হলো, এই যে আজকে সমস্ত জায়গায় বোমাবাজি, অগ্নিসন্ত্রাস এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারা—এর বিরুদ্ধে সকলকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’

২০০১ সালে যে নির্বাচনে জিতে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে, সেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল খালেদা জিয়া; ক্ষমতায় গেলে গ্যাস বেচবে। সেই কারণে বাহবা দিয়ে তাঁকে ক্ষমতায় বসাল। রেজাল্ট কী? জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দুঃশাসন। আমি বলেছিলাম খালেদা জিয়া গ্যাস দিতে পারবে না, গ্যাস পাবেই না। আসলে পায়নি, দিতে পারেনি। এটা হলো বাস্তবতা। যে কূপ খনন করে খালেদা জিয়ার আমলে গ্যাস পায়নি, সেই কূপ খনন করে আওয়ামী লীগের আমলে আমরা শুধু গ্যাস না, তেলও পেয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আল্লাহ যখন কাউকে কিছু দেয়, জন বুঝেই ধন দেয়। আল্লাহ জানে ওদের কাছে দিলে সব নয়ছয় করবে। আর আওয়ামী লীগের হাতে পড়লে জনগণের কল্যাণে কাজে লাগবে।’

জনসভায় আওয়ামী লীগ আমলে গত ১৫ বছরে সিলেটে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরে ভবিষ্যতের চিন্তাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সিলেটে কিন ব্রিজের পাশে নতুন ব্রিজ করা হবে, নগরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে, ইন্টারনেটের গতি বাড়ানো হবে। সিলেট বিমানবন্দর থেকে চৌকিদিঘি এলাকার সড়ক চার লেইন করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এবং গ্রামকে শহরে পরিণত করা হবে।’

সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে গতকাল বিকেলে আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় জনতার একাংশ। ছবি : বাসস

সিলেটে মেট্রো রেল চালু করা যায় কি না সেটার সমীক্ষা করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া উন্নতমানের হাউজিং এস্টেট করা, লাক্কাতুরায় আধুনিক উচ্চ বিদ্যালয়, মদনমোহন কলেজকে সরকারীকরণ, এমসি কলেজে পাঁচতলা একাডেমিক কাম পরীক্ষ ভবন, ১০ তলা একাডেমিক ভবন, ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা ১০০ শয্যার আবাসিক ভবন নির্মাণ, ৩৪১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম ও সিলেটে একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ নৌকায় ভোট দিলে এবং আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারলে, সমগ্র বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী করে তুলব। আর কোনো মানুষ গৃহহীন, ঠিকানাবিহীন এবং ভূমিহীন হবে না। এটাই আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাব।’

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ জনসভায় সভাপতিত্ব করেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ইনাম আহমদ চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।সূত্র:কালের কণ্ঠ।