জি২০ সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াদিল্লিতে আসছেন বিশ্ব নেতারা

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক : কয়েক মাসের প্রস্তুতির পর ভারত ১৮তম জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজনের জন্য প্রস্তুত। ৯ সেপ্টেম্বর থেকে অনুষ্ঠেয় এই বিশ্ব ইভেন্টে যোগ দিতে বিশ্ব নেতারা নয়াদিল্লিতে পৌঁছতে শুরু করেছেন।

মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবিন্দ জগনাউথ এবং নাইজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি বোলা আহমেদ টিনুবু এই মেগা ইভেন্টে যোগ দিতে ইতোমধ্যেই ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে পৌঁছেছেন। ভারত এই প্রথমবারের মতো এই শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে।

মেক্সিকো ও ইইউ প্রতিনিধিদলসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান আজ নয়াদিল্লিতে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ভারতে আসবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল বিকেলে পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছবেন সেখান থেকে তাঁকে হোটেল দ্য গ্র্যান্ড দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হবে। শনিবার জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে তাঁর বক্তৃতা দেয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বাসসকে জানিয়েছে, অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থানকালে আগামীকাল বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট থেকে ৭টা পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার বাসভবনে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। জি২০ সম্মেলনে যোগদান ও মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ছাড়াও শেখ হাসিনা সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ টিনুবু, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আকবার্তো অ্যাঞ্জেল ফার্নান্দেজ ও কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীক বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। রবিবার বিকেলে তিনি নয়াদিল্লী ত্যাগ করবেন।

আন্তর্জাতিক আনুষ্ঠানিক লাউঞ্জ, বিশেষ অভিবাসন কাউন্টার, জলপ্রপাত, অভিব্যক্তিপূর্ণ হোর্ডিং ও আলোকিত জি২০ লোগোর মতো সুবিধাসহ জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের অতিথি এবং প্রতিনিধিদের স্বাগত জানাতে নতুন দিল্লি বিমানবন্দরে ইতোমধ্যে সমস্ত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নির্বিঘ্ন ও ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদেশী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রবেশ এবং প্রস্থানের জন্য বিশেষ করিডোর প্রস্তুত করা হয়েছে।

ভারত সফরকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হোটেল আইটিসি মৌর্যে অবস্থান করবেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও জার্মান প্রতিনিধিদল শাংরি লা হোটেলে, চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং তাজ হোটেলে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ললিত হোটেলে, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনেশিয়া থাকবেন ইম্পেরিয়াল হোটেলে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হোটেল দ্য গ্র্যান্ড দিল্লিতে অবস্থান করবেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ হোটেল দ্য ক্লারিজেসে থাকবেন এবং ইতালির প্রতিনিধি দল হোটেল হায়াত রিজেন্সি দিল্লিতে থাকবেন।

এদিকে, এই আয়োজনকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জি২০ মেগা ইভেন্টে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা কর্মীদের রাজধানী শহরের সমস্ত কৌশলগত পয়েন্টে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

দিল্লি সরকারের একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, আগামীকাল সকাল থেকে রবিবার পর্যন্ত নয়াদিল্লী ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকাকে ‘নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল’ হিসাবে বিবেচনা করা হবে। নিরাপত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভারতীয় এয়ার ফোর্সের জঙ্গিবিমানগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং নয়াদিল্লীর আকাশসীমায় যে কোন ধরনের সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আগামীকাল থেকে রোববার পর্যন্ত সমস্ত ক্লাউট কিচেন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বাজার, খাদ্য সরবরাহ ও বাণিজ্যিক বিতরণ পরিষেবা বন্ধ থাকবে। নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে সুইগি, জোমাটো, অ্যামাজন ও ফ্লিপকার্টের মতো পরিষেবাগুলো থেকে ডেলিভারির অনুমোদন দেওয়া হবে না। তবে ওষুধ ও অতিপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত।

এছাড়া, শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে দিল্লিকে অভিনবরূপে সাজানো হয়েছে। বিশ্বনেতাদের অভ্যর্থনা জানাতে ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে মূল সড়কগুলো বিশাল বিশাল থিম্যাটিক জি২০ লোগো, স্বাগতম বিলবোর্ড এবং আধুনিকতার আদলে ভারতীয় সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তোলা শিল্পকর্ম দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ দিল্লির বিভিন্ন গাছপালা প্রায় ৭ লাখ ফুল এবং পাতাবাহারে সাজিয়ে শহরটিকে একটি নান্দনিক রূপ দেয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে শতাধিক ভাস্কর্য এবং বহুরূপী নকসার দেড় শতাধিক ফোয়ারা স্থাপন করেছে।