শেরপুরে কাঁচা মরিচের দাম স্বর্ণের মতো বাড়ছে!

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম: শেরপুরে কাঁচা মরিচের দাম এখন স্বর্ণের মতো বাড়ছে। আগে এই পাইকারি বাজারে প্রতিদিন ৮০-৯০ মণ মরিচ আমদানি হতো। আর এখন সর্বোচ্চ ২০ মণ মরিচ উঠে। দশজন ক্রেতা দাম দর করে এরমধ্যে একজন কিনে। কথাগুলো বলছিলেন, জেলা শহরের মাধবপুর এলাকার পাইকারি সবজি কেনাবেচার স্টেডিয়াম মার্কেটের আড়তদার হযরত আলী।

হযরত আলী আরও বলেন, সবজি ভান্ডার হিসাবে পরিচিত শেরপুরে কয়েক দিন আগেও এক পাল্লা (পাঁচ কেজি) দেশী কাঁচা মরিচ ৩-৪শ’ টাকায় বিক্রি হতো। এখন সেই মরিচ ১৭৫০-১৮০০ টাকা পাল্লা বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিমণ মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৪ হাজার টাকায়। খুচরা বাজারে ক্রেতারা প্রতি কেজি মরিচ কিনছেন ৪০০ টাকায়।

সরেজমিনে ওই বাজারে গেলে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় স্থানীয় আড়তদার, খুচরা ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সাথে।

সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের যুগনীবাগ গ্রামের কৃষক কমল মিয়া বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে প্রচন্ড খড়া আর অনাবৃষ্টির কারণে মরিচ গাছে পোঁকার আক্রমণ হয়েছে। এছাড়া অজানা কারণে ফুল হলুদ রঙ ধারণ করে ঝরে যাওয়া এবং গাছের পাতা, গোড়া ও কান্ড ফোলে মাঠের পর মাঠে রোপণ করা প্রতিটি মরিচ গাছ নষ্ট হয়ে পচে গেছে। এ জন্য বাজারে কাঁচা মরিচের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আরিফ মিয়া বলেন, ৩৫ শতাংশ জমিতে মরিচের আবাদ করেছি। পুরো জমি ঘের দিতে বাঁশ কিনতে হয়েছে। এছাড়া সার, বীজ ও শ্রমিকের মজুরিসহ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ক্ষেতে মরিচ আসার পর দেখি এর আকার খুব ছোট, আর ফলন একদম কম। যেখানে প্রতি শতাংশে ৪০ কেজি মরিচ পাওয়ার কথা সেখানে এক কেজি মরিচও পাওয়া যাচ্ছে না। পুরো জমি থেকে এবার ৬শ’ কেজি মরিচ পাওয়ার কথা থাকলেও পেয়েছি মাত্র ২১ কেজি।

এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, এবার প্রত্যেক কৃষকের মরিচ ক্ষেতে পাতা কোকড়ানো রোগের পরিমাণ বেশী। প্রতিটা গাছ মরে সাফ হয়ে গেছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের দেখা মেলে না।

সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের কুঠুরাকান্দা গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান ভুলু বলেন, জেলায় হাইব্রিড জাতের বিজলী এফ ওয়ান, হট মাস্টার, বিন্দু, সিন্ধু, মাস্টার, ইস্পাহানী ও দেশীসহ প্রায় ১২ রকমের মরিচের আবাদ হয়। এর মধ্যে দেশী জাতের মরিচের দাম সবচেয়ে বেশী। বর্তমানে পাইকারি বাজারে এক কেজি দেশী মরিচ ৩৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে ৪০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছেনা। তবে বিন্দু নামে হাইব্রিড জাতের মরিচ বাজারে কিছুটা কম দামে পাওয়া গেলেও এর মান ভালোনা।

এরশাদ আলী নামে এক কৃষক বলেন, এবার তিনি ৩০ শতাংশ জমিতে কাঁচা মরিচের আবাদ করেন। ওই জমি থেকে ৪০ মণ মরিচ পাওয়ার কথা থাকলেও পেয়েছেন মাত্র ৬ মণ। এ জন্য তিনি অতিরিক্ত খড়া আবহাওয়াকে দায়ী করেন।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে মরিচের বাজার অনেক চড়া। কিন্তু তাতে তার কোন লাভ নেই। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, যদি ক্ষেত ভাল থাকে তাহলে কম দামে দীর্ঘ দিন মরিচ বিক্রি করা যায়। আর যদি ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায় দাম বড়লেও ক্ষতির উপর ডাবল ক্ষতি হয়।

শহরের নয়আনী বাজারের খুচরা কাঁচামাল বিক্রেতা আসগর আলী বলেন, পাইকারি বাজার থেকে প্রতিপাল্লা কাঁচা মরিচ ১৮শ টাকা দিয়ে কিনে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ৪শ টাকা বিক্রি করলেও তাদের পোষাচ্ছেনা। কারণ পাইকারি বাজারে মরিচ কেনার পর আড়ৎ জমা, কুলি খরচ আর পরিবহণ ভাড়া দিয়ে তাদের লাভের অংশ খুবই কম থাকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুকল্প দাশ বলেন, সবজি উদ্বৃত্ত এ অঞ্চলে মরিচের ঘাটতি হওয়ার কোন সুযোগ নেই। এই এলাকার সবজি পাশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাতে সরবরাহ কারা হয়। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে এই সবজি থেকে অতিরিক্ত মুনাফা লুটতে ফাঁদ পেতেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘরে ঘরে ফেরি করে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ নেই। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে মরিচ গাছের রোগ বালাই প্রতিরোধ বিষয়ে পরামর্শ নিতে পারবেন।

উপ-পরিচালক সুকল্প দাশ জানান, জেলার সদর উপজেলাসহ নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীর ৩৫৫ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। আর প্রতি হেক্টর জমি থেকে ৭টন মরিচ উৎপাদন হয়। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার টন মরিচ পাওয়া যায়।