পাহাড়ী পতিত জমিতে কাজু বাদাম চাষে লাখপতি হওয়ার স্বপ্ন

কাজু বাদাম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম: গত বছর কাজু বাদামের ফুল আসে কিন্তু তা ঝরে যায়। আর এবার ফুল আসার পর থোকায় থোকায় ফল হয়ে তা পাকতে শুরু করেছে। কথাগুলো বলছিলেন, শেরপুরের ঝিনাইগাতীর বনাঞ্চল ঘেরা গজনি এলাকার কাজু বাদামের বাগান মালিক সোয়েব হাসান শাকিল।

সোয়েব হাসান শাকিল বলেন, আমার ৫০ শতক জমিতে দুই শতাধিক গাছ রয়েছে। গত তিন বছরে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি, আগামী বছর থেকে ফলন আরও বাড়বে। সেই সাথে প্রতি গাছে প্রায় ১৫-২০ কেজি করে বাদাম পাওয়া যাবে। আর প্রতি কেজি বাদাম ৮০০-১০০০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে। সে হিসাবে প্রায় ৪-৫ লাখ টাকার বাদাম বিক্রি করা যাবে।

স্থানীয় হরপদ চাকমা বলেন, জেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় ঘেরা ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীতে এবার পরীক্ষামূলকভাবে কাজু বাদামের চাষ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ওইসব এলাকার বাগানগুলোর বাদাম পরিপক্ক হতে শুরু করেছে। ফলে আদিবাসী-বাঙালিদের মনে আশার আলো জেগে উঠেছে।

কাজু বাদাম বাগান মালিক নির্মল ম্রং নামে একজন বলেন, ভারতের মেঘালয় রাজ্য ঘেঁষা প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরত্বের এ সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় বন্য হাতির আক্রমণের ভয়ে এবং কিছু এলাকা পানির অভাবে বিস্তীর্ণ জমি পতিত থাকে। পাহাড়ি অনেক অনাবাদি জমিতে আমদানি নির্ভর এ কাজু বাদাম চাষ করলে দেশের অর্থনীতিতে তারা কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পাবে। এছাড়া তৈরি হবে নতুন কর্মক্ষেত্রের পথ।

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, প্রায় তিন বছর আগে ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় সীমান্তের তিনটি উপজেলার পাহাড়ি এলাকার ৫৬ বিঘা জমিতে মোট ৩৬টি প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে কম্বোডিয়ান এম-২৩ জাতের এ কাজু বাদামের চারা বিতরণের মধ্য দিয়ে এ এলাকায় কাজুর চাষ শুরু হয়। আর তিন বছরের মাথায় বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী বাগানে ফুল ও ফল এসে ইতোমধ্যে বাদাম পাকতে শুরু করেছে। বাগানগুলোতে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে কাজু বাদাম। ওই জাতের কাজুু বাদাম গাছ থেকে প্রায় ৫০-৬০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। আর প্রতি কেজি বাদাম বিক্রি করা যায় ৮০০-১০০০ হাজার টাকা। তবে প্রসেসিং ছাড়া ৪০০-৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা যায়।

কাজু বাদাম

কৃষি বিভাগ আরও জানায়, বাদাম পাকার পর ওপরের অংশ আপেলের মতো খাওয়া যায় এবং নিচের অংশ নির্ধারিত যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় বাদাম বের করে নেয়া হয়।

এদিকে বাগান মালিকরা জানায়, পাহাড়ি মাটির মান খুব ভালো হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যে গাছগুলোতে বাদাম আসতে শুরু করেছে। এছাড়া আগামীতে আরও ফলন বাড়বে বলে আশা করছেন তারা ।

ঝিনাইগাতীর একটি কলেজের প্রভাষক মহিউদ্দীন মোল্লা বলেন, আমদানি নির্ভর বাদামের চাষ পাহাড়ে হচ্ছে এমন খবরে কৃষি উদ্যোক্তা ও বেকার যুবকরা বাগান দেখতে ছুটে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তিনি নিজেও দুটি বাগান পরিদর্শন করেছেন বলে জানান।

মহিউদ্দীন মোল্লা আরও বলেন, আগ্রহী উদ্যোক্তাদের মধ্যে কেউ কেউ বাগানে হাতির আক্রমণের ভয়ের কথা প্রকাশ করেছেন।

এই প্রভাষক মনে করেন, যদি কাটা তারের বেড়া দিয়ে হাতির আক্রমণ ঠেকানো যায় তাহলে বাদাম চাষে স্থানীরা অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভবান হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, উচ্চমূল্যের এ কাজু বাদাম দেশের নতুন অর্থকরী ফসল। কৃষি বিভাগের মাধ্যমে কাজু বাদামের উৎপাদন বাড়ানোর প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। দেশে এ ফসলের অনেক ঘাটতি রয়েছে।

ড. সুকল্প দাস আরও বলেন, প্রতি বছর এই পণ্য আমদানি করতে প্রচুর টাকা ব্যয় করতে হয়। তাই আমদানি নির্ভরতা কমাতে এবং দেশকে সমৃদ্ধ করতে নতুন এ ফসল শেরপুরের গারো পাহাড়সহ পুরো দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

তবে হাতির উপদ্রবের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে কৃষকদের মাঝে কাজু বাদাম চাষের বিষয়টি বেশ সাড়া জাগাবে।