ব্রহ্মপুত্র রক্ষা ও বালুমহাল ব্যবস্থাপনায় আইনের কার্যকর প্রয়োগের দাবি জানালো সনাক-জামালপুর

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সনাক সভাপতি অজয় কুমার পাল। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: ব্রহ্মপুত্র রক্ষায় বালুমহাল ব্যবস্থাপনায় আইনের কার্যকর প্রয়োগের দাবি জানিয়ে ১৫ জুন জামালপুর শহরের ফৌজদারি মোড় এলাকায় এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৭ জুন বিশ্ব খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধ দিবসকে সামনে রেখে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), জামালপুর ওই মানববন্ধন কার্যক্রমের আয়োজন করে।

সনাক সভাপতি অজয় কুমার পালের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে উপস্থিত ছিলেন জামালপুর পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম, পরিবেশ বাঁচাও, জামালপুরের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী ইউসুফ আলী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জামালপুরের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), জামালপুরের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাজ্জাত হুসেন, ডিস্ট্রিক্ট পলিসি ফোরাম, জামালপুরের সভাপতি শামিমা খান, জামালপুর টেলিভিশন রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ফজলে ইলাহী মাকাম, সনাক সহ-সভাপতি অধ্যাপক কায়েদ-উয-জামানসহ সর্বস্তরের সাধারণ জনগণ।

মানববন্ধনে সনাক জামালপুরের পক্ষে ব্রহ্মপুত্র রক্ষায় বালুমহাল ব্যবস্থাপনায় ৯ দফা সুপারিশ পেশ করেন ইয়েস দলনেতা আবৃত্তি আমিন ইভা।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

সনাক সদস্য এ কে এম আশরাফুজ্জামানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সনাক জামালপুরের জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক মনোয়ারা খানম।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, মরুকরণ যেভাবে বিশ্বব্যাপী মাথাব্যাথার কারণ, তেমনি জামালপুর জেলার জন্যও উদ্বেগের যথেষ্ঠ কারণ রয়েছে। নদ-নদীগুলোতে নাব্যতা কমে যাওয়ায় ড্রেজিং-এর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, আবার ড্রেজিং-এর মাধ্যমে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে নদীর আশেপাশের অবকাঠামো, বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, সেতু, ফসলি জমি ইত্যাদিকে হুমকির মুখে ফেলছে। এ ছাড়াও বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়তই নানা রকম অপরাধী চক্র সংগঠিত হচ্ছে ও সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে।

মানববন্ধনে ইয়েস দলনেতা আবৃত্তি আমিন ইভা সনাক জামালপুরের পক্ষে ব্রহ্মপুত্র রক্ষায় বালুমহাল ব্যবস্থাপনায় ৯ দফা সুপারিশ পেশ করেন।

সেগুলো হচ্ছে- (১) ভূমি মন্ত্রণালয়ের আদেশ (৫ নভেম্বর ২০২০, স্মারক ৩১.০০.০০০০.০৫১.৩৭.০২৫.২০২০.২৮৫) অনুযায়ী ও সাধারণ জনগণের সুবিথার্থে বালুমহাল ইজারা সংক্রান্ত সকল তথ্য (ইজারাদার, ইজারার মেয়াদ ইত্যাদি) জেলা তথ্য বাতায়নে হালনাগাদ রাখা;
(২) সরকারিভাবে স্বীকৃত বালুমহাল নির্দিষ্ট সীমানা দিয়ে চিহ্নিত করা;
(৩) সরকারিভাবে স্বীকৃত বালুমহালে ইজারা সংক্রান্ত সকল তথ্যাদি একনজরে দেখার জন্য বালুমহাল সীমানার মধ্যে তথ্য বোর্ড স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া;
(৪) অবৈধ বালুমহাল চিহ্নিত করে সেখান থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা;
(৫) অবৈধ বালুমহাল ও বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা এ সংক্রান্ত তথ্যাদি জেলা তথ্য বাতায়নে নিয়মিতভাবে হালনাগাদ করা;
(৬) অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ব্রীজ, রাস্তা-ঘাট, বাজার, ফসলি জমি হুমকির মুখে পরে এমন অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা;
(৭) অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু ভ্রাম্যমাণ আদালতে জব্দ করার পর নিলামে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছে পুনরায় বিক্রয় না করা বা অভিযুক্ত ব্যক্তি যাতে না কিনতে পারে সে দিকে দৃষ্টি রাখা;
(৮) বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এবং বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০১১ প্রশাসনের মাধ্যমে সঠিকভাবে কার্যকর করা এবং (৯) টেকশই উন্নয়নের অভীষ্ট ১৫ এর উপধারা ৩ সহ এ সংক্রান্ত সমস্ত লক্ষ্যমাত্রার সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা এবং স্থানীয় পর্যায়ের চাহিদা অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা।

স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোক্তার হোসেন।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

মানববন্ধনে সনাক সভাপতি অজয় কুমার পাল বলেন, নদীর নাব্যতা রোধ করার জন্য বালু উত্তোলনের প্রয়োজন যেমন রয়েছে, তেমনি অতিরিক্ত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে তা বিভিন্ন ধরণের ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে। জামালপুর জেলায় বিভিন্ন সময় বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে অনিয়ম লক্ষ্য করা গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সনাকের প্রস্তাবিত সুপারিশমালা যে দেওয়া হয়েছে তার প্রতি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। প্রস্তাবিত সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করতে পারলে তা বালু উত্তোলন কেন্দ্রিক অনিয়ম কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।

মানববন্ধন শেষে জামালপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সনাক জামালপুর কর্তৃক প্রস্তাবিত সুপারিশমালা স্মারকলিপির মাধ্যমে প্রদান করা হয়। জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোক্তার হোসেন।