শেরপুরের আলু যাচ্ছে মালয়েশিয়া, রাশিয়া, শ্রীলঙ্কায়

ক্ষেত থেকে আলু তোলা হচ্ছে। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম: গুণে ও মানে অনন্য শেরপুরের আলু এবার রপ্তানি হচ্ছে মালয়েশিয়া, রাশিয়া ও শ্রীলঙ্কায়। চাষিরা বলছেন, এবার মৌসুমের শুরুতে শৈত্যপ্রবাহ ও বৈরী আবহাওয়া থাকলেও আলুর উৎপাদন সন্তোষজনক আর বাজারে ভালো দামও পেয়েছেন। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, বিভিন্নভাবে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আলু চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আলু চাষে লাভ বেশি পাওয়ায় দিন দিন এই সবজি চাষে শেরপুরের কৃষকরা তুমুল আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছর ৫ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এবার তার চেয়েও বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। জেলার সদর, নকলা, নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলায় পাঁচ হাজার ২২২ হেক্টর জমিতে ৮৮ হাজার ৭৭৪ টন আলুর ফলন হয়েছে। উৎপাদিত এসব আলুর বাজারমূল্য ১৮৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এখন চরাঞ্চলের সড়কে সারি-সারি মালবাহী টমটম গাড়ি, গাড়িতে বস্তাভর্তি আলুবোঝাই করে নিচ্ছে ব্যাপারিরা, মাঠে কৃষক-কৃষাণির আলু তোলার দৃশ্য, সবার মুখে আনন্দের হাসি আলুর ফলন ভালো হওয়ায়। কম খরচে অধিক মুনাফা পাওয়ায় দিন-দিন আলু চাষে ঝুঁকছেন শেরপুরের কৃষক। মৌসুমের শুরুতে শৈত্যপ্রবাহ ও বৈরী আবহাওয়া থাকলেও এবার আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

জেলা কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন সূত্র জানায়, এ বছর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ২০০ টন শেরপুরের আলু রপ্তানি হবে। জেলায় এ বছর অন্যান্য জাতের পাশাপাশি ডায়মন্ড, এডিসন, বারি ৪০, বারি ৪১, সানসাইন, সান্তনা, রশিদা, ক্যারোলা জাতের নতুন জাতের আলুর চাষ বেশি হয়েছে।

আলু ক্ষেত।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

সদর উপজেলার কামারেরচরের কৃষক মজিবর রহমান বলেন, এবার এক একর জমিতে আলু চাষ করেছি। ৭০ দিনের মধ্যে আলু উঠেছে। পাইকাররা এক একর জমির আলু ক্ষেত আগেই কিনে নিয়েছে। খরচ বাদে এবার আমার ৪০ হাজার টাকার কাছাকাছি লাভ হয়েছে।

নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনার আলু চাষি সিরাজুল হক বলেন, দেড় একর জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছে। মোটামুটি ৫০ হাজার টাকার মতো টিকছে। আলু তুলে এবার পাট ও ভুট্টার আবাদ করেছি। এতে আমার বাড়তি আয় হবে।

শ্রীবরদীর স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তাপস রায় বলেন, আলু চাষে কৃষকের লাভের পাশাপাশি আলুগাছ কর্তন ও বাছাইয়ে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো নারীর। একেকজন নারীশ্রমিক এ কাজে দৈনিক ২০০ থেকে ২৫০ টাকা মজুরি পান। মাসব্যাপী এই কাজের আয়ে তাদের সংসারের চাকা সচল রাখতে অনেকটাই সহযোগিতা করেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক হুমায়ুন কবীর বলেন, বিভিন্নভাবে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আলু চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। চলতি বছর পাঁচ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বছরের শুরুতে শৈত্যপ্রবাহ ও আবহাওয়া খারাপ থাকলেও জেলায় আলুর বাম্পার ফলনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে।

বিএডিসি শেরপুরের উপ-পরিচালক খলিলুর রহমান বলেন, আলু চাষে লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন এই সবজি চাষে শেরপুরের কৃষকরা আগ্রহ পাচ্ছেন। আমরা দেখতে পেলাম এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদিত নতুন ও বড় জাতের আলুর চাহিদা বিদেশে বেশি।

উপ-পরিচালক খলিলুর রহমান আরও বলেন, এসব আলু দিয়ে মুখরোচক চিপস ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বানানো হয়। এ জন্য এ বছর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ২০০ টন শেরপুরের আলু রপ্তানি হবে মালয়েশিয়া, রাশিয়া ও শ্রীলঙ্কায়।