এশিয়ার সেরা হয়ে রেকর্ড বইয়ে শ্রীলংকা

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক ❑ ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে ১৫তম এশিয়া কাপের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় পড়েছে শ্রীলংকা। এই নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছয়বার এশিয়ার সেরা হলো লংকানরা। ফাইনালে পাকিস্তানকে ২৩ রানে হারায় তারা। এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেই রেকর্ড বইয়ের হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিলো শ্রীলংকা।

১১ সেপ্টেম্বর রাতে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের মধ্যকার ফাইনাল। পরিসংখ্যান বলছে, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ফাইনালে এই ভেন্যুতে প্রথমে ব্যাট করে মাত্র তিনবার জিতেছে দলগুলো। আর প্রথমে ব্যাট করে আঠারোবার হেরেছে দলগুলো। কিন্তু ফাইনাল জিতে রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে নিলো শ্রীলংকা।

দুবাইয়ে ফাইনালে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে শ্রীলংকা। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭০ রান করে তারা। এরপর পাকিস্তানকে ১৪৭ রানে অলআউট করে দেয় শ্রীলংকা। তাই এই ফরম্যাটে এবং এই ভেন্যুতে তৃতীয় কোন দল হিসেবে প্রথমে ব্যাট করে ম্যাচ জিতলো শ্রীলংকা। এর আগে এই ভেন্যুতে প্রথমে ব্যাট করে ভারত দু’বার ও নিউজিল্যান্ড একবার ম্যাচ জিতেছিলো। এবার সেই তালিকায় জয়ী দল হিসেবে নাম তুললো শ্রীলংকা।

জয়ী দলে নাম লেখালেও, সবচেয়ে কম সংগ্রহ নিয়ে দুবাইয়ের এই ভেন্যুতে প্রথমে ব্যাট করে ম্যাচ জিতলো শ্রীলংকা। ভারত ২১২ ও ১৯২ রানের সংগ্রহ নিয়ে ম্যাচ জিতেছিলো। দু’টোই এবারের এশিয়া কাপে। আর ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭২ রানের পুঁিজ নিয়ে ম্যাচ জিতে নিউজিল্যান্ড।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ৮ দশমিক ৫ ওভারে ৫৮ রানে ৫ উইকেট হারায় শ্রীলংকা। তারপরও শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি জিততে পারে তারা। টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমে ব্যাট করে দ্রুত পাঁচ উইকেট হারিয়ে আগে কখনও ম্যাচ জিততে পারেনি শ্রীলংকা। তবে অতীতে দ্বিতীয় ইনিংসে দ্রুত পাঁচ উইকেট হারিয়েও ম্যাচ জয়ের রেকর্ড আছে লংকানদের। ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে ১৭৪ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৪ দশমিক ৩ ওভারে ৪০ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ জিতেছিলো লংকানরা।

হার দিয়ে এবারের এশিয়া কাপ শুরু করে শ্রীলংকা। এরপর টানা ম্যাচ জিতে লংকানরা। এর আগে শ্রীলংকা টি-টোয়েন্টিতে টানা পাঁচ ম্যাচ জিতেছিলো ২০১৩-১৪ মৌসুমে। ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে জয়ের ধারায় ছেদ পড়েছিলো লংকানদের।

বিশ্বের তৃতীয় দল হিসেবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে রানের ব্যবধানে জিতলো শ্রীলংকা। এর আগে ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত ৫ রানে হারায় পাকিস্তানকে এবং ২০১২ সালের বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৬ রানে হারিয়েছিলো শ্রীলংকাকে।

ফাইনাল জিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা পাঁচটি টি-টোয়েন্টি জিতলো শ্রীলংকা। সবগুলোই অধিনায়ক দাসুন শানাকার অধীনে। ২০১৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতেছিলো শ্রীলংকা। তখনও অধিনায়ক ছিলেন শানাকা। এই টানা ম্যাচ জয়ের আগে, আগের ১৮ ম্যাচে মাত্র ৫টি জয় আছে শ্রীলংকার।

সর্বশেষ জয় পাওয়া টানা পাঁচ ম্যাচের মধ্যে চারবারই পাকিস্তানকে অলআউট করেছিলো শ্রীলংকা। তার আগের ১৮ ম্যাচের মাত্র দু’বার পাকিস্তানকে গুটিয়ে দিতে পারে লংকানরা।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালে ৫৮ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর দু’টি হাফ-সেঞ্চুরির জুটি গড়ে শ্রীলংকা। ষষ্ঠ উইকেটে ৫৮ ও সপ্তম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৫৪ রানের জুটি গড়ে শ্রীলংকার ব্যাটাররা। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এমন নজির এর আগে দু’বার হয়েছিলো। ২০১৫ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৪০ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে ৬১ ও অষ্টম উইকেটে ৫৮ রান তুলেছিলো পাকিস্তানের ব্যাটাররা। আর এ বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ৭১ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে ৫৩ ও সপ্তম উইকেটে ৫০ রানের জুটি গড়ে নরওয়ের ব্যাটাররা।

ফাইনালে ব্যাট হাতে ৩৬ ও বল হাতে ৩ উইকেট নেন শ্রীলংকার হাসারাঙ্গা ডি সিলভা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের কোন ফাইনালে ব্যাট হাতে ৩০ রানের বেশি ও বল হাতে ৩ উইকেট নেয়ার দ্বিতীয় নজির গড়লেন হাসারাঙ্গা। এর আগে ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে অপরাজিত ৩৪ রান ও বল হাতে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কার্লোস ব্র্যাথওয়েট।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনাল জয়ের নায়ক ভানুকা রাজাপাকসে। পাঁচ নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে অপরাজিত ৭১ রান করেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের কোন ফাইনাল ম্যাচে পাঁচ বা তার নীচের দিকে ব্যাট হাতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়লেন রাজাপাকসে। এর আগে এই রেকর্ডটি ছিলো কাতারের তামুর সাজ্জাদের। ২০১৯ সালে পশ্চিমাঞ্চলের বিভাগীয় ফাইনালে সৌদি আরবের বিপক্ষে ছয় নম্বরে নেমে ৬৮ রান করেছিলেন সাজ্জাদ।