শেরপুর জেলা বিএনপিতে চলছে বহিষ্কার-বহিষ্কার খেলা

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম : শেরপুর জেলা বিএনপিতে চলছে বহিষ্কার-বহিষ্কার খেলা। শুধু তাই না টাকার বিনিময়ে পদ-পদবী বাণিজ্য ও দল পরিচালনায় অন্য নেতাদের পাশ কাটিয়ে একঘেয়ামি সিদ্ধান্ত নেয়ার অভিযোগ উঠেছে দলের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। আর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওই সম্পাদকের পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনার ঝড় বইছে।

ইতোমধ্যে সদ্য ঘোষিত মহিলা দলের ১ নম্বর উপদেষ্টা মোসা. নুরজাহান বেগম গেল ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই সম্পাদকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত করেছেন। আর ওই সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার দেড় ঘণ্টার মাথায় তাকে দলীয় শৃংঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্র তাকে ওই পদ থেকে বহিষ্কার করেছে।

অন্যদিকে বহিষ্কারের ঘটনায় ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে কেউ কেউ বলছেন ক্ষমতায় থাকলে কথায় কথায় মানুষ খুন করবে বিএনপি।

জেলা বিএনপি’র বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নামে পরিচালিত ফেসবুক আইডি থেকে বহিষ্কারের সেই চিঠি শেয়ার করা হয়েছে। গেল ১৬ ফেব্রুয়ারি শেরপুর জেলা ও শহর বিএনপি আইডি থেকে একটি স্ট্যাটাসে বলা হয়- বিএনপিতে আবার যদি কেউ দলীয় শৃঙ্খলা নষ্ট করার পাঁয়তারা করে তাকে নুরজাহান বেগমের মত দল থেকে বহিষ্কার করা হবে, সতর্ক হয়ে যান কোন ছাড় দেওয়া হবেনা। কারন জেলা বিএনপি এখন বিগত দিনের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।

এই স্ট্যাটসের বিপরীতে টিপ্পনী কেটে কমেন্ট বক্সে সাজু আহমেদ নামে এক বিএনপির সমর্থক লেখেন- সব বহিষ্কার করে শেরপুরের মধ্যে একজন থাকলে আরও ভালো হবে। ক্ষমতায় নেই এখনই এই অবস্থা, ক্ষমতায় থাকলে তো মানুষ খুন করবে কথায় কথায়।

একই ফেসবুক আইডি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি আরেক স্ট্যাটাসে বলা হয় – ব্রেকিং নিউজ। খুব শিঘ্রই শেরপুর বিএনপি ও অঙ্গ দলের আরো কয়েকজনের বহিষ্কারের চিঠি আসতে পারে।

এই স্ট্যাটাসের বিপরীতে কমেন্ট বক্সে অনেকের মধ্যে তামিজ আহমেদ নামে এক বিএনপি সমর্থক লেখেন, শেরপুরে ইদানীং ভাইয়ের রাজনীতি চলতাছে, যার যেমন খুশি দল চালাচ্ছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হতে গড়া দল বিএনপিকে তারা অন্তর থেকে চায় না, দিনে বিএনপি রাতে আওয়ামী লীগ। দলকে সুসংগঠিত না করে ধ্বংস করতেছে তারা। প্রকৃত দোষীর শাস্তি হোক, তবে ভাইয়ের রাজনীতি চাই না।

জয়নাল আবেদীন নামে আরেকজন লেখেন, কম্বলের লোম বাছলে তো কম্বললি শেষ হয়ে যাবে।

বহিষ্কার হওয়া জেলা মহিলা দলের ১ নম্বর উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম ২১ ফেব্রুয়ারি বলেন, ৭৯ সাল থেকে তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। এই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জেলা শহরের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে মহিলা দলের সভানেত্রী, শহর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের কার্যকরী কমিটির সদস্য এবং জেলা মহিলা দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভানেত্রী হিসাবে প্রায় এগারো বছর দায়িত্ব পালন করেন।

নুরজাহান বেগম জানান, জেলা মহিলা দলের নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে প্রায় চারমাস আগে পুরনো কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

গেল ৭ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে সুলতানা রাজিয়াকে সভাপতি এবং রায়হানা আক্তার লিপিকে সাধারণ সম্পাদক করে মহিলা দল শেরপুর জেলা শাখার ৬৬ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কার্যকরী কমিটি ঘোষণা করা হয়। আর ওই কমিটিতে তাকে ১ নম্বর উপদেষ্টা পদে রাখা হয়।

নুরজাহান বেগম অভিযোগ করে বলেন, ওই ৬৬ জন সদস্যের মধ্যে ৪-৫ জন ছাড়া বাকিরা কেউ কোন দিন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না। এটি অবৈধ এবং মনগড়া পকেট কমিটি। লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী ও দলের আরও একজন নীতি নির্ধারক এই কমিটি অনুমোদনে সহায়তা করেছেন। শুধু তাই না দলের অন্য সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী টাকা দিলে পদে থাকছে আর না দিলে পদ বঞ্চিত হচ্ছেন।

নুরজাহান বেগম আরও অভিযোগ করে বলেন, জেলার পাঁচ উপজেলায় বিএনপিতে পদে আসতে দশ হাজার থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে।

এছাড়া দলে এ রকম অরাজগতা চলমান থাকায় বহু নেতাকর্মী ঝিমিয়ে পড়েছে। এ কারণে সাধারণ সম্পাদক তার অনুসারীদের নিয়ে নিজ বাড়িতে রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুব দলের দায়িত্বশীল পদে থাকা বেশ কয়েকজন নেতা অভিযোগ করে বলেন, সাধারণ সম্পাদক তার একক সিদ্ধান্তে দল পরিচালনা করছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দল পরিচালনায় প্রতিটি পদক্ষেপ দলীয় ফোরামে আলোচনার জন্য বলা হলেও ওই বিষয়টিকে তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন।

দলের পদ পদবী কেনা-বেচার বিষয়ে জানাতে চাইলে তারা জানান, এ ধরনের কথা অনেকেই বলছেন। তাদের সামনে এ ধরনের লেনদেন হয়নি।

তবে তারা ধারণা করছেন দূর্নীতি মামলায় হযরত আলী প্রায় সাড়ে তিন বছর জেলে ছিলেন। তাই পদ পদবী বিক্রি করে সেই আর্থিক ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে ওই নেতারা জানান, দলে এখন বহিষ্কার-বহিষ্কার খেলা শুরু হয়েছে। তাই তারা নিজেদের পদ বাঁচানোর তাগিদে সংবাদে নিজের নাম পরিচয় প্রকাশ করতে আগ্রহী না।

টাকার বিনিময়ে দলীয় পদ-পদবী বিক্রি করছেন কর্মীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী এই প্রতিবেদকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। বলেন আপনি একজন শিল্পপতির সাথে কথা বলছেন। তাই অভিযোগের লিখিত ডকুমেন্ট হাতে নিয়ে কথা বলবেন। এ ধরনের প্রশ্ন করার সাহস কিভাবে পেলেন।

এক পর্যায়ে তিনি এই প্রতিবেদকের প্রতি উল্টো অভিযোগ এনে বলেন, অন্যের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে ওইসব মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যের জবাব নেওয়ার চেষ্টা করছেন আপনি।

প্রসঙ্গত এর আগে ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম স্বপন দলে কোন্দলের বিষয়ে সমালোচনা করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় তাকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।