জামালপুর ডাকঘরের ফটকে ভিড়ের চাপে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মচারীর মৃত্যু

জামালপুর প্রধান ডাকঘরে আমানতের মুনাফার টাকা তুলতে আসা গ্রাহকদের ভিড়। সেখানেই স্ট্রোক করে মারা যান অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মচারী মো. মতিউর রহমান দুলাল। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক :
জামালপুর প্রধান ডাকঘরে সঞ্চয়ী আমানতের মুনাফার টাকা তুলতে এসে গ্রাহকদের প্রচন্ড ভিড়ের চাপে আকস্মিক স্ট্রোক করে মারা গেছেন জনতা ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত গার্ড মো. মতিউর রহমান দুলাল (৭৫)। পরে জামালপুর সদর হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের আড়ংহাটি গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান স্বজনরা। তিনি ওই গ্রামের মৃত ফয়েজ উদ্দিনের ছেলে। ১২ জুলাই দুপুরে এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

এ সময় সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ডাকঘরের প্রধান ফটকের বাইরে ভিড়ের মধ্যে পড়ে আরও কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। সময় মত টাকা তুলতে না পেরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষমাণ নারী-পুরুষ গ্রাহকরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামালপুর প্রধান ডাকঘরে টাকা আমানতকারীদের সঞ্চয় ও মুনাফার টাকা তুলতে এসে বিশৃংখলা আর ভিড়ের কারণে তৈরি হওয়া অস্বস্তিকর পরিবেশ নতুন কোন বিষয় নয়। অল্প কয়েকজন পুলিশ মোতায়েন থাকলেও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকা গ্রাহকরা অনেকটা অধৈর্য্য হয়েই কে কার আগে টাকা তুলতে পারবেন সেই প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের উর্ধ্বগতির পরিস্থিতিতেও ডাকঘর কর্তৃপক্ষ প্রধান ফটকের সামনে ভিড় এড়াতে কোনরূপ শৃংখলা ও সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা না গ্রহণ করায় সেখানে শারীরিক দূরত্ব মানা হয় না। ফলে একদিকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি, অন্যদিকে আবহাওয়ার প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে ভিড়ের চাপে পড়ে অনেক বয়স্ক নারী-পুরুষ গ্রাহকরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেকেই এভাবে লড়াই করেও টাকা তুলতে না পেরে ফিরে যান। তাদের অনেকেই তিন-চারদিন ঘুরেও সঞ্চয় ও মুনাফার টাকা তুলতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছেন। এই ধরনের হয়রানি ও বিশৃংখল পরিস্থিতি যাতে আর না হয়, তা বাস্তবায়নের জোরদাবি জানিয়েছেন গ্রাহকরা।

১২ জুলাই টাকা তুলতে আসা বৃদ্ধ মতিউর রহমানও একই পরিস্থিতির শিকার হয়ে তাকে স্ট্রোক করে মরতে হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী অন্য গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন। মতিউর রহমান তার পেনশনের টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা ডাকঘরের হিসাবে পারিবারিক সঞ্চয় আমানত জমা রেখেছিলেন। ১২ জুলাই সেই আমানতের মুনাফার টাকা তোলার জন্য সকালে ডাকঘরে এসে ভিড়ের মধ্যে চেষ্টা করছিলেন তার সঞ্চয় আমানতের বই ও টাকা তোলার রশিদ জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে তা জমা দিতে পারেননি। প্রায় তিন ঘন্টা পর আকস্মিক তিনি ভিড়ের মধ্যেই গা এলিয়ে দিয়ে মাটিতে পড়ে যান। এ সময় তার সারা শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছিল।

এ সময় আনোয়ার হোসেন রানা নামের এক যুবক ও তার কয়েকজন বন্ধু ডাকঘরে তাদের টাকা তোলার কাজ বাদ দিয়ে বৃদ্ধ মতিউর রহমানকে সেখান থেকে উদ্ধার করে দ্রুত জামালপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান বেলা একটার দিকে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই যুবক আনোয়ার হোসেন রানা বাংলারচিঠিডটকমকে জানান, প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে মতিউর রহমান আকস্মিক অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান সবার সামনেই। তার নিকটাত্মীয় কেউ সাথে ছিলেন না। তাকে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত ব্যক্তির সাথে একটি ব্যাগ ছিল। ওই ব্যাগে তার ঠিকানা ও কয়েকটি ফোন নম্বর পাওয়া যায়। সেই নম্বরে ফোন করা হলে বেলা পৌনে ৩টার দিকে তার ছেলে আশরাফুল ইসলাম ও অন্যান্য স্বজন এসে তাকে শনাক্ত করেন। পরে তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মরদেহ গ্রহণ করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান।

জামালপুর প্রধান ডাকঘরের তত্ত্বাবধায়ক মো. মশিউর রহমান বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ডাকঘরে প্রতিদিন প্রচণ্ড ভিড় হলেও আমরা চেষ্টা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রাহকদের টাকা দিয়ে দিতে। আজকে একটু ভিড় বেশি ছিল। তাছাড়া ট্রেজারি ব্যাংক থেকে টাকা আসতে দেরি হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রধান ফটকের বাইরে ভিড়ের মধ্যে মতিউর রহমান নামের একজন বয়স্ক গ্রাহক অসুস্থ হন। তাকে কারা যেন হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে শুনেছি হাসপাতালেই মারা গেছেন তিনি। তবে তিনি আজকে আমাদের কাছে টাকা উত্তোলনের জন্য রশিদ বা সঞ্চয়ী আমানতের বই কাউন্টারে জমা দেননি। তিনি আমাদের গ্রাহক হয়ে থাকলে তার নমিনি ব্যক্তিরা আবেদন করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে তার সঞ্চয় আমানতের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রধান ফটকের বাইরে প্রতিদিনই পুলিশ থাকেন। গ্রাহকরা সবাই আগে বা দ্রুত টাকা তুলতে চান। ফলে তারা লাইন ভেঙে বিশৃংখলার সৃষ্টি করেন। আজকে যেহেতু ভিড়ের মধ্যে একটা মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে গেছে, সামনের দিনগুলোতে প্রয়োজনে অতিরিক্ত পুলিশ চাইবো সদর থানা কর্তৃপক্ষের কাছে।