ঢাকা ১২:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
মাদারগঞ্জে ৩১ দফা কর্মসূচির লিফলেট বিতরণ করেছে ছাত্রদল বকশীগঞ্জে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে শুকনো খাবার বিতরণ জামালপুর যৌনপল্লী যেন এই শহরের অন্ধকারবেষ্টিত এক নির্মমতার উদাহরণ জামালপুরে ৫ দফা দাবিতে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল জামালপুরে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত মাদারগঞ্জে হকার্স মার্কেটে আগুন, ২১ দোকান পুড়ে ছাই জামালপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নারীসহ নিহত ৪, আহত ৪ গণঅধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী : সরিষাবাড়ীতে আনন্দ শোভাযাত্রা, দোয়া মাহফিল শেরপুরে জোরপূর্বক জমি ও দোকানপাট দখলের চেষ্টার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন আমরা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছি : এমপি প্রার্থী মো. রাশেদুল ইসলাম

‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাঁচার আকুতি এই বীর সন্তানের’

মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী

মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

আশরাফ আলী (৭০)। ৭১’এর রণাঙ্গণের তিনি এক বীর সন্তান। লাল সবুজের পতাকার জন্য জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানী হায়েনাদের বুলেটের সামনে সাহসের সাথে বুক পেতে যুদ্ধ করেছিলেন তিনি। এখন সেই সাহস আর তার নেই। এই যোদ্ধা নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। হারিয়েছেন চলাফেরা ও বাক শক্তি। চরম অর্থ কষ্টে জর্জরিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তার বাড়ি শেরপুর জেলা শহরের নয়ানীবাজারের মাছ বাজার এলাকায়। স্থানীয়দের কাছে তিনি মিঞা ভাই নামে পরিচিত।

তার সুচিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ওই বীর’র পরিবারের সদস্য এবং তার সহযোদ্ধা ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শেরপুরের সাবেক জেলা ইউনিট কমান্ডার আবু সালেহ নূরুল ইসলাম।

জেলা প্রশাসনের তথ্য বাতায়ন ওয়েবসাইটে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

ওই ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, শেরপুর সদর উপজেলার ১৫৬ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। এরমধ্যে ২৭ নম্বর সিরিয়ালে (গেজেট-২) এ আশরাফ আলীর নাম লিপিবদ্ধ আছে।

জেলা ইউনিট কমান্ডার আবু সালেহ নূরুল ইসলাম ২ জুন সকালে বলেন, ১১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের তত্বাবধানে এবং কোম্পানি কমান্ডার জাফর ইকবালের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন আশরাফ আলী।

৭১’এ শেরপুরে প্রথম অস্ত্র নিয়ে যে ১২ জন তরুণ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তৎকালীন ইপিআর এর সুবেদার আব্দুল হাকিমের কাছে ট্রেনিং নিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মীও ছিলেন আশরাফ।

দেশ স্বাধীনের পর জীবিকার তাগিদে নয়ানী বাজারের নিজ বাড়ির পাশে ধান ভাঙানোর ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায় তেমন আয় রোজগার না হওয়ায় ৭৮’ সালে পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে। সেখানেও সুবিধা না হওয়ায় নিঃস্ব হয়ে দেড় বছরের মাথায় দেশে ফিরে আসেন। এরপর থেকে বেকার জীবন যাপন করে আসছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী। এ অবস্থায় তিনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে থাকেন। প্রথমে টিউবারকিউলোসিস বা যক্ষা এরপর হাঁপানী এবং ২০১৪ সালের মে মাসে তিনি ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। লাল সবুজের পতাকার জন্য জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানী হায়েনাদের বুলেটের সামনে সাহসের সাথে বুক পেতে যুদ্ধ করেছিলেন তিনি। এখন সেই সাহস আর তার নেই। চলাফেরা ও বাক শক্তি হারিয়ে শয্যাশায়ী তিনি।

ওই সাবেক কমান্ডার আরও বলেন, ভারত সরকার প্রতিবছর বাংলাদেশের ১০০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে। এক আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ২০১৯ সালে আশরাফ আলীকে ভারতে চিকিৎসার জন্য মনোনীত করে। কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে সেই প্রক্রিয়া এখন বন্ধ রয়েছে। এখন প্রতিনিয়ত শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে আশরাফের।

সরকারের দেওয়া প্রতি মাসের ১২ হাজার টাকা সন্মানীভাতা এখন তার বেঁচে থাকার শেষ সম্বল। ওই টাকায় সংসারের ভরণ পোষণ শেষে চিকিৎসার জন্য ব্যয় নির্বাহ করা তার জন্য খুব কঠিন।

মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলীর সুচিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে নূরুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে একটি লিখিত আবেদন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো হবে।

আশরাফ আলীর স্ত্রী হোসনে আরা বেগম বলেন, তার স্বামী শারীরিকভাবে এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন যে তাকে প্রাকৃতিক কাজ বিছানাতেই করতে হয়। কেউ তার সাথে কথা বললে শুধু একটু হাসেন। প্রতিউত্তরে কথা বলার চেষ্টা করলেও কোন শব্দই তার বোঝা যায়না।

দুই ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। মেয়ে মহসিনা জাহান রিমার বিয়ে দিয়েছেন বেশ কিছু দিন আগে। বড় ছেলে আব্দুল্লাহ আল হাসান, অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স কোর্স সম্পন্ন করেছে। আর ছোট ছেলে আব্দুল্লাহ আল হাসিব একাউন্টিং বিষয়ে মাস্টার ডিগ্রি সম্পন্ন করেছে। তারা দুইজনই এখন বেকার। আয় বলতে সরকারের দেয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। তা দিয়েই কোন রকমে সংসার চলছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, স্বামীর চিকিৎসা বাবদ প্রতিদিন প্রায় ৫০০ টাকার ওষুধ লাগে। স্ট্রোকের ওষুধের পাশাপাশি হাঁপানী রোগের জন্য ইনহেলার ও নেবুলাইজান নিতে হয়। ঋণ ধার করে চিকিৎসার খরচ যোগার করা হচ্ছে।

তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার স্বামীর উন্নত চিকিৎসার আবেদন জানিয়েছেন। এবং তার যে কোন একটি ছেলের জন্য চাকরি পাওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করছেন।

অন্যদিকে অস্পষ্ট ভাষায় বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন বীর সন্তান আশরাফ আলী।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মাদারগঞ্জে ৩১ দফা কর্মসূচির লিফলেট বিতরণ করেছে ছাত্রদল

‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাঁচার আকুতি এই বীর সন্তানের’

আপডেট সময় ০৪:৫৬:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুন ২০২০
মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

আশরাফ আলী (৭০)। ৭১’এর রণাঙ্গণের তিনি এক বীর সন্তান। লাল সবুজের পতাকার জন্য জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানী হায়েনাদের বুলেটের সামনে সাহসের সাথে বুক পেতে যুদ্ধ করেছিলেন তিনি। এখন সেই সাহস আর তার নেই। এই যোদ্ধা নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। হারিয়েছেন চলাফেরা ও বাক শক্তি। চরম অর্থ কষ্টে জর্জরিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তার বাড়ি শেরপুর জেলা শহরের নয়ানীবাজারের মাছ বাজার এলাকায়। স্থানীয়দের কাছে তিনি মিঞা ভাই নামে পরিচিত।

তার সুচিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ওই বীর’র পরিবারের সদস্য এবং তার সহযোদ্ধা ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শেরপুরের সাবেক জেলা ইউনিট কমান্ডার আবু সালেহ নূরুল ইসলাম।

জেলা প্রশাসনের তথ্য বাতায়ন ওয়েবসাইটে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

ওই ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, শেরপুর সদর উপজেলার ১৫৬ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। এরমধ্যে ২৭ নম্বর সিরিয়ালে (গেজেট-২) এ আশরাফ আলীর নাম লিপিবদ্ধ আছে।

জেলা ইউনিট কমান্ডার আবু সালেহ নূরুল ইসলাম ২ জুন সকালে বলেন, ১১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের তত্বাবধানে এবং কোম্পানি কমান্ডার জাফর ইকবালের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন আশরাফ আলী।

৭১’এ শেরপুরে প্রথম অস্ত্র নিয়ে যে ১২ জন তরুণ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তৎকালীন ইপিআর এর সুবেদার আব্দুল হাকিমের কাছে ট্রেনিং নিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মীও ছিলেন আশরাফ।

দেশ স্বাধীনের পর জীবিকার তাগিদে নয়ানী বাজারের নিজ বাড়ির পাশে ধান ভাঙানোর ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায় তেমন আয় রোজগার না হওয়ায় ৭৮’ সালে পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে। সেখানেও সুবিধা না হওয়ায় নিঃস্ব হয়ে দেড় বছরের মাথায় দেশে ফিরে আসেন। এরপর থেকে বেকার জীবন যাপন করে আসছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী। এ অবস্থায় তিনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে থাকেন। প্রথমে টিউবারকিউলোসিস বা যক্ষা এরপর হাঁপানী এবং ২০১৪ সালের মে মাসে তিনি ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। লাল সবুজের পতাকার জন্য জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানী হায়েনাদের বুলেটের সামনে সাহসের সাথে বুক পেতে যুদ্ধ করেছিলেন তিনি। এখন সেই সাহস আর তার নেই। চলাফেরা ও বাক শক্তি হারিয়ে শয্যাশায়ী তিনি।

ওই সাবেক কমান্ডার আরও বলেন, ভারত সরকার প্রতিবছর বাংলাদেশের ১০০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে। এক আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ২০১৯ সালে আশরাফ আলীকে ভারতে চিকিৎসার জন্য মনোনীত করে। কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে সেই প্রক্রিয়া এখন বন্ধ রয়েছে। এখন প্রতিনিয়ত শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে আশরাফের।

সরকারের দেওয়া প্রতি মাসের ১২ হাজার টাকা সন্মানীভাতা এখন তার বেঁচে থাকার শেষ সম্বল। ওই টাকায় সংসারের ভরণ পোষণ শেষে চিকিৎসার জন্য ব্যয় নির্বাহ করা তার জন্য খুব কঠিন।

মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলীর সুচিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে নূরুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে একটি লিখিত আবেদন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো হবে।

আশরাফ আলীর স্ত্রী হোসনে আরা বেগম বলেন, তার স্বামী শারীরিকভাবে এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন যে তাকে প্রাকৃতিক কাজ বিছানাতেই করতে হয়। কেউ তার সাথে কথা বললে শুধু একটু হাসেন। প্রতিউত্তরে কথা বলার চেষ্টা করলেও কোন শব্দই তার বোঝা যায়না।

দুই ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। মেয়ে মহসিনা জাহান রিমার বিয়ে দিয়েছেন বেশ কিছু দিন আগে। বড় ছেলে আব্দুল্লাহ আল হাসান, অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স কোর্স সম্পন্ন করেছে। আর ছোট ছেলে আব্দুল্লাহ আল হাসিব একাউন্টিং বিষয়ে মাস্টার ডিগ্রি সম্পন্ন করেছে। তারা দুইজনই এখন বেকার। আয় বলতে সরকারের দেয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। তা দিয়েই কোন রকমে সংসার চলছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, স্বামীর চিকিৎসা বাবদ প্রতিদিন প্রায় ৫০০ টাকার ওষুধ লাগে। স্ট্রোকের ওষুধের পাশাপাশি হাঁপানী রোগের জন্য ইনহেলার ও নেবুলাইজান নিতে হয়। ঋণ ধার করে চিকিৎসার খরচ যোগার করা হচ্ছে।

তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার স্বামীর উন্নত চিকিৎসার আবেদন জানিয়েছেন। এবং তার যে কোন একটি ছেলের জন্য চাকরি পাওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করছেন।

অন্যদিকে অস্পষ্ট ভাষায় বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন বীর সন্তান আশরাফ আলী।