আইন অমান্য করেই চলছে শেরপুরের শতাধিক অবৈধ ইটভাটা

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে শেরপুরের পাঁচ উপজেলায় চলছে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম। স্থানীয়দের অভিযোগ, শতাধিক ইটভাটায় দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে বায়ু দূষণের কারণে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। চরম ঝুঁকির মুখে পড়ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন ও জনস্বাস্থ্য। বিপর্যস্ত হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। অন্যদিকে বায়ু ও পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নথি অনুযায়ী শেরপুরে ইট ভাটা রয়েছে ৪৬টি। এরমধ্যে ১৯টির ছাড়পত্র রয়েছে। বাকিগুলোর অনুমোদন নেই। অন্যদিকে ছাড়পত্র পাওয়া বেশিরভাগ ইটভাটারই ছাড়পত্রের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। তবে সেগুলো রিভিউ করা হচ্ছে।

একটি বেসরকারি কলেজের প্রভাষক আব্দুল্লাহ তুহিন অভিযোগ করে বলেন, ইট ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, দূষিত হচ্ছে বায়ু। আবাসিক এলাকা ও কৃষি জমির উপর স্থাপন করা হয়েছে বেশিরভাগ ইটভাটা। এছাড়া সরকারি অনুমোদনের বাইরে জেলার সদরসহ শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী, নকলা ও নালিতাবাড়ীতে রয়েছে শতাধিক ইটভাটা। ওইসব ইট ভাটায় কৃষি জমির উর্বর মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে ইট, নষ্ট হচ্ছে মাটির উর্বরতা শক্তি। অন্যদিকে ইটভাটাগুলোতে দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে বিষাক্ত ধোঁয়ায় মানুষের শ্বাসকষ্টসহ হচ্ছে নানা রোগ।

সদর উপজেলার নৌহাটা এলাকার কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, ভাটার কালো ধোঁয়া, ছাই, ইটের গুঁড়া এবং ধুলাবালির প্রকোপে গ্রাম-শহরের বাতাস দূষিত হয়ে পড়েছে। কাঠ পোড়ানোর কারণে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি মূল্যবান বিরল প্রজাতির উদ্ভিদও পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

শ্রীবরদী সদরের স্কুল শিক্ষক হোসেন আলী বলেন, শেরপুরে প্রতিবছরই ইটভাটার সংখ্যা বাড়ছে। ভাটা স্থাপনে সনদ গ্রহণের কথা থাকলেও মালিকরা তা আমলে নিচ্ছেন না। সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে তিনটি ইটভাটার মালিককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। তারপরও থেমে নেই অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম। পরিবেশ ও জনজীবন রক্ষায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগের দাবি জানান তিনি।

অন্যদিকে আয়কর বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছর তিনি অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছেন জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১৬০টি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে ড্রামসিটের চিমনির ইটভাটাও রয়েছে কয়েকটি। এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

ইটভাটার শ্রমিক ইয়াসিন ও সরদার আলী জানান, এমন ভাটাও রয়েছে যেখানে প্রতিদিনই কমপক্ষে ১০ টন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।

একটি অবৈধ ইটভাটার মালিক রাজু আহমেদ বলেন, ব্রিক ফিল্ডের আনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরকারি দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেতে অনেক সময় লাগবে তাই অনেকের মত আমিও ইট তৈরি ও বিক্রি করা শুরু করেছি। যদিও এটা আইনসঙ্গত না। সবাই করছে তাই আমিও এ ভাবেই শুরু করেছি।

শেরপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রাসেল নোমান বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।

এ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, বায়ু ও পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে আমরা আপ্রাণ কাজ করে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় যাদের সনদ নেই তাদের তালিকা করা হয়েছে। এখন সেই তালিকা অনুযায়ী সেসব ইটভাটা বন্ধ রাখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।