সরিষাবাড়ীতে বন্যার পানি কমছে, বাড়ছে পানিবাহিত রোগ

পিংনা বাসুরিয়া এলাকায় রাস্তায় গাড়ি এসেছে খবর শুনে পানি সাঁতরিয়ে ত্রাণের আশায় বানভাসি মানুষ।ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

মমিনুল ইসলাম কিসমত, সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় বন্যার পানি কিছুটা কমলেও বাড়ছে পানিবাহিত রোগ। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সেই তুলনায় ত্রাণ খুবই অপ্রতুল। ভেঙে পড়েছে রাস্তা ঘাট, ব্রিজ কালভাট, এতে সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে এ বারের বন্যা সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভাসহ প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যায় নারী, শিশু ও গবাদিপশু নিয়ে বেশি বিপদে আছে বন্যা কবলিত মানুষ।

উপজেলার বেশ কয়েকটি সড়ক ভেঙে যাওয়ায় ভারী যানবাহনসহ রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন ও শুকনো খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা হাসপাতালে বন্যার পানি প্রবেশ করায় স্বাস্থ্য সেবাসহ এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে বানভাসি মানুষ।

পৌর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মোড় পানি কমে যাওয়ায় রিকশা ভ্যান চলছে। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

এ দিকে পৌর এলাকার পিডিবি সংলগ্ন কামরাবাদ গ্রামে ২০ জুলােই সন্ধায় ইরান (৩) নামে এক শিশু বন্যার পানিতে ডুবে মারা যায়। উপজেলায় সর্বত্র বন্যার পানি থাকায় ডুবে যাওয়া শিশুটিকে দাফন করা হয় জেলা সদর আন্জুমান গোরস্থানে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সকল স্থাপনাগুলোকে বানভাসিদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতেও নাই বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা। যেখানে সেখানে মলমুত্র ত্যাগ করায় তা পানিতে মিশে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ দ্রুত ছড়াচ্ছে। প্রশাসনের নেই কোনো সুব্যবস্থা।

আরামনগর কামিল মাদরাসার আশ্রয় কেন্দ্রে সাতপোয়া গ্রাম থেকে আসা মাজেদা বেগম, জাহানারা, শুভা খাতুন, নাইবেলি দিপালি রানীসহ আরো অনেকেই জানান, আশ্রয় কেন্দ্রে পাঁচদিন ধরে এসেছি কেউ খোঁজ নিতে আসলো না। আমদের ঘরে রাতারাতি পানি ঢুকে খাবার সামগ্রী সব নষ্ট হয়ে গেছে। ছেলে মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি গো আমরা। সরকারি কেউ একটা স্যালাইন নিয়েও আমাদের সামনে আসলো না।

পিংনা বাসুরিয়া এলাকায় রাস্তায় গাড়ি এসেছে খবর শুনে পানি সাঁতরিয়ে ত্রাণের আশায় বানভাসি মানুষ।ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

এ ছাড়াও মহিলা মাদরাসা, সরিষাবাড়ী কলেজ, সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ, পৌরসভা, ঝালুপাড়া ব্রীজপাড়, রেলস্টেশন, পপুলার মোড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর একই অবস্থা বলে জানান সেখানকার আশ্রয় নেওয়া বানভাসি মানুষ।

এ দিকে সরকারিভাবে এখন পযন্ত ত্রাণ বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে ১১৫ মেট্রিক টন চাল ও এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষের জন্য এই ত্রাণ খুবই অপ্রতুল।

জানতে চাউলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হুমাউন কবীর বলেন, ১১৫ মেট্রিক টন চাল ও এক লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। টাকা দিয়ে শুকনো খাবার, স্যালাইন, গুড়, মোমবাতি, দিয়াশলাই, পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি বানভাসি এলাকায় বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।