নান্দিনায় সুদখোর মহাজনের নির্যাতনের শিকার এক দরিদ্র পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুর সদর উপজেলার নান্দিনায় বর্তমানে সুদখোর মহাজনদের দাপট এতটায় বেড়েছে যে তাদের কবল থেকে দরিদ্র থেকে শুরু করে ধনী মানুষ কেউ রেহায় পাচ্ছে না। চড়া সুদে টাকা আদায় করতে অনেক দাদন ব্যবসায়ী ঋণ গ্রহিতার উপর নির্যাতন চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ১৬ মে নান্দিনায় এক সুদখোর মহাজনের নির্যাতনের শিকার ও চেক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, জামালপুর সদর উপজেলার রানাগাছা ইউনিয়নের লোন্দহ গ্রামের মৃত আবেদ আলীর বড় ছেলে হাফিজুল ইসলাম গত দুই বছর আগে মাসে ৫ হাজার টাকা সুদ দেওয়ার চুক্তিবদ্ধ হয়ে একই গ্রামের সুদখোর মহাজন রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করে। সময়মত মোটা অংকের সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ হলে সুদখোর রফিকুল সুদসহ সমুদয় টাকা ফেরত চায়। ঋণগ্রস্ত হাফিজুল দেই দিচ্ছি বলে কালক্ষেপণ করে। এদিকে হাফিজুলের ছোট ভাই আব্দুল হাকিম কাতারে চাকরিতে চলে যায়। কাতার থেকে সে প্রায় এক লাখ টাকা সোনালী ব্যাংক লিমিটেড নান্দিনা শাখায় হাফিজুলের হিসাব নম্বরে (২৬১৮১০০০১৫৩৪৭) পাঠায়। ১৬ মে সেই টাকা উত্তোলন করতে হাফিজুল পরিবারসহ নান্দিনায় যান। কিন্তু এ খবর জানতে পেরে সুদখোর রফিকুল লোকজন নিয়ে নান্দিনায় যায়। এক পর্যায়ে ঋণগ্রহিতা হাফিজুলের কাছে থাকা চেক বইয়ের তিনটি পাতা ও একটি স্ট্যাম্প জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয় সুদখোর রফিকুল। এবং প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে ছিনিয়ে নেয়া চেক বইয়ের পাতায় স্বাক্ষর আদায় করেন। এসময় স্বাক্ষর দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে হাফিজুলকে মারধর করে রফিকুল। পরে চাপে পড়ে সে স্বাক্ষর দেয়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঋণগ্রহীতা হাফিজুল অভিযোগ করে বলেন, সুদখোর মহাজন জোরপূর্বক আমার কাছ থেকে চেক বইয়ের দুটি পাতা ছিনিয়ে নিয়ে স্বাক্ষর আদায় করে নিয়েছে। স্বাক্ষর দিতে চাইনি বলে তারা আমার শরীরে সিগারেটের আগুনের ছ্যাঁকা দিয়েছে।

এদিকে নির্যাতনের শিকার হয়ে ঋণগ্রস্ত হাফিজুল ওই সুদখোর মহাজনের কবল থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু তার পালিয়ে যাওয়ায় প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে রফিকুল ঋণগ্রস্ত হাফিজুলের ভাইরার বাবা লক্ষ্মীরচর গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ খাদেম আলীকে আটক করে নানাভাবে নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে বিষয়টি জামালপুর সদর থানায় জানানো হলে ১৬ মে বিকেলে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে। এবং ছিনিয়ে নেয়া চেক বইয়ের তিনটি পাতা ও একটি স্ট্যাম্প উদ্ধার করে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহিতার কাছে ফিরিয়ে দেয়।

এ ঘটনায় জামালপুর জেলার বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক জাহাঙ্গীর সেলিম জানান, সুদখোর মহাজন একটি অসহায় ঋণগ্রস্ত পরিবারের উপর যে নির্যাতন করেছে সেটা মানুষের কাজ নয়। নির্যাতিত হাফিজুল আইনি সহায়তা চাইলে আমরা তাকে আইনী সহায়তা দেব বলেও জানান তিনি।

জামালপুর সদর থানার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আটকে রাখা খাদেম আলীকে উদ্ধার করা এবং ছিনতাই করা তিনটি চেক ও একটি স্ট্যাম্প সুদখোর মহাজন রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে আদায় করে চেকের মালিক হাফিজুলের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে হাফিজুলকে থানায় অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।