আহত মুক্তি সংগ্রামী কয়েসের পাশে জেলা প্রশাসক

ভাষা ও মুক্তি সংগ্রামী আহত কয়েস উদ্দিনের পাশে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক
জামালপুর, বাংলারচিঠি ডটকম

‘আয়ুব তুমি যতই করো কল্পনা দেশে আর ডান্ডাবাজি চলবে না’ এই গানের রচয়িতা ও গায়ক এবং এই গান গাওয়ার অপরাধে তৎকালিন সামরিক শাসক আয়ুব খানের সামরিক আদালতে কারাদন্ডপ্রাপ্ত বিপ্লবী কয়েস উদ্দিন আহত হয়ে পড়ে আছে তাঁর জীর্ণ কুটিরে। তাঁর এই দুরাবস্থার খবর পেয়ে ১৪ অক্টোবর দেখতে যান জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর।

দীর্ঘ সময় আহত কয়েস উদ্দিনের পাশে ভাঙ্গা একটি বেঞ্চে বসে তাঁর সংগ্রাম মূখর জীবনের সংক্ষিপ্ত গল্প শোনেন জেলা প্রশাসক। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা নির্বাহী হাকিমগণ, উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম, বিশিষ্ট সংস্কৃতিকর্মী সাযযাদ আনসারী, সমাজকর্মী আরজুসহ অনেকেই।

জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর এই মহান ভাষাও মুক্তি সংগ্রামীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁকে সব ধরনের সহায়তা করার আশ্বাস দেন। জেলা প্রশাসক মহোদয়কে পাশে পেয়ে সংগ্রামী এই মানুষটি আবেগ আপ্লুত ভাষায় বলেন যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা ভাষা ও মুক্তি সংগ্রাম করেছি আজো সেই শোষণমুক্ত একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। স্বাধীন দেশে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের আগ্রাসন দেখে লজ্জা করে। আমি শান্তিপূর্ণ, বৈষম্যমুক্ত একটি দেশ দেখে যেতে চাই।

উল্লেখ, গত সপ্তাহে গেইটপাড় এলাকায় পথ হাঁটার সময় পা পিছলে গিয়ে পড়ে যান নব্বই উর্ধ বয়সি চিরকুমার অজীবন সংগ্রামী এই ত্যাগী মানুষটি। হাসপাতালে এক্সরে করলে দেখা যায় তার হাতটি ভেঙ্গে গেছে। কয়েস উদ্দিনের মানবেতর জীবন এবং আহতাবস্থা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে জাহাঙ্গীর সেলিম মানবিক স্পর্শমাখা একটি স্ট্যাটাস লেখলে বিষয়টি সকলের নজরে আসে।

১৩ আগস্ট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনজীবী ও কবি মোহাম্মদ বাকী বিল্লাহ আহত কয়েস উদ্দিনকে দেখতে যান। আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি তাঁর চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করার আশ্বাস দেন। অনেকেই তাকে দেখতে আসছেন।

কয়েস উদ্দিন বৃটিশবিরোধী আন্দোলন প্রত্যক্ষ করেছেন। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেন। তাঁর জীবনে সবচেয়ে নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছিলেন আয়ুব শাসনামলে। সামরিক আইনে বিচারের কারাদন্ডের পাশাপাশি অমানসিক নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন এই অকুতোভয় সংগ্রামী পুরুষটি। এই চারণ সংগীত শিল্পী একাধিক বার জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন। উনসত্তুরের গণঅভ্যূত্থানে সামনে থেকে আন্দোলন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালিন দেশের অভ্যন্তরে থেকে মুক্তিযুদ্ধে পক্ষে জনমত সৃষ্টি করেছেন।

বঙ্গবন্ধু জামালপুর আসলে তিনি সরাসরি তাঁর সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন। মজলুম নেতা মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর একনিষ্ঠ অনুসারী ও সক্রিয়কর্মী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানি তাঁর সাথে থাকার পরামর্শ দিলে তিনি জামালপুর ছেড়ে কোথাও যেতে রাজি হননি। নির্লোভ এই মানুষটি সুযোগ পেয়েও অস্ত্র হাতে যুদ্ধ না করার কারণে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদপত্র গ্রহণ করেননি।

আজীবন প্রচার বিমুখ এই বিপ্লবী মানুষটি ৯২ বছর বয়সেও জাতির বিভিন্ন সঙ্কটে, বিভিন্ন জাতীয় দিবসে নিজের টাকায় মাইক বের করে স্বরচিত দেশের গান পরিবেশন করেন।